সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ভবনের ভেতরে ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাতে এক সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করার অভিযোগ উঠেছে। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইউজিসি ভবনের পাঁচতলায় লিফটের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক মো. শিহাব উদ্দিন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস ডটকম নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত আছেন।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় ইউজিসির চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে গঠিত তথ্যানুসন্ধান কমিটি ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এই কমিটি ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের অফিস সহায়ক আমিনুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পেয়েছে। তিনি ওই সাংবাদিককে ধাক্কা দেন। তাঁকে আজই ইউজিসির অন্য শাখায় বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া সিসিটিভির ফুটেজে ঘটনার সময় ইউজিসির সিনিয়র সহকারী সচিব মোহা.

মামুনুর রশিদ খানকে বাক্যবিনিময় করতে দেখা গেছে। এই ঘটনায় অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে তথ্যানুসন্ধান কমিটি। তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ইউজিসির সদস্য মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।

জানা গেছে, ইউজিসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্যতার অতিরিক্ত অর্থঋণ দেওয়া নিয়ে করা সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক শিহাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ইউজিসির সচিব মো. ফখরুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী ইউজিসি চেয়ারম্যানের দপ্তরে গেছেন এমন একটি খবর পেয়ে অফিসের অ্যাসাইনমেন্টে তিনি ইউজিসি ভবনে যান। তিনি ইউজিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে গেলে চেয়ারম্যানের দপ্তরে দায়িত্ব পালন করা সিনিয়র সহকারী সচিব মোহা. মামুনুর রশিদ খান তাঁর পরিচয় জানতে চান। একপর্যায়ে তিনি চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে বের হয়ে সামনের লিফটের কাছে যান। সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় ইউজিসির অফিস সহায়ক আমিনুল ইসলাম প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে তাঁকে জেরা করতে শুরু করেন এবং মারধরের হুমকি দেন। একপর্যায়ে তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়। এ সময় আরও কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, এমন পরিস্থিতির মধ্যে একপর্যায়ে শিহাব উদ্দিনকে কমিশনের চেয়ারম্যানের দপ্তরে নেওয়া হয়। পরে অবশ্য ইউজিসি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে শিহাব উদ্দিনকে নিরাপদে বের করে ইউজিসির গাড়িতে আগারগাঁওয়ের মেট্রোস্টেশনের নিচে নামিয়ে দিয়ে যায়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত অফিস সহায়ক আমিনুল ইসলাম ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, শুধু কথাকাটি হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভিড় দেখে সেখানে গেলে তিনি জানতে পারেন সাংবাদিক শিহাব উদ্দিন তাঁদের নিয়ে নিউজ করেছিলেন। তিনি নিয়ম মেনে ঋণ নিয়েছেন। এ জন্য ওই সাংবাদিকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কে তথ্য দিয়েছে, সেটি যেন বলেন। তখন ওই সাংবাদিক চেঁচামেচি করেন এবং তাঁকে মামলা করতে বলেন। এ সময় তর্কাতর্কি হয়।

তবে আরেক অভিযুক্ত সিনিয়র সহকারী সচিব মামুনুর রশিদ খানের মুঠোফোনে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

ইউজিসির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন ঘটনার পর ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ সদস্যের একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেন, যাঁরা ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে আজই চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ল ইসল ম ইউজ স র ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ