জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশে সফরকালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিশেষ করে নারী ও মেয়েশিশুদের তীব্র মানবিক সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে একশনএইড বাংলাদেশ।

সংস্থাটি বলছে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্য তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তে (আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে) বাংলাদেশে অবস্থানরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কঠিন হুমকির মুখে পড়বে।

ডব্লিউএফপি’র মতে, তহবিল সংকটের কারণে বরাদ্দ কমিয়ে অর্ধেকে আনার ফলে শরণার্থীদের জীবনধারণের ন্যূনতম সীমার নিচে ঠেলে দেবে, যা অপুষ্টি এবং স্বাস্থ্য সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।

খাদ্য সহায়তা বরাদ্দের এই মারাত্মক হ্রাসের কারণে নারী ও কিশোরীরা অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মা, কিশোরী এবং শিশুরা ইতোমধ্যেই তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা এবং মৃত্যুর হার বাড়িয়ে তুলতে পারে। খাদ্য ঘাটতির চাপে পারিবারিক সহিংসতা এবং শোষণসহ জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলবে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে পর্যাপ্ত যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার (এসআরএইচআর) পরিষেবার বিঘ্নের আশঙ্কা, এতে নারী ও কিশোরীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্য রেশন কমানোর খবরে ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা শিবিরে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এতে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে নারী ও কিশোরীদের বিপদ আরো বাড়াবে। আন্তর্জাতিক কমিউনিটির তহবিল ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণে মানবিক সংস্থাগুলোকে শরণার্থীদের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতেও হিমশিম খেতে বাধ্য করেছে।

একশনএইড বাংলাদেশ বলছে, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পূর্ণ খাদ্য রেশন পুনরুদ্ধার করতে এবং নারী ও কিশোরীদের অগ্রাধিকার দিয়ে জেন্ডার-সংবেদনশীল সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরি তহবিল প্রদানের আহ্বান জানাই। এছাড়া  রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবিলায় টেকসই প্রত্যাবাসন এবং পুনর্বাসন পরিকল্পনাসহ দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথ তৈরি করতে হবে।

ঢাকা/হাসান/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর তহব ল

এছাড়াও পড়ুন:

গান-কবিতায় ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ

ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যান এলাকায় সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন লেখক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুই ঘণ্টা ব্যাপি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচে গান, কবিতা ও কথায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।

প্রায় চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গতকাল বুধবার দুপুরে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালায়।

এর প্রতিবাদে আজ ‘ময়মনসিংহের সচেতন নাগরিক ও শিল্পী সমাজ’–এর ব্যানারে প্রতিবাদ জানানো হয়। বেলা ১১টার দিকে প্রতিবাদী কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল এসে মাইকবিহীন কর্মসূচি করতে বলেন আন্দোলনকর্মীদের। কিন্তু প্রতিবাদী কর্মসূচি চলতে থাকে, দাঁড়িয়ে থাকে ডিবি পুলিশের দল। প্রতিবাদী কথা, গান ও কবিতা পড়তে থাকেন কবি ও সংস্কৃতিকর্মীরা। আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যে সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ পুনর্নির্মাণের দাবি জানান তাঁরা।

বীক্ষণ আসরের প্রথম আহ্বায়ক কথাশিল্পী সালিম হাসান বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে মানুষের কথা বলার মঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়া। বিগত সরকার আমলে দীর্ঘ সময় আমাদের বুকে জগদ্দল পাথর চাপিয়ে আমাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে গতকাল প্রশাসনের ভূমিকা আমাদের আশাহত করেছে এবং প্রতিবাদে উজ্জীবিত করেছে। দম্ভের কারণে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনে যাঁরা আছেন, তাঁরাও দাম্ভিকতা দেখালে পরিণাম ভালো হবে না।’

প্রতিবাদী কথার ফাঁকে ফাঁকে চলে প্রতিবাদী গান। শিল্পী হিরক সিঙ্গার, মিজান বাউলা, শাহনাজ সাথী বিদ্রোহী গান পরিবেশন করেন। কবি সাঈদ ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন কবি শামসুল ফয়েজ, নাফিসা মাহজাবিন, কামরুল হাসান ও শরৎ সেলিম, সংস্কৃতিকর্মী মাহমুদুল হাসান, সংগীতশিল্পী অঞ্জনা সরকার, আবুল কালাম আল আজাদ, চিত্রশিল্পী হোসাইন ফারুক, নাগরিক নেতা তৌহিদুজ্জামান ছোটন, আন্দোলনকর্মী আরিফুল হাসান, আজিত দাস, আবদুল্লাহ আল নাকীব প্রমুখ।

আশরাফ মীর বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে বিনা নোটিশে আমাদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা আমারের অন্তরে আঘাত দিয়েছে। কেন মুক্তমঞ্চ বিনা নোটিশে ভেঙে দেওয়া হলো? যার ইঙ্গিতে এই মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেওয়া হলো, তিনি অনুতপ্ত হবেন এবং মঞ্চটি পুনরায় নির্মাণ করে দেবেন, এই আশা করি। আমরা জীবন ও বেদনার কথা বলি কবিতায়। আমরা শান্তি চাই, কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না।’

স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, ১৯৮০ সালের ২১ মে ময়মনসিংহে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সমন্বয়ে সাহিত্য সংসদ গঠিত হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে নিয়মিত পাঠচক্র বীক্ষণ আসর শুরু হয়। আগামীকাল শুক্রবার ছিল বীক্ষণের ২১৪৬তম আসর। শুরু থেকে বিরতিহীন প্রতি শুক্রবার আসরটি বসে, যা বাংলা সাহিত্যের দীর্ঘতম পাঠচক্রের আসর। একটি মুক্তমঞ্চে কবি-সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিকর্মীরা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কবিতা, গান, আলোচনা করে থাকেন। দেশের বিখ্যাত কবি–সাহিত্যিক এখানের মুক্তমঞ্চে সাহিত্যায়োজনে কবিতা পড়েছেন, সাহিত্য আলোচনা করে গেছেন।

পুনরায় মুক্তমঞ্চ নির্মাণের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাঈদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল গুঁড়িয়ে দেওয়া মঞ্চের সামনে বীক্ষণের নিয়মিত আসর পালন করা হবে। এরপর শনি ও রোববার প্রশাসনকে সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধান না করলে সোমবার ময়মনসিংহসহ সারা দেশে কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি ফরিদ আহমদ দুলাল প্রথম আলোকে বলেন, নগরের জয়নাল আবেদিন উদ্যান এলাকায় ১৯৯৩ সালের দিকে তৎকালীন জেলা প্রশাসন সাড়ে ৬ শতক জমি সাহিত্য সংসদকে বরাদ্দ দেয়। সেই জমিতেই প্রশাসনই মুক্তমঞ্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। এখন সেই মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ গতকাল জানিয়েছিলেন, ‘কাগজপত্রে সাহিত্য সংসদ বলতে সেখানে কিছু নেই। অবৈধভাবে কোনো জায়গা দখল করলে তো হবে না। সাহিত্য সংসদ আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেব।’

আরও পড়ুনময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন, সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদ১৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ