ভটভট শব্দে সচল হলো ট্রলারের ইঞ্জিন। বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির বনকর্মীদের সঙ্গী হয়েছি। গন্তব্য গহিন সুন্দরবন। হেঁটে হরিণশিকারিদের পেতে রাখা ফাঁদ উদ্ধার করবেন বনরক্ষীরা। সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক শরিফুল ইসলামের সহায়তায় দলের সঙ্গে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।

সাতসকালে বনের মধ্যকার খাল দিয়ে এঁকেবেঁকে শিবসা নদীতে গিয়ে পড়ে ট্রলার। ভাটার টানে নদীর তীরে চর জেগেছে। ট্রলারে বসে একটু খেয়াল করলে বনের ভেতরটাও দেখা যায়। সকালের স্নিগ্ধ আলোয় হরিণের পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে, দৌড়ঝাঁপ করছে বানরের দল। ট্রলারে দাঁড়িয়ে দলের অন্য সদস্যদের গন্তব্য ও করণীয় সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দেন দলনেতা ফরেস্টার সাবিত মাহমুদ। তিনি খুলনার কয়রার হড্ডা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

শিবসা নদী ধরে ঘণ্টাখানেক ট্রলার চলার পর পৌঁছে গেলাম বনের একটি খালের মুখে। দুপাশে ঘন বন। সুন্দরী, কেওড়া, গেওয়া, বাইন, গোলপাতাসহ নানা জাতের গাছ। বনরক্ষীরা জানালেন, এটি ভারানীর খাল। যে খাল দিয়ে এক খাল থেকে আরেক খালে যাওয়া যায়, সেটাই ভারানীর খাল। এসব খালঘেঁষা বনেই বেশি ফাঁদ পাতে হরিণ শিকারিরা।

ট্রলারের ইঞ্জিন বন্ধ হলো। খালের পাড়ে একটি গেওয়াগাছে বাঁধা হলো ট্রলার। লাফিয়ে খালপাড়ের কাদাপানি মাড়িয়ে সবাই জঙ্গলে উঠলাম। বনভূমিজুড়ে শূলের মতো মাথা উঁচু করে আছে অসংখ্য শ্বাসমূল। তার ভেতর দিয়ে হরিণ চলাচল করেছে, তারই খুরের ছাপ। সেই ছাপ ধরে গহিন বনের মধ্যে অস্ত্রধারী বনরক্ষীদের সঙ্গে হেঁটে এগোতে থাকি। গাছপালাগুলো এতটাই ঘন যে কয়েক হাত দূরের কিছুও দেখা যায় না।

ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে শিকারির পেতে রাখা ফাঁদ খুঁজতে খুঁজতে এগোতে থাকেন বনরক্ষীরা। তাঁদের অনুসরণ করে হাঁটাও কঠিন। কারণ, শ্বাসমূল, আঠালো কাদা আর ঝুলে থাকা জটপাকানো লতাগুল্ম। এক হাতে ক্যামেরা উঁচিয়ে ধরে এর মধ্যেই এগিয়ে চলছিলাম। হঠাৎই জঙ্গলের ভেতর কিসের যেন শব্দ, মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়াই। পরক্ষণেই দেখতে পেলাম, পাশের হেঁতালঝোপ দিয়ে একটি বন্য শূকর দৌড় দিল।

সুন্দরবনে গহিনে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বনরক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • সুন্দরবনের বড় গেছো প্যাঁচা