গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের নেতাদের নামে করা মামলা প্রত্যাহার দাবি
Published: 13th, March 2025 GMT
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে অভিযোগ এনে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানায় তারা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত মঙ্গলবার ১১ মার্চ ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ এর উদ্যোগে ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচিতে পুলিশ ন্যাক্কারজনক হামলা চালায়। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী-জনতা গুরতর আহত হয়। এসব আহত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই আবার পুলিশ মামলা করে।
পুলিশের মিথ্যা মামলায় গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু, সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহম্মেদ ও জবি শাখার নেতা আদ্রিতা রায়, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ইডেন মহিলা কলেজ শাখার নেতা সুমাইয়া শাহিনাসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ, হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার ও আন্দোলনরত ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, জুলাইয়ে ছাত্র- শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন ছিলেন নারীরা। কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নারী নিপীড়নের সংখ্যা ও মাত্রাগত ভয়াবহতা দেখছে গোটা দেশ। অথচ জনগণের নিরাপত্তার দানে ব্যার্থ পুলিশ প্রশাসন ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি দমনে অতিমাত্রায় তৎপর। পুলিশের একই ভূমিকা ফ্যাসিবাদী হাসিনা আমলেও জনগণ দেখেছে। ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতন হলেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পরিবর্তন হয় নি।
জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবি তুলেছে। এই আন্দোলনকে ধামাচাপা দিতে পুলিশকে ভিকটিম দেখিয়ে সরকার নতুন নাটক সাজানোর অপচেষ্টা করছে। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা এ দেশের জনগণ জানে। ফলে সরকার যতই হামলা মামলা করুক, ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণসহ ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিক দাবিতে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট, ইউনিয়ন পরিষদটিতে চার মাস ধরে সব সেবা বন্ধ
রাশেদুল ইসলাম (৬১) পাঁচ মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরছেন। তাঁর ওয়ারিশান সনদ দরকার। এই সনদ ছাড়া তিনি জমি রেজিস্ট্রি করতে পারছেন না। এই কাজের জন্য গতকাল সোমবারও এসেছিলেন তিনি। একইভাবে ফিরে গেছেন।
নানা প্রয়োজনে এসে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে রাশেদুলের মতো অনেক মানুষকে প্রতিদিনই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। এই ইউপিতে সব নাগরিক সেবা চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জনগণ প্রায় ৩০ ধরনের সেবা পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, গ্রাম আদালত, কয়েক ধরনের ভাতা, ভিজিডি ও ভিজিএফের খাদ্যপণ্য বিতরণ, ট্রেড লাইসেন্স উল্লেখযোগ্য। বাজুবাঘা ইউপিতে এর সব কটি সেবাই বন্ধ। ইউপি চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষে প্রশাসক নিয়োগে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে চেয়ারম্যানের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদে সেবা কার্যক্রম চালুর দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন।
বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর ফিরোজ আহম্মেদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২০ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। সরকার ১০ ডিসেম্বর তাঁর স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। ওই প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে ২২ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান হাইকোর্ট একটি রিট করেন। শুনানির পর আদালত প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এ জন্য প্রশাসক কোনো কাজ করতে পারছেন না। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানের ক্ষমতাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে পরিষদের সব কার্যক্রম স্থগিত হয়ে আছে।
২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর ফিরোজ আহম্মেদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২০ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। সরকার ১০ ডিসেম্বর তাঁর স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। ওই প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে ২২ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান হাইকোর্ট একটি রিট করেন।বাজুবাঘা ইউনিয়নের নাগরিক সেবায় ভোগান্তি লাঘবে অতিদ্রুত প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়কে বাজুবাঘা ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে একটি মানববন্ধন হয়। এই কর্মসূচিতে দাবি করা হয়, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ (রঞ্জু) ইউনিয়ন পরিষদে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ক্ষমতার লোভে ইউনিয়ন প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছেন। এতে জনগণ ইউনিয়নের সব ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গতকাল সোমবার জেলার বাঘা উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামে বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদের বারান্দায় কয়েকজন গ্রাম পুলিশ বসে আছেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষ খোলা। তিনি সেবাগ্রহিতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। কেন সেবা দেওয়া যাচ্ছে না, এর কারণ জানাচ্ছেন। চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ লেখা কক্ষটিতে তালা লাগানো।
সেখানেই কথা হয় কয়েকজন সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে। জোতরাঘোব গ্রামের সুমন হোসেন (২৮) ছেলের জন্মনিবন্ধন করার জন্য এসেছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমি তো জানি নি যে ইউনিয়ন পরিষদের এই অবস্থা হয়্যা আছে। আজ গা জাননু, সব কামই নাকি পাড়ি আছে। কিছুই হচ্ছে না।’
ছেলের জন্মনিবন্ধন করার জন্য এসেছিলেন বাজিতপুর গ্রামের রুবেল হোসেন (৩০)। তাঁকেও হতাশ হতে হয়েছে। এক গ্রাম পুলিশ যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। কাজ শুরু হলে জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের অবস্থা সম্পর্কে বারান্দায় বসে থাকা গ্রাম পুলিশের দফাদার মকলেছুর রহমান জানান, ‘প্রতিদিন আমরা পালাক্রমে ডিউটি করছি। কার্যক্রম স্থগিতের প্রথম দিকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন লোক আসত। এখনো ১০ থেকে ১৫ লোকজন আসেন। তবে এখন বেশির ভাগ লোকজন ফোনে খবর নেন।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, দেশের পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী ঘরানার পৌর মেয়র, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে যান। পরে বর্তমান সরকার সেবা কার্যক্রম সুচারু রূপে পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেন। ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ‘যেহেতু আমার ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হয়নি। সে জন্য বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছি। মহামান্য আদালত ছয় মাসের জন্য এই ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করেন। জনগণের ভোগান্তি হোক, এটা আমি চাই না। তবে এটার দ্রুত সমাধান আশা করছি।’
চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ লেখা কক্ষটিতে তালা লাগানো। গতকাল সোমবার তোলা