গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নাম পরিবর্তনের পর নতুন নামে সনদ নিতে গিয়ে বিভিন্ন জটিলতা ও বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

নাম পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সনদ ইস্যু করতে প্রশাসনের গড়িমসি ও সিদ্ধান্তহীনতা, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সনদ দুই নামে দেওয়া, ইতোপূর্বে শিক্ষাজীবন শেষ করা শিক্ষার্থীদের নতুন নামে সনদ না দেওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, সনদ সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে উপ-উপাচার্য বলেছেন, যারা আগে পাস করে গেছেন, কিন্তু সনদ উঠায়নি, তারা পুরাতন নামেই সনদ পাবেন। অথচ পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, যারা সনদ উঠায়নি তারা নতুন নামে সনদ পাবে।

অন্যদিকে, যারা পূর্বের নামে স্নাতকের সনদ তুলেছিলেন তাদের নতুন নামে স্নাতকোত্তরের সনদ দিলেও দিচ্ছে না স্নাতকের সনদ। এছাড়াও কোন দপ্তরেই সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় একে অন্যের ওপর দায় দিচ্ছে। এতে আরো বিড়ম্বনায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।

অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল রাইহান বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ কি নামে হবে, এটা নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। ফলে কাউকে পূর্বের নামে কাউকে বর্তমানে নামে সনদ প্রদান করা হয়।”

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা এটা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লে সবাইকে একই নামে সনদ প্রদানের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বরাবর লিখিত আবেদন দেওয়া হয়। উপাচার্য স্যার দাবি মেনে নিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ প্রদান করেন।”

ফার্মেসী বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাইনুর রহমান শাহীন বলেন, “অনেক জায়গায় সনদের স্ক্যান কপি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দুইটা দিয়েই অ্যাপ্লাই করতে হয়। সেখানে দেখা যাবে সনদে বশেমুরবিপ্রবি আবার অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম গোবিপ্রবি। এসব আবেদন শর্টলিস্টই করবে না। এছাড়া ভাইভা বোর্ডে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে দুই নামে দুই সনদ নিয়ে যেতে হবে। এতে সেখানে অবশ্যই খারাপ প্রভাব ফেলবে। সব জায়গায় একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ফেলে দেবে।”

সনদ সমস্যার বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক গোলাম হায়দার বলেন, “গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে নতুন নামেই দিচ্ছিলাম। আগে যেগুলো দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো ওই নামে থাকার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা নতুন নামে সনদ পাওয়ার বিষয়ে আবেদন করার পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আছে, সেখানে যাবে। সভায় যে সিদ্ধান্ত হয়ে আসবে, ওইনামে সনদ দেওয়া হবে।”

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড.

হোসেন উদ্দিন শেখরের সেঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। পরবর্তীতে তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প রব সনদ প র সনদ

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ