বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি কারা, তাদের জন্ম কীভাবে?
Published: 16th, March 2025 GMT
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তানে এক ভয়াবহ নাটকীয় ঘটনায় ১১ মার্চ সশস্ত্র বিদ্রোহীরা একটি যাত্রীবাহী ট্রেন দখল করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্রুত অভিযান চালিয়ে শত শত জিম্মিকে মুক্ত করেছে। ট্রেনটি বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে উত্তরের পেশোয়ারে যাচ্ছিল, আর তাতে ছিলেন বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য।
বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) কোনো বিলম্ব না করেই হামলার দায় স্বীকার করে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এ পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা জানায়, এটি পাকিস্তানের ‘দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক দখলদারত্ব এবং বেলুচ জনগণের বিরুদ্ধে চালানো যুদ্ধাপরাধের’ প্রতিশোধ।
১৯৪৮ সালে ভারত বিভক্তির কয়েক মাস পর বেলুচিস্তান পাকিস্তানের অংশ হয়ে গেলে তখন থেকেই অঞ্চলটি পাকিস্তানি রাষ্ট্রের অবহেলার শিকার। দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারকে একের পর এক বিদ্রোহ দমন করতে হয়েছে।
সাম্প্রতিক এই ট্রেন অপহরণের ঘটনায় বিএলএ দাবি করে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে বেলুচ রাজনৈতিক কর্মী, নিখোঁজ ব্যক্তি ও বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে, নইলে তারা জিম্মিদের হত্যা করবে। এরপর সেনাবাহিনী দুই দিন ধরে কঠোর অভিযান চালায়। অভিযানে ৩৩ জন বিদ্রোহী, ২১ যাত্রী ও ৪ সেনাসদস্য নিহত হন।
এই নজিরবিহীন হামলা আবারও পাকিস্তান সরকারকে কঠিন প্রশ্নের মুখে ফেলেছে—বেলুচিস্তানের বাড়তে থাকা অসন্তোষ ও সশস্ত্র বিদ্রোহ দমনে তাদের কৌশল আসলে কতটা কার্যকর?
বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) একটি স্বাধীনতাকামী সংগঠন। ২০০০-এর দশকের শুরুতে তারা আত্মপ্রকাশ করে। পাকিস্তান সরকার ও বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ একে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
আরও পড়ুনবেলুচিস্তান কেন স্বাধীন হতে চায়১৪ মার্চ ২০২৫অন্যান্য তুলনামূলক নরমপন্থী বেলুচ জাতীয়তাবাদী দলের মতো বিএলএ পাকিস্তানের অংশ হিসেবে টিকে থাকতে চায় না। তারা চায় সম্পূর্ণ স্বাধীন বেলুচিস্তান।
বেলুচ জনগণের অসন্তোষের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ও সেনাবাহিনীতে পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব না থাকা। জাতীয়তাবাদীরা অভিযোগ করে, পাকিস্তান সরকার বেলুচিস্তানের কয়লা, সোনা, তামা ও গ্যাসের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করছে। অথচ স্থানীয় বেলুচ জনগণ তাতে কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।
উদাহরণস্বরূপ, সোনা ও তামার খনির রাজস্বের বেশির ভাগ অংশই যায় এটি পরিচালনাকারী চীনা কোম্পানি ও পাকিস্তান সরকারের পকেটে। বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার পায় মাত্র ৫ শতাংশ।
চাঘাই পাকিস্তানের সবচেয়ে খনিজসমৃদ্ধ জেলা। অথচ এ জেলা পাকিস্তানের সবচেয়ে অনুন্নত অঞ্চলগুলোর একটি। স্থানীয় শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, খনিতে তাঁদের শুধু নিম্ন মানের কাজ দেওয়া হয়। তাঁরা ভয়াবহ নিরাপত্তাহীন অবস্থায় কাজ করতে বাধ্য হন।
দীর্ঘদিনের অবহেলার কারণে বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে দরিদ্র ও পশ্চাৎপদ প্রদেশ হিসেবে রয়ে গেছে। মানব উন্নয়ন সূচকে (এইচডিআই) ২০১৭ সালে এটি ০.
২০০৬ সালে বিশিষ্ট বেলুচ নেতা নওয়াব আকবর বুগতি সেনা অভিযানে নিহত হওয়ার পর বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আরও জোরালো হয়ে ওঠে। এরপর পাকিস্তান সরকার বিএলএকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং প্রদেশটিতে সামরিক অভিযান আরও তীব্র হয়।
বেলুচিস্তানের বোলান জেলায় লিবারেশন আর্মির পুড়িয়ে দেওয়া ট্রাকউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ক স ত ন সরক র ব এলএ সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।
রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি
ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।
যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।
কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী