পিরোজপুরে সংঘর্ষে বৈষম্যবিরোধী ও নাগরিক পার্টির নেতা-কর্মীরা, উভয়ই ‘দোষ’ দিচ্ছে আওয়ামী লীগের
Published: 8th, March 2025 GMT
পিরোজপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মো. ইমরান শেখ (২৩), শাহনেওয়াজ (২৬) ও মো. মুঈন উদ্দিন (২৭) এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধি মুসাব্বির মাহমুদ (২৯) ও তাঁর ভাই সানজিদ (১৯) সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত চারজন আহত হন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধি মুসাব্বির অভিযোগ করেন, রাতের নামাজ পড়ে ভাইকে নিয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে গেলে আগে থেকে সেখানে থাকা বৈষম্যবিরোধী নেতা মুঈন লোকজন নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেন। তিনি আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। হামলার ফলে তাঁর পিঠ ও হাত এবং তাঁর ভাই সানজিদ গলা ও পায়ে আঘাত পান।
মুসাব্বির মাহমুদের দাবি, তিনি ছাড়া পিরোজপুরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। এ কারণে তাঁকে বারবার হামলার শিকার হতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোকজন দিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাঁর ওপর হামলা করিয়েছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মুঈন উদ্দিন বলেন, ‘সাধারণত আমরা তারাবিহর নামাজ শেষে পুরান বাসস্ট্যান্ডে চা খেতে আসি। হঠাৎ কোথা থেকে মুসাব্বির এসে শাহনেওয়াজকে বাজে কথা বলে এবং উচ্চবাচ্য করে। একসময় ওরা আমাদের ওপর হামলা করে।’
মুঈন ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, মুসাব্বির আগে ছাত্রলীগ করতেন। এখনো তিনি পিরোজপুরে তাঁদের এজেন্ট হয়ে কাজ করেন। আওয়ামী লীগের ইন্ধনে তাঁদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শাহনেওয়াজ বলেন, ‘মুসাব্বির ও সানজিদ জুলাই আন্দোলনের সময় এক দিনও আন্দোলন করেনি, ফেসবুকে পোস্টও দেয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে আমাদের সব তথ্য পাচার করছে। এর সব ডকুমেন্ট আমরা পেয়েছি। ৫ আগস্টের পর নিজেরা একটি সমন্বয়ক কমিটি তৈরি করে পিরোজপুরের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করতে থাকে, আমরা বাধা দিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আর থাকতে না পেরে ঢাকায় গিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগ দেয়।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মুসাব্বির ও মুঈনরা তারাবিহর নামাজ শেষে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে একটি চায়ের দোকানে বসে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় ৫-৭ জনের একটি দল লোহার পাইপ ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আকস্মিক হামলার ঘটনা ঘটায়।
পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুস সোবাহান বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।