ইউজিসিতে এক সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার অভিযোগ
Published: 19th, March 2025 GMT
সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ভবনের ভেতরে ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাতে এক সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করার অভিযোগ উঠেছে। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইউজিসি ভবনের পাঁচতলায় লিফটের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক মো. শিহাব উদ্দিন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস ডটকম নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত আছেন।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় ইউজিসির চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে গঠিত তথ্যানুসন্ধান কমিটি ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এই কমিটি ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের অফিস সহায়ক আমিনুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পেয়েছে। তিনি ওই সাংবাদিককে ধাক্কা দেন। তাঁকে আজই ইউজিসির অন্য শাখায় বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া সিসিটিভির ফুটেজে ঘটনার সময় ইউজিসির সিনিয়র সহকারী সচিব মোহা.
জানা গেছে, ইউজিসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্যতার অতিরিক্ত অর্থঋণ দেওয়া নিয়ে করা সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক শিহাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ইউজিসির সচিব মো. ফখরুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী ইউজিসি চেয়ারম্যানের দপ্তরে গেছেন এমন একটি খবর পেয়ে অফিসের অ্যাসাইনমেন্টে তিনি ইউজিসি ভবনে যান। তিনি ইউজিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে গেলে চেয়ারম্যানের দপ্তরে দায়িত্ব পালন করা সিনিয়র সহকারী সচিব মোহা. মামুনুর রশিদ খান তাঁর পরিচয় জানতে চান। একপর্যায়ে তিনি চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে বের হয়ে সামনের লিফটের কাছে যান। সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় ইউজিসির অফিস সহায়ক আমিনুল ইসলাম প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে তাঁকে জেরা করতে শুরু করেন এবং মারধরের হুমকি দেন। একপর্যায়ে তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়। এ সময় আরও কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, এমন পরিস্থিতির মধ্যে একপর্যায়ে শিহাব উদ্দিনকে কমিশনের চেয়ারম্যানের দপ্তরে নেওয়া হয়। পরে অবশ্য ইউজিসি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে শিহাব উদ্দিনকে নিরাপদে বের করে ইউজিসির গাড়িতে আগারগাঁওয়ের মেট্রোস্টেশনের নিচে নামিয়ে দিয়ে যায়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত অফিস সহায়ক আমিনুল ইসলাম ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, শুধু কথাকাটি হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভিড় দেখে সেখানে গেলে তিনি জানতে পারেন সাংবাদিক শিহাব উদ্দিন তাঁদের নিয়ে নিউজ করেছিলেন। তিনি নিয়ম মেনে ঋণ নিয়েছেন। এ জন্য ওই সাংবাদিকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কে তথ্য দিয়েছে, সেটি যেন বলেন। তখন ওই সাংবাদিক চেঁচামেচি করেন এবং তাঁকে মামলা করতে বলেন। এ সময় তর্কাতর্কি হয়।
তবে আরেক অভিযুক্ত সিনিয়র সহকারী সচিব মামুনুর রশিদ খানের মুঠোফোনে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
ইউজিসির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন ঘটনার পর ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ সদস্যের একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেন, যাঁরা ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে আজই চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ল ইসল ম ইউজ স র ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।