চুয়েটে দুই শিক্ষার্থীকে নির্যাতন, সাত বছর পর ছাত্রলীগের ৬ জনের নামে মামলা
Published: 12th, March 2025 GMT
প্রায় সাত বছর আগে চাঁদার জন্য দুই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি–সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় ছয়জন এবং অপর মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। দুটি মামলাতেই আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত পরিচয় ১০ থেকে ১৫ জনকে।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা ইয়াছমিনের আদালতে মামলা দুটি করেন জামিল আহসান ও মাহমুদুল ইসলাম নামের প্রাক্তন দুই শিক্ষার্থী। জামিল ও মাহমুদুল ইসলাম উভয়ই চুয়েটের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের ২০১৩–১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
মাহমুদুল ইসলামের করা মামলায় তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ ইমাম বাকের, সাধারণ সম্পাদক মো.
মাহমুদুল ইসলাম মামলায় উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের ১৪ মে বাকের ও শাখাওয়াত তাঁকে শিবিরের নেতা আখ্যা দিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা দিতে অসম্মতি জানানোর কারণে ১৯ মে দিবাগত রাত একটায় ওই দুজন আরও ১০ থেকে ১৫ ব্যক্তিকে নিয়ে আবাসিক হলে তাঁর কক্ষ ভাঙচুর করে সব শিক্ষাসনদ নিয়ে যান। সনদ ফেরত পেতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে প্রশাসন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি মিটমাট করতে বলেন। পরে তৎকালীন ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী কথা বলতে গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁকে মারধর করেন। মারধরের এক পর্যায়ে তাঁর বাবাকে ফোন করেন তাঁরা। ফোনে তাঁর কান্নার শব্দ শুনিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দ্রুত পরিশোধ করতে বলা হয়। তখন জীবন বাঁচাতে এক সপ্তাহের মধ্যে চাঁদা পরিশোধ করবেন জানিয়ে ছাড়া পান মাহমুদুল। টাকা দিতে না পারায় মারধরের ভয়ে তিনি আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেননি। স্নাতক শেষ না করেই তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হয়।
অপর মামলায় জামিল আহসান অভিযোগ করেন, তাঁর কাছেও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তখনকার চুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি বাকের ও সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত। তবে এত টাকা জোগাড় করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফলে তাঁকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পরীক্ষায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন। তখন পরীক্ষা শেষ করা মাত্র তাঁকে তুলে নিয়ে ছাত্র সংসদে আটকে রেখে লোহার রড, হকিস্টিক ও স্টাম্প দিয়ে পেটানো হয়। পিটুনির এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফেরার পর পানি দিয়ে আবারও মারধর করা হয়েছে। পরে তাঁর সামনে ছুরি রেখে ছবি তুলে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে রাউজান থানায় সোপর্দ করেন ছাত্রলীগ নেতারা। ওই মামলায় তিনি তিন মাস কারাভোগ করেছেন।
জামিল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে নির্যাতনের বিষয়ে তখন প্রশাসন অবগত থাকলেও কেউ আমার পাশে দাঁড়ায়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ছাত্রলীগের নেতা হওয়ায় এত দিন মামলা করতে পারিনি। আমার সঙ্গে হওয়া জুলুমের ন্যায়বিচার পেতে তাই এখন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’ দুটি মামলারই আইনজীবী ইমরানুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আদালত মামলা দুটি গ্রহণ করেছেন। রাউজান থানাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ম ল আহস ন ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত বাসে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ, চালক আটক
ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক কলেজছাত্রীকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। নবীগঞ্জ-শেরপুর সড়কে রোববার রাতে যাত্রীবাহী বাসে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই ছাত্রীর চিৎকার শুনে স্থানীয় জনতা সড়কের তিনতালাব পুকুর পাড় নামক স্থানে বাসটি আটক করে এবং বাসের ড্রাইভারকে আটক করে সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করে। এসময় বাসের হেলপার পালিয়ে যায়।
পরে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য ওই কলেজ ছাত্রী ও ড্রাইভারকে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে। এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
জানা যায়, ঢাকায় একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে ওই ছাত্রী। রোববার সকালে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে একটি বাসে উঠেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি যেতে বানিয়াচং যাওয়ার পথে শায়েস্থাগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে নামার কথা থাকলেও তিনি বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে যান। ফলে বাস তাকে শায়েস্থাগঞ্জে না নামিয়ে শেরপুর বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে রাত সাড়ে ১০টায় ওই কলেজছাত্রী একটি লোকাল বাসে উঠে। সেই বাসে কয়েকজন যাত্রী ছিল, বাসটি নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি নামক স্থানে পৌঁছালে অন্যান্য যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। এরপর ওই ছাত্রীকে একা পেয়ে বাসের চালক ও হেলপার তাকে বাসে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
এ বিষয়ে ওই ছাত্রী জানায়, তিনি ঢাকায় একটি কলেজে লেখাপড়া করেন। তার পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকে তিনি ঢাকায় ঈদ করেছে। ঈদের ছুটিতে তিনি বাড়ি আসেননি এই জন্য আজকে গ্রামের বাড়িতে আসছিলেন।
বানিয়াচং থানার সেনাক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা কলেজছাত্রী ও বাস চালককে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছি।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি দুলাল মিয়া জানান, ঘটনার পর বাস চালককে আটক করা হয়েছে এবং হেলপার পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে মামলা লেখার কাজ চলছে।