আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে দেশের দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক পুনঃরুদ্ধার খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে নতুন বাজেটে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য স্বল্পমেয়াদী কার্যক্রমের পাশাপাশি অর্থনীতিকে কীভাবে স্থিতিশীল করা যায় তার জন্য মধ্যমেয়াদী সংস্কারের কিছু ভিত্তি স্থাপন করা প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আর্থিক সংকটের ‘দুষ্টচক্র’ ভাঙা, এনবিআরের সংস্কার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।

রবিবার (১৬ মার্চ) সকালে ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে এরকম বেশকিছু সুপারিশ দিয়েছে সংস্থাটি। অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, “চ্যালেঞ্জপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাজেট প্রণয়ন করবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব সংগ্রহে স্থবরিতা, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকট সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি প্রায় অসম্ভব। ২০২৬ অর্থবছরের বাজেট এমন একটি সময়ে প্রণয়ন করা হচ্ছে যখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।এটি মোকাবিলায় দূরদর্শী ও সমন্বিত নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। মুদ্রানীতির স্থীতিশীলতা আনয়ন নীতি-নির্ধারকদের অন্যতম কাজ।এটি অর্জনের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার স্থিতিশীল করা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।”

তিনি বলেন, “অর্থবছর শেষে রাজস্ব ঘাটতি ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ওপরের দিকে ছিল। শহর ও গ্রামে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে ছিল। এ মাসে মূল্যস্ফীতি কমেছে, তবে গ্যাসের দামের যে প্রস্তাব আছে সেটা যদি অনুমোদিত হয় তবে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যাবে। বৈশ্বিক শুল্ক যুদ্ধ ও মূল্যস্ফীতির ধারা বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক যে বলছে চলতি বছরের জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে নামিয়ে আনবে সেটা বাস্তবে অর্জন না ও হতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা।”

ফাহমিদা খাতুন বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সূচারুভাবে সম্পন্ন করাই মূলনীতি হওয়া উচিত। সেটা করতে হলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল করা এবং রাজস্ব ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ানো উচিত। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের বিষয়গুলো মাথায় রেখেও বাজেট প্রণয়ন করা দরকার। বাজেট প্রস্তাবে সিপিডি জানায় ৬০টি পণ্যের শুল্কহার নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে হবে যাতে বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় থাকে। যাতে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের ধাক্কাটা আমরা সামলে আনতে পারি। রপ্তানিকারকদের সহায়তা করার জন্য অন্য ধরনের সহায়তার কথা চিন্তা করতে হবে।”

বাজেট প্রস্তাবে এনবিআরের সংস্কার আনার কথা জানায় সিপিডি। এসব সংস্কারের মধ্যে রয়েছে আধুনিক রাজস্ব কাঠামো প্রণয়ন, ডিজিটালাইজেশন করা, সামঞ্জস্যপূর্ণ করনীতি তৈরি করা, ঝামেলামুক্তভাবে কর দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সিগারেট, জর্দা, বেভারেজ পণ্যে কর ভার বেশি করা, শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানো ইত্যাদি। জুলাই আন্দোলনে যারা আহত বা অক্ষম ছিল তাদের স্নাতক ডিগ্রি শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার অর্থায়নের জন্য ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে একটি বৃত্তি কর্মসূচি চালু করার প্রস্তাব করেছি সিপিডি।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, “বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এলএনজি আমদানির পরিবর্তে দেশের গ্যাস অনুসন্ধানের গুরুত্ব দিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির কাচাঁমালের ওপর শুল্ক কমাতে হবে। এসএমই সুযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

ঢাকা/হাসনাত/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব জ ট প রণয়ন ব যবস থ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পাঁচ বছরে বাড়বে ৬৫ শতাংশ

গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণের আসল বাবদ সরকার পরিশোধ করেছে ২০২ কোটি মার্কিন ডলার। সরকারের প্রাক্কলন হলো– চলতি  অর্থবছরে এ বাবদ ব্যয় হবে ২৬২ কোটি ডলার। পরবর্তী তিন অর্থবছরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে যথাক্রমে ২৯০ কোটি, ৩১৩ কোটি এবং ৩৩৪ কোটি ডলার। সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী পাঁচ বছরে ঋণের আসল পরিশোধ বাড়বে ৬৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বাজেট দলিল হিসেবে প্রকাশিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে (এমটিএমপিএস) এই প্রাক্কলন রয়েছে। 
বিদেশি ঋণের আসলের পাশাপাশি সুদ পরিশোধ করতে হবে। আগামী অর্থবছরে দুটি মিলে ব্যয় হবে ৪৭০ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৫৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। আগামী ২০২৭-২৮ অর্থবছর এ খাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ৬৮ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। 
নীতি বিবৃতিতে বলা হয়, মেয়াদপূর্তি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং কিছু ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে আগামী বছরগুলোতে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়বে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার অবমূল্যায়নের ফলে টাকার অঙ্কে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। কেননা একই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধ করতে আরও বেশি টাকার প্রয়োজন হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টাকার মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা এ সমস্যা তীব্রতর করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং বর্তমান তারল্য সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য ঋণ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা জরুরি। 
এতে আরও বলা হয়, সরকারের সামগ্রিক ঋণ পরিস্থিতি এখনও টেকসই থাকলেও ঋণের পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে ক্রমেই বাড়ছে। দেশি-বিদেশি মিলে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে সার্বিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ২১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াবে ২৩ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াবে ২৮ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে হালনাগাদ তথ্য ব্যবহার করে আরও একটি ‘ডেট সাস্টিনিবিলিটি অ্যানালাইসিস’ বা ডিএসএ প্রতিবেদন  প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যা সরকারি অর্থ ব্যবহার ও ঋণের ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঋণের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুদ ব্যয়ের পরিমাণও বাড়বে। চলতি অর্থবছর যেখানে সুদ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তিন বছরের ব্যবধানে সরকারের সুদ ব্যয় ৩১ হাজার কোটি টাকা বাড়বে। 
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের ঋণ স্থিতিশীলতা বিশ্লেষণ অনুযায়ী বাংলাদেশের ঋণ ঝুঁকি এখনও তুলনামূলকভাবে কম। তবে ভবিষ্যতে বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ রপ্তানির তুলনায় বাড়তে থাকলে স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। টেকসই পরিস্থিতির জন্য সক্রিয় ঋণ ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গুম বিষয়ে আইন হচ্ছে, আইনের আওতায় কমিশন গঠনের পরিকল্পনা: আইন উপদেষ্টা
  • পাঁচ বছরে বাড়বে ৬৫ শতাংশ
  • ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন
  • টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার যেভাবে হলে ভালো হয়
  • জাফলংসহ দেশের পর্যটন উন্নয়নে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
  • পরিবেশবান্ধব পর্যটনে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
  • লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি