পৃথিবীর ইতিহাসে সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে আলবার্ট আইনস্টাইনকে। আজ ১৪ মার্চ তাঁর জন্মদিন। ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ জার্মানির উলম শহরে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বিখ্যাত ইকুয়েশন (E=mc2) এবং থিওরি অব রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জে করেছিল এবং বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জানাকে পাল্টে দিয়েছে। কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাহায্যে আলোক তড়িৎ ক্রিয়া ব্যাখ্যার তত্ত্ব দেওয়ার জন্য ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন জগদ্বিখ্যাত এই বিজ্ঞানী।

কিন্তু মজার বিষয় হলো, আইনস্টাইন জন্মদিন পালন পছন্দ করতেন না। তাই তিনি জন্মদিন পালন নিয়ে মাথাও ঘামাতেন না। কিংবদন্তি তাত্ত্বিক পদার্থবিদ আইনস্টাইনের মতে, জন্মদিন পালন অর্থ মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা। তিনি জন্মদিন পালনের বিরোধিতা করে বলতেন, জন্মদিন পালন কেবল শিশুদের জন্য। কিন্তু একবার আইনস্টাইন তাঁর মতের বিরুদ্ধে গিয়েও জন্মদিন পালন করেছিলেন। ১৯৫৩ সালের ১৪ মার্চ, ওই বছর তাই দিনটি ছিল ব৵তিক্রম।

ওই বছর নিউইয়র্কের ইয়েশিভা বিশ্ববিদ্যালয় আইনস্টাইনের কাছে একটি প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল, তা তিনি ফেলতে পারেননি। ইয়েশিভা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনস্টাইনের নামে একটি মেডিকেল স্কুল তৈরির অনুমতি চেয়েছিল। একই সঙ্গে আইনস্টাইনের জন্মদিন পালন করে সে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথিদের দাওয়াত দিয়ে মেডিকেল স্কুলের জন্য তহবিল সংগ্রহের প্রস্তাব দিয়েছিল। আইনস্টাইন এ প্রস্তাবে সম্মতি দেন। তিনি বলেন, তাঁকে সম্মান জানানোর জন্য এই আয়োজন করা হচ্ছে। তাই তিনি তহবিল সংগ্রহের মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন।

আইনস্টাইন নিউইয়র্কের ইয়েশিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাঁর ব্যাগি সোয়েটার এবং স্ল্যাকস ছেড়ে ধূসর স্যুট পরেছিলেন। তবে তিনি আজীবন যে লাজুক ছিলেন, ওই জন্মদিনে তিনি খুব সাবলীল থাকতে পারেননি। তাঁকে উদ্দেশ্য করে কেক বেকার্স ইউনিয়ন লোকাল ৫১ যে তিন স্তরের জন্মদিনের কেক এনেছিল, সেটিও তিনি খেয়াল করেননি। তাঁর চোখ পড়ে গরুর মাংসের রোস্টের ওপর। তিনি এ রোস্ট নিয়ে বলেন, এটি সিংহের জন্য।

সবকিছু শেষ হওয়ার পর ওই মধ্যাহ্নভোজ থেকে ৩৫ লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছিল, যা থেকে বর্তমানে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অব মেডিসিন গড়ে তোলা হয়। অতিথি হিসেবে আইনস্টাইন শুধু বলেছিলেন, ‘আমি খুশি যে এটি শেষ হয়েছে।’ এ ঘটনার দুই বছর পর ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল তিনি মারা যান।

আইনস্টাইনের জীবনী

সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পদার্থবিদ হিসেবে পরিচিত আলবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি মাত্র এক গ্রীষ্মে বীজগণিত এবং ইউক্লিডীয় জ্যামিতি শিখে ফেলেছিলেন। আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং ভর-শক্তি সমতা সূত্র E = mc2, যাকে প্রায়ই বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত সমীকরণ বলা হয়, বিকাশের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।

আইনস্টাইন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় তাঁর অবদান এবং আলোক তড়িৎ প্রভাবের সূত্র আবিষ্কারের জন্য ১৯২১ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সে পিথাগোরিয়ান উপপাদ্যের নিজস্ব মূল প্রমাণও নিজের চেষ্টায় আবিষ্কার করেছিলেন এবং ১৪ বছর বয়সে ইন্টিগ্রাল ও ডিফারেনশিয়াল ক্যালকুলাসে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি ১৫০টির বেশি অন্যান্য কাজসহ ৩০০টির বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন।

আলবার্ট আইনস্টাইন জার্মানির উলমে আশকেনাজি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা হারমান আইনস্টাইন ছিলেন একজন বিক্রয়কর্মী ও প্রকৌশলী। ১৮৮০ সালে তাঁর পরিবার জার্মানির মিউনিখে চলে আসে। আইনস্টাইন ভাষা ও অন্যান্য বিষয়ে সমস্যায় পড়েন। তাই তিনি স্কুল ছেড়ে দেন। ১৬ বছর বয়সে আইনস্টাইন চুম্বকত্বের বল সম্পর্কে তাঁর প্রথম প্রবন্ধ লেখেন। এ নিবন্ধ তাঁর বাবার উপহার দেওয়া কম্পাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি লিখেছিলেন।

১৯০০ সালে আইনস্টাইন তাঁর প্রথম প্রবন্ধ কনক্লুশনস ফ্রম দ্য ক্যাপিলারিটি ফেনোমেনা প্রকাশ করেন। ১৯০৫ সালে তিনি পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ওই বছরই তিনি আলোক তড়িৎ প্রভাব, ব্রাউনিয়ান গতি, বিশেষ আপেক্ষিকতা এবং ভর ও শক্তির সমতা সম্পর্কে চারটি যুগান্তকারী প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। সেই বছরটি আইনস্টাইনের জন্য ‘অলৌকিক ঘটনা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯২৫ সালে তিনি আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বে অবদানের জন্য রয়্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের মর্যাদাপূর্ণ কোপলি পদক লাভ করেন।

১৯০৩ সালের জানুয়ারিতে এই বিজ্ঞানী মিলেভা ম্যারিককে বিয়ে করেন। তবে ম্যারিক এবং আইনস্টাইনের সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। ১৯১৯ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। আইনস্টাইন মূলত তাঁর চাচাতো বোন এলসার প্রেমে পড়েন। পাঁচ বছর সম্পর্কে থাকার পর আইনস্টাইন ১৯১৯ সালে এলসা লোয়েন্থালকে বিয়ে করেন। এলসা ১৯৩৬ সালে কিডনি রোগে মারা যান। ১৯৯৯ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে ‘পারসন অব দ্য সেঞ্চুরি’ (শতাব্দীর সেরা ব্যক্তিত্ব) হিসেবে অভিহিত করে।

শান্তিকামী আইনস্টাইন

আজীবন শান্তিবাদী বিশ্বাস সত্ত্বেও ১৯৩৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টকে একদল বিজ্ঞানীর পক্ষে একটি চিঠি লিখতে সম্মত হন, যাঁরা পারমাণবিক অস্ত্র গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। অন্যান্য বিজ্ঞানীর মতো তিনি শুধু জার্মানির হাতে এমন অস্ত্র থাকার সম্ভাবনায় ভয় পেয়েছিলেন। অবশ্য তিনি পরবর্তী ম্যানহাটান প্রকল্পে কোনো ভূমিকা পালন করেননি এবং পরে জাপানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের নিন্দা জানান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আইনস্টাইন একটি বিশ্ব সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান, যা পারমাণবিক প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করবে এবং ভবিষ্যতে সশস্ত্র সংঘাত প্রতিরোধ করবে। বিশ্বজুড়ে সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য নাম হিসেবে আইনস্টাইনের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি ইসরায়েলের নাগরিক না হওয়া সত্ত্বেও দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। ইসরায়েলি নেতা চেইম ওয়েজমানের মৃত্যুর পর আইনস্টাইনকে এ পদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তবে তিনি এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ হিসেবে জানান, তার এই পদ ধারণের যোগ্যতা, ইচ্ছা কিংবা ধৈর্য—কোনোটিই নেই।
তবে আইনস্টাইনকে চোখে চোখে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জে এডগার হুভারের প্রশাসন আইনস্টাইনের বিষয়ে খুবই সন্দিহান ছিল। বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে সমর্থনের কারণে ১৯৩২ সালের ডিসেম্বর থেকে আইনস্টাইনকে নজরদারিতে রাখে এফবিআই। তারা মনে করত, আইনস্টাইন একজন সমাজতান্ত্রিক অথবা বিদ্রোহী মানসিকতার মানুষ এবং এ কারণে তিনি সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ফলে তাঁকে এফবিআই বিপজ্জনক মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাঁর নামে তৈরি করা প্রতিবেদনে পৃষ্ঠার সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

তথ্যসূত্র: টাইম ম্যাগাজিন

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ল ন র জন য ন র জন তত ত ব ই বছর

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ