স্বামীর সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে গৃহবধূকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ৫
Published: 17th, March 2025 GMT
স্বামীর সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে কুমিল্লার লাকসামে এক গৃহবধূকে (১৯) দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গত শনিবার ভুক্তভোগী তরুণীর মা বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
আজ সোমবার সকালে লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে গতকাল রোববার অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের আজ সকালে কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন লাকসাম উপজেলার মনোহরপুর এলাকার প্রয়াত খলিলুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আলী (২৫), পৌরসভার শ্রীপুর মধ্যপাড়ার মো.
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালীর সোনাপুর এলাকার এক গৃহবধূ তাঁর স্বামীর সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার লাকসামে তাঁর নানাশ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। সেখান থেকে গত শুক্রবার ভোরে এ দম্পতি কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লাকসাম পৌরসভার বাইপাস মোড় এলাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। ওই সময় বাস না পেয়ে তাঁরা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন। তখন অটোরিকশাচালক মো. মাসুদ জানতে চান, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী কিনা। পরে কৌশলে তাঁদের দুজনকে লাকসামের গন্ডামারা এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে আসামি তাঁদের ব্যাগ তল্লাশি করেন এবং লালমাই উপজেলার মগবাড়ি এলাকায় নিয়ে স্বামীকে ফেলে রেখে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যান। পরে তাঁকে লাকসাম পৌরসভার পাইকপাড়া এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নেওয়া হয়। সেখানে আসামি মো. মাসুদ ও মোহাম্মদ আলী গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন। এরপর তাঁকে লাকসাম পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তালুকদার ভিলায় আসামি বিলকিছ আক্তার ওরফে কল্পনার ভাড়া বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে পুনরায় ধর্ষণ করা হয়। ওই দিনই স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গৃহবধূকে তাঁর পরিবার উদ্ধার করে। এ ঘটনায় শনিবার রাতে তাঁর মা বাদী হয়ে লাকসাম থানায় অভিযোগ করেন। গতকাল সকালে মামলাটি নথিভুক্ত হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও লাকসাম থানার পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা দ্রুত অভিযান শুরু করি। পরে লাকসামের বিভিন্ন স্থানে গতকাল দিনভর অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হয়েছে। দুজন মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন, বাকিরা সহযোগী ছিলেন। মেয়েটির সঙ্গে মামলার আসামিদের আগের কোনো পরিচয় নেই। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠার পর মোহাম্মদ আলী ও মাসুদ কৌশলে তুলে নিয়ে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর গ হবধ ক এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
মার্চে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ নারী
গত মার্চে ৪৪২ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণ করা হয়েছে ১২৫ কন্যাসহ ১৬৩ জনকে। ১৮ কন্যাসহ ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দুই কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। দুই কন্যা ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া ৫৫ কন্যাসহ ৭০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সাম্প্রতিক নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ তথ্য জানান। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে মোট ১৮৯ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩০ কন্যাসহ ৪৮ জন। তার মধ্যে তিন কন্যাসহ ১১ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
জানুয়ারিতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ২০৫ নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৩ কন্যাসহ ৪৯ জন। তার মধ্যে ১৪ কন্যাসহ ২০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাসহ দুইজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া দুইজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
মডারেটরের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫ নম্বর ধারা জেন্ডার সমতা। এটি উপেক্ষা করা কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী আন্দোলনের অন্যতম দাবি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সংসদে এক-তৃতীয়াংশ আসন ও সরাসরি নির্বাচন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৫৪টি। এর আগে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে ১৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৯৯ কন্যাশিশু।