শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও স্তুতির জোয়ারে মাহমুদউল্লাহ
Published: 13th, March 2025 GMT
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতি টানা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে বেশ আবেগতাড়িত তার সতীর্থরা। কারো চোখে মাহমুদউল্লাহ দেশের ক্রিকেটের অন্যতম স্তম্ভ। কারো ভাবনায়, বাংলাদেশ তার কাছে ঋণী। বৈশ্বিক ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহর পারফম্যান্সকে মনে করে কারো চোখ ভিজিয়ে যাচ্ছে। আবার শৈশবে টিভির পর্দায় মাহমুদউল্লাহকে দেখে বড় হওয়া কেউ তার সঙ্গে খেলতে পেরে গর্বিত। তার অবসরের দিনে সতীর্থরা তাকে মনে করছে গভীর শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়। স্তুতির জোয়ারে ভাসছেন বাংলাদেশের ‘সাইলেন্ট কিলার।’
সাকিব আল হাসান লিখেছেন, ‘‘রিয়াদ ভাই, আপনার সঙ্গে খেলা এবং আপনার কাছ থেকে শেখা আমার জন্য সৌভাগ্যের। মাঠে এবং মাঠের বাইরে আপনি উদাহরণ তৈরি করেছেন, আর আপনার রেকর্ডই আপনার কথা বলে। খেলা এবং দেশের প্রতি আপনার নিষ্ঠা, স্থিতিস্থাপকতা এবং ভালোবাসার জন্য আমাদের জাতি আপনার কাছে ঋণী। আল্লাহ আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে আশীর্বাদ করুন এবং আপনার নতুন যাত্রায় তোমাকে পথ দেখান।’’
মাশরাফি বিন মুর্তজা মাহমুদউল্লাহকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে ফিরে যান কার্ডিফ ও অ্যাডিলেডের রঙিন দিনগুলোতে, ‘‘দারুণ এক আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের জন্য অভিনন্দন, রিয়াদ। তোর নামের পাশে যে সংখ্যাগুলি আছে, সেসবের সীমানা ছাড়িয়ে তুই আমাদের কাছে আরো অনেক ওপরে। আমরা জানি, দলের তোকে কতটা প্রয়োজন ছিল এবং দলের সেই চাওয়ার সঙ্গে তুই কতটা মিশে গিয়েছিলি।’’
‘‘মাঠের ভেতরে-বাইরে তোর সঙ্গে কত স্মৃতি! কত কত আনন্দ আর হতাশায় একাকার হয়েছে আমাদের সময়! অ্যাডিলেইড আর কার্ডিফে তোর সেঞ্চুরির কথা আজ আবার মনে পড়ছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান, তোর এই অর্জন কেড়ে নিতে পারবে না কেউ। তবে আশা করি, তোকে আদর্শ মেনে বৈশ্বিক আসরে তোর চার সেঞ্চুরির রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে দেশের অনেকে। বড় মঞ্চে তুই যেভাবে নিজের সেরাটা মেলে ধরেছিস, সেই পথ অনুসরণ করবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ঘরোয়া ক্রিকেটে তোর বাকি দিনগুলি উপভোগ্য হবে আর অবসর জীবন কাটবে আনন্দে, এই কামনা থাকল।’’
তামিম ইকবাল লিখেছেন, ‘‘রিয়াদ ভাই, বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করার জন্য অভিনন্দন। আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম স্তম্ভ এবং মাঠে এবং মাঠের বাইরে আমাদের অনেকের অনুপ্রেরণা। ড্রেসিং রুমে আমাদের ভাগাভাগি করা স্মৃতিগুলো লালন করব। দেশের ক্রিকেটে আপনার অবদানের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং আগামী দিনগুলির জন্য শুভকামনা.
তাওহীদ হৃদয় লিখেছেন, ‘‘ছোটবেলায় টিভির সামনে বসে দেখা প্রত্যেকটা ব্রিলিয়ান্ট মুহূর্তের জন্য ধন্যবাদ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই। সবাই আপনাকে সাইলেন্ট কিলার ডাকলেও, আমাদের বন্ধু মহলে আপনার নাম ছিল ‘পেইন-কিলার’। এমন অনেক ম্যাচ আছে যেগুলোর শেষ মুহূর্তের রিলিফ আপনার থেকে উপহার পেয়েছি। আমার দোয়ায় থাকবেন আপনি, যেমনটি সবসময় ছিলেন। অবসর জীবনের জন্য শুভকামনা!!’’
তাসকিন আহমেদ লিখেছেন, ‘‘আজ, বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন সত্যিকারের কিংবদন্তি বিদায় জানালেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ভাই, আপনার সাথে মাঠে ভাগাভাগি করে খেলাটা ছিল এক পরম সম্মানের। আপনার শান্ত উপস্থিতি, ম্যাচজয়ী পারফম্যান্স এবং নেতৃত্ব কখনোই ভোলা যাবে না। আপনি আমার মতো একটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছেন। জীবনের এই নতুন অধ্যায়ে আপনার জন্য শুভকামনা। আপনার অবসর জীবন শুভ হোক।’’
সৌম্য সরকার লিখেছেন, ‘‘আবেগ, নিষ্ঠা এবং অবিস্মরণীয় মুহূর্তের এক যাত্রা। প্রতিটি রান, উইকেট এবং স্মৃতির জন্য কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ কিংবদন্তি।’’
মেহেদী হাসান মিরাজ লিখেছেন, ‘‘প্রিয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই, একজন বড়ভাই, একজন টিমমেট হিসেবে যেকোনো প্রয়োজনে, যেকোনো মুহূর্তে সব সময় সর্বোচ্চ আপনাকে পাশে পেয়েছি। শৈশবে টিভি স্ক্রিনে আপনাকে দেখে বড় হওয়া, ক্রিকেটার পরিচয়ে আপনার সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করা কিংবা ক্রিজে থেকে আপনার নানান অসাধারণ স্মৃতির অংশ হওয়া, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পার্টনারশিপ করে আমার প্রথম ওডিআই সেঞ্চুরির সময় আপনার সহযোগিতা পাওয়া— সবকিছুই আমার ব্যক্তিজীবনের অসাধারণ স্মরণীয় নানান ঘটনা। বাংলাদেশ ক্রিকেটে আপনার অসামান্য অবদান ও দুর্দান্ত সব স্মৃতির জন্য দেশের প্রতিটি ক্রিকেট ফ্যানের মতো আপনার প্রতি আমিও কৃতজ্ঞ। আপনার অবসর পরবর্তী ইনিংসের জন্য শুভকামনা...।’’
ঢাকা/ইয়াসিন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আপন র স আপন র ন র অবসর আম দ র আপন ক
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। এতে একজন শিক্ষকসহ হোটেলের দুই কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে উভয় পক্ষের লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
নিহত ব্যক্তির নাম শিপন মিয়া (৩০)। তিনি বড়িকান্দি ইউনিয়নের নুরজাহানপুর গ্রামের মোন্নাফ মিয়া ওরফে মনেক মিয়ার ছেলে। নবীনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, ওই দুজনের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে।
গুলিবিদ্ধ আহত ব্যক্তিরা হলেন বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা এমরান হোসেন (৩৮) এবং হোটেলের দুই কর্মচারী—উপজেলার আলমনগর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে ইয়াসিন মিয়া (২০) ও চরলাপাং গ্রামের রশিদ মিয়ার ছেলে নুর আলম (১৮)। এমরান উপজেলার শ্যামগ্রামের মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। তাঁর ভাই ঢাকায় কর্মরত পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিল্লাল হোসেন।
বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মনেক ডাকাত এলাকাটা শেষ করে ফেলেছেন। তাঁর কারণেই এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। মনেক ডাকাতদের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। গুলিতে মনেক ডাকাতের ছেলে নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় মোন্নাফ মিয়া ও তাঁর ছেলে শিপনের দীর্ঘদিন ধরে একক প্রভাব ছিল। তাঁদের সঙ্গে একই এলাকার থোল্লাকান্দি গ্রামের মিস্টার মিয়ার ছেলে আরাফাত মিয়ার বিরোধ চলছিল। শনিবার রাত আনুমানিক নয়টার দিকে বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে শিপন মিয়া আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে আরাফাতের নেতৃত্বে সশস্ত্র একটি দল হোটেলে ঢুকে গুলি চালায়। এতে শিপনসহ হোটেলের দুই কর্মচারী ইয়াসিন ও নুর আলম গুলিবিদ্ধ হন। গুলির শব্দে বাজারজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলার পর আরাফাত ও তাঁর সহযোগীরা দ্রুত পালিয়ে যান।
শিপনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর নুরজাহানপুরে পৌঁছালে মোন্নাফ মিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক গণি শাহ মাজারের অদূরে তালতলায় এমরান হোসেনের কার্যালয়ে হামলা চালান। সেখানে এমরান গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাঁরা থোল্লাকান্দি গ্রামে হামলা চালিয়ে একাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। রাতে ঘটনাস্থলে অভিযান চালালেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। কারণ, উভয় পক্ষের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ কাউকেই শনিবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়নি। তাঁদের হয়তো অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, শিপনের ওপর হামলাকারী আরাফাত থোল্লাকান্দি গ্রামের এমরান হোসেনের আত্মীয়। এ কারণেই এমরানের কার্যালয়ে গিয়ে হামলা এবং তাঁকে গুলি করা হয়েছে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত শিপন ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। শিপন ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে। ওই ঘটনায় একজন শিক্ষকসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে সবাই পলাতক। তাই কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।