Samakal:
2025-11-03@08:57:49 GMT

পীতাম্বর শাহর দোকান

Published: 14th, March 2025 GMT

পীতাম্বর শাহর দোকান

চট্টগ্রামের পীতাম্বর শাহর দোকান ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের অংশ। অবাক লাগলেও বাস্তব– এই দোকান দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। বন্দরনগরীর খাতুনগঞ্জে অবস্থিত দোকানটি প্রায় ১৮৪ বছরের পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠান। এ দোকান সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে– ‘যাহা নাই এই জগতে, তাহা মিলিবে পীতাম্বর শাহর দোকানে।’ 
পীতাম্বর শাহর দোকান মূলত ভেষজ ওষুধের জন্য পরিচিত হলেও, এখানে সুঁই-সুতা থেকে শুরু করে বাঘের দুধ পর্যন্ত সবকিছু পাওয়া যায়। দোকানে পাওয়া যায় অর্জুনের ছাল, অশোক, ত্রিফলা, চিরতা, সুন্দরবনের মধু, যষ্টিমধু, ময়ূরের পালক, হরিণের কস্তুরি, শতমূল, জিনসেং, লতাকস্তুরি, সমুদ্র ফেনা, লোহজারণ, স্বর্ণমাক্ষী, তামাজারণ, মুক্তা, দস্তা, নিমতৈল, পদ্মমধু, বিষমধু, বাঘের তেল, বাঘের চামড়া, বাঘের হাড়, ময়ূরপুচ্ছ, মারজান, হযরত পাথর, তুলসী, বিভিন্ন ধরনের সিন্দুর, চন্দনবীজ, কর্পূর, শালপানি, অশ্বগন্ধ, আমলকী, আফিম, কোয়াসিয়া, কাঞ্চন অয়েল, কুশুম দানা, কায়াবতি তেল, কডলিভার তেল ইত্যাদি। আরও রয়েছে বিয়ে, পূজা-পার্বণ, ঈদ-কোরবানির সরঞ্জাম। 
একসময় পীতাম্বর শাহর দোকানে বাঘের দুধ পাওয়া যেত বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে বাস্তবে এটি ছিল বাঘের বাচ্চাদের দুধ পান করার সময় নিচে পড়ে যাওয়া দুধ, যা পাহাড়ি আদিবাসীরা সংগ্রহ করে দোকানে সরবরাহ করতেন। বর্তমানে বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং সেই আদিবাসীদের অনুপস্থিতির কারণে এই দুধ আর পাওয়া যায় না। 
বাংলা নববর্ষে হালখাতা উদযাপন বাঙালি ব্যবসায়ীদের একটি পুরোনো প্রথা, যেখানে পুরোনো হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে নতুন খাতা খোলা হয়। আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে এ প্রথা অনেকটাই বিলুপ্তির পথে, তবে পীতাম্বর শাহর দোকানে এখনও হালখাতা উদযাপন করা হয়। তারা এখনও হাতে লেখা খাতায় হিসাব রাখেন এবং নববর্ষে ক্রেতাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করেন। 
বলা হয়, গুরুজির নির্দেশে ১৮৪ বছর আগে পীতাম্বর শাহ ঢাকা থেকে হেঁটে ১৫-২০ দিন পর চট্টগ্রামে পৌঁছেন। চট্টগ্রামে এসে দোকানটি কিনে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। পরে তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, ১৮৪ বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তারা একই পদ্ধতিতে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। বর্তমানে দোকানটি পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানটির গোড়াপত্তনকারী পীতাম্বর শাহের চতুর্থ প্রজন্ম।
পীতাম্বর শাহর দোকান শুধু একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এখানে পাওয়া যায়। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা-পার্বণ, মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদ-কোরবানি এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এখানে মেলে। এ ছাড়া মাজারের ওরসের জন্য বড় মোমবাতি, প্রতিমার চুল, তালপাতার পাখা, ঢালা, কুলা, ঝুড়ি ইত্যাদি এখানে পাওয়া যায়। 
লোকে বলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব পাল্টেছে, কিন্তু পীতাম্বর শাহর দোকানের কোনো কিছুই পাল্টেনি। গুরু পীতাম্বর শাহ যেভাবে ব্যবসা শিখিয়ে গেছেন, তাদের বংশধররাও এখনও সেভাবেই ব্যবসা করে যাচ্ছেন। দিনবদলের ভিড়ে ব্যতিক্রম নগরীর পীতাম্বর শাহর দোকান। যেখানে এখনও টিকে আছে হালখাতার ঐতিহ্য। নববর্ষে এখনও এ দোকানে পালন করা হয় হালখাতা উৎসব। বলা যায় বাঙালি ঐতিহ্যের বিলুপ্ত প্রায় অনুষঙ্গ এ হালখাতার শেষ আশ্রয় এই পীতাম্বর শাহর দোকান। এ দোকান চট্টগ্রামের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত সাক্ষী। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ত ম বর শ হ র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।

কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।

এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।

অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।

একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা