ধর্ষণ মামলার বিচারে তাড়াহুড়া করে আইন সংশোধন নয়
Published: 19th, March 2025 GMT
ধর্ষণের মামলার বিচারকাজে তাড়াহুড়া করে আইন সংশোধন না করে আলোচনা করার তাগিদ দিয়েছেন আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং অধিকারকর্মীরা। আজ বুধবার ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট’ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার প্রতিষ্ঠায় আইনের কোথায় কতটুকু সংশোধনের প্রয়োজন, তা আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা উচিত। কঠোর শাস্তি বিচারের নিশ্চয়তা আনে না। অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণ করে শাস্তি দিতে হবে। তাঁরা ধর্ষণের সংজ্ঞাতেও সংশোধন আনার দাবি জানান।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ধর্ষণ ও নির্যাতন: আইনগত সুরক্ষায় করণীয়’ শিরোনামে সভার আয়োজন করা হয়।
মাগুরার শিশুটির ঘটনা ঘিরে সারা দেশে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ–সমাবেশের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত করার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৭ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। এতে ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর শিশু ধর্ষণের মামলার বিচার আলাদাভাবে করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের বিধান রাখা হচ্ছে। ডিএনএ পরীক্ষার সনদ ছাড়াই আদালত যদি মনে করেন চিকিৎসা সনদ ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচার সম্ভব, তাহলে আদালত ডিএনএ সনদ ছাড়াই বিচার করতে পারবেন।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালে ১৫টি সংগঠনের অংশগ্রহণে ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট তৈরি করা হয়। জোটের সচিবালয় হচ্ছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। সভায় বলা হয়, ধর্ষণের ধারায় সংশোধন আনতে এই জোটটি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলেও আইন সংশোধনের সময় জোটের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি সরকার। নারী ও শিশুর পরিবর্তে ‘ব্যক্তি’ শব্দটি ব্যবহার করে ধর্ষণের সংজ্ঞা বৈষম্যহীন করার দাবি ওঠে মুক্ত আলোচনায়। নারী ও মেয়েশিশুর মতো পুরুষ, ছেলেশিশু, হিজড়া ও অন্যান্য লিঙ্গের ব্যক্তিদের অসম্মতিতে যৌনসংগমকে ধর্ষণ বলে গণ্য করতে বলা হয়। ধর্ষণের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ধর্ষণের সংজ্ঞা পরিবর্তন, ভুক্তভোগীর চরিত্রগত সাক্ষ্যের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, ভুক্তভোগীর জন্য রাষ্ট্র পরিচালিত ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়।
মতবিনিময় সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘একটা ঘটনা ঘটলে আমরা তড়িঘড়ি করে আইন সংশোধন করতে বসে পড়ি। এই মানসিকতা থেকে বের হতে হবে। সরকারকে আমি ধন্যবাদ দেব, যদি তারা নিরপেক্ষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার প্রতিষ্ঠায় তাড়াহুড়ো না করে আইনের কোথায় কতটুকু সংশোধনের প্রয়োজন, তা আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা উচিত। বিচারক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে এত আইনের প্রয়োজন হয় না। তিনি বলেন, ‘একটি ছেলে কেন ধর্ষণ করছে, সে দায়ও সমাজের সবার। কারণ, ছেলেটিকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায়নি। সন্ধ্যার পর আমরা মেয়েকে বাইরে যেতে দিই না। অথচ বাইরে কি কুকুরে কামড়ায় নাকি সাপ তাড়া করে?’
সভায় আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা সালমা আলী বলেন, ধর্ষণের মামলায় ভারত ও নেপালে কিছু ভালো রায় হয়েছে। সেসব দেখে আইন সংশোধন চূড়ান্ত করার আগে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে ধর্ষণ নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের মতামত নেওয়া উচিত। ধর্ষণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সরকারের সদিচ্ছাই বড় বিষয়। তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে যেন অপরাধের মাত্রা কমে আসে। থানায় ও আদালতে ভুক্তভোগীর প্রতি আরও সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। সংবাদমাধ্যমকেও সতর্ক থাকা উচিত, যেন সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে হয়রানি না করা হয়।
অপর আলোচক নারীপক্ষের সদস্য ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য মাহীন সুলতান বলেন, ধর্ষণের মতো অপরাধ শুধু আইন দিয়ে থামানো যাবে না। মাগুরার শিশুর ঘটনাটি সবাইকে নাড়া দিয়েছে। মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে। সরকারও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। ত্বরিত গতিতে আইন সংশোধন করার ক্ষেত্রে সবার মতামত নেওয়া হয়েছে কি না, সেটা দেখা দরকার। ধর্ষণ আইন সংস্কার জোটকে ডাকা হয়নি। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের মতামতও চাওয়া হয়নি। কেন তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত হচ্ছে না, তা ঠিক না করে আইন সংশোধন করে লাভ হবে না। তিনি বলেন, সংশোধনে আরও সময় নেওয়া উচিত। এটা জাতীয় বিষয়, কাউকে দেখানোর বিষয় নয়। দণ্ড বাড়ানো কোনো সমাধান নয়। সাজা বাড়ালে রায়ের হার কমে যায়। কঠোর শাস্তি বিচারের নিশ্চয়তা আনে না। অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণ করে শাস্তি দিতে হবে।
সভায় সভাপতিত্ব ও সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা। তিনি আইন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, দণ্ডবিধি থেকে ধর্ষণের সংজ্ঞা নেওয়া হয়েছে। সেখানে পরিবর্তন আনা দরকার। সাক্ষীকে সুরক্ষা দেওয়া, সময়মতো তদন্ত করা এবং দ্রুত বিচারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্য দেন ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম।
সভায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়াবিষয়ক সুপারিশমালা তুলে ধরেন ব্লাস্টের আইনি বিশেষজ্ঞ আয়েশা আক্তার এবং জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা ফাহাদ বিন সিদ্দিক।
সভায় ধর্ষণের সংজ্ঞা পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়। দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণকে নারীর বিরুদ্ধে পুরুষের অপরাধ হিসেবে ধরে পাঁচটি বিষয়ের ওপর ধর্ষণের সংজ্ঞা দেওয়া আছে। বতর্মান আইন ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’ ভুক্তভোগীর বয়স ও বৈবাহিক ধর্ষণ ছাড়া ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধিতে দেওয়া ধর্ষণের সংজ্ঞাই অনুসরণ করে। দণ্ডবিধিতে ধর্ষণ হয়েছে কি না, তা পেনিট্রেশন (অভ্যন্তরে প্রবেশ) থেকে বোঝার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ পুরুষাঙ্গ প্রবেশের মাধ্যমে যৌনসংগমের কথা বলা হয়েছে।
সভায় জোটের প্রস্তাবে ধর্ষণের সংজ্ঞায় সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়। এতে বলা হয়, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌনসংগমের অভিপ্রায়ে তার সম্মতি ব্যতিরেকে বা বলপূর্বক আঘাত করে, ভয় দেখিয়ে বা প্রতারণামূলক সম্মতি আদায় করে ইচ্ছাপূর্বক লিঙ্গ (পেনিস) বা অন্য কোনো বস্তু অন্য ব্যক্তির মুখ বা পায়ুপথে বা যোনিপথে প্রবেশ করিয়ে যৌনসংগম করে, তাহলে সেটাকে ধর্ষণ বলে গণ্য করা হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইন স স ক র ন ত কর অপর ধ ন আইন সরক র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
শুধু পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস নয়, উদ্দেশ্য আরও বেশি কিছু
নব্বয়ের দশক থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর কৌশলগত লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। আর তা হলো, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করা। যখন ওয়াশিংটন ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে অসলো শান্তিচুক্তি করেছিল, তখনও তিনি লক্ষ্য থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি।
তিনি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তিচুক্তির সমালোচনা করলেও ধারাবাহিকভাবে ‘ইরানি হুমকি’ তুলে ধরেছিলেন। এমনকি যখন বিষয়টি বিশ্বব্যাপী বা আঞ্চলিক অগ্রাধিকার ছিল না, তখনও নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে কথা বলতে একাই দাঁড়িয়েছিলেন।
নেতানিয়াহু সর্বদা চেয়েছেন ইহুদি ইতিহাসে তাঁর ছাপ রেখে যেতে। ইরানি পারমাণবিক হুমকি ধ্বংস করা নেতা হিসেবে নিজেকে তিনি স্মরণীয় করতে চেয়েছেন।
পরিকল্পনা ব্যর্থ, উচ্চাকাঙ্ক্ষা পুনরুজ্জীবিত
২০১০ সালের মধ্যে নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাক সেনাবাহিনীকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় হামলার প্রস্তুতি নিতে বলেন। পাশাপাশি তারা ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যা করার নির্দেশ দেন। তবে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পিছু হটার কারণে সেই অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। তৎকালীন চিফ অব স্টাফ গাবি আশকেনাজি, শিন বেট প্রধান ইউভাল ডিস্কিন ও মোসাদপ্রধান মেইর দাগান সবাই সতর্ক করে দিয়েছিলেন, মার্কিন সমর্থন ছাড়া ইরানে আঘাত করার সামরিক ক্ষমতা ইসরায়েলের নেই।
এহুদ বারাকের সতর্কবার্তায় মার্কিন প্রশাসন কূটনীতির দিকে ঝুঁকে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে এতে ক্ষুব্ধ হন নেতানিয়াহু। কিন্তু তাঁর ইরানে বোমা হামলার স্বপ্ন কখনও ম্লান হয়নি। তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। এমনকি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকে বোমার একটি কার্টুন দেখিয়ে তিনি সতর্ক করেছিলেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সীমারেখা অতিক্রম করছে।
সর্বশেষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নেতানিয়াহু কিছুটা সফলতার দেখা পান। তিনি ট্রাম্পকে পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যেতে রাজি করাতে সফল হন। রাজনৈতিক ও সামরিক গতি বজায় রাখতে তিনি সামরিক বাহিনীকে বহিরাগত সাহায্য ছাড়াই ইরানের ওপর হামলার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। এই নীতি বাক্যটি তিনি প্রায়ই পুনরাবৃত্তি করেন, ‘বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্রের ভাগ্য অপরিচিতদের ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না, এমনকি তারা আমাদের মিত্র হলেও।’
এর পর তেল আবিব গুপ্তহত্যা এবং সাইবার আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। ২০২০ সালে ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহের হত্যাকাণ্ডে একটি বার্তা ছিল, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ কখনও থামেনি। নেতানিয়াহু এই সংঘাতের স্থপতি হিসেবেই রয়েছেন। নাফতালি বেনেট-ইয়ার ল্যাপিড সরকারের অধীনে নেসেটে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পরও তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনেট নেতানিয়াহুর অবস্থানকে সমর্থন করে গেছেন। এভাবে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের দৈনন্দিন রাজনৈতিক জীবনে ইরানবিষয়ক ফাইলটি গেঁথে দিয়েছেন। কোনো প্রধানমন্ত্রী এটি উপেক্ষা করতে পারবেন না।
গুপ্ত হামলা থেকে প্রকাশ্য যুদ্ধ
হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণ তেল আবিবের ভয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। নেতানিয়াহু সরকার একাধিক ফ্রন্টে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং গোপনে ইরানে হামলা চালায় তারা।
তেল আবিব বিশ্বাস করে, ২০১০ সালে ইরানে আঘাত না করে তারা একটি কৌশলগত ভুল করেছিল। এখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরও বেশি সুরক্ষিত এবং এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী। কিছু ইসরায়েলি বিশ্লেষক যুক্তি দেন, যদি তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তাহলে তারা এবং তার মিত্ররা আরও সাহসী হয়ে উঠবে।
বর্তমান যুদ্ধ নেতানিয়াহুর কয়েক দশক ধরে চলা উন্মাদনার চূড়ান্ত পরিণতি। ইসরায়েলি মিডিয়া এখন স্বীকার করছে, অপারেশন ‘লায়নস কারেজ’ ইরানি বিজ্ঞানী, পারমাণবিক স্থাপনা, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) অবকাঠামো এবং সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করে চলছে। কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরও গভীর।
শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের নীলনকশা
ইসরায়েলি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও কৌশলগত পরিকল্পনাকারীদের নথিভুক্ত তথ্য বলছে, ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো ইরানের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন। দেশটির ইসলামী প্রজাতন্ত্র ভেঙে ফেলা, একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতিরোধ অক্ষের অস্তিত্ব মুছে ফেলা। এ ছাড়া ইরানের নেতৃত্বের ওপর হামলা এবং জ্বালানি তেল অবকাঠামোর ওপর আক্রমণের মাধ্যমে দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা উস্কে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলো বিশাল, তবে তেল আবিব এটিকে একটি ঐতিহাসিক সূচনা হিসেবে দেখছে।
এটি আর ছায়াযুদ্ধ নয়। প্রথমবারের মতো, ইসরায়েল প্রকাশ্যে ইরানি ভূখণ্ডের গভীরে আক্রমণ করেছে। তেহরানও সরাসরি হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে। পশ্চিমা শক্তিগুলো দেশটিকে রক্ষা করার জন্য ছুটে এসেছে।
ইসরায়েল বাজি ধরছে, তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে ভেঙে ফেলতে পারে এবং আগামী কয়েক দশক ধরে পশ্চিম এশিয়ার শক্তির সমীকরণ নতুন করে লিখতে পারে।
তবে হিসাবটি এত সরল নয়। কারণ, ইরান এখনও বিচ্ছিন্ন নয়। নেতানিয়াহু হয়তো অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভুগছেন। প্রতিরোধ অক্ষ হিজবুল্লাহ থেকে হুতি এবং ইরাকি ছোট ভোট উপদল পর্যন্ত তেহরানের সঙ্গে একত্রিত হয়েছে। এই অঞ্চলটি আরও বিস্তৃত সংঘাতের জন্য প্রস্তুত।
নেতানিয়াহু একটি জানালা দেখতে পাচ্ছেন। তেহরান কেবল একটি নয়, বরং অনেকগুলো সীমারেখা অতিক্রম করতে দেখছে। পশ্চিম এশিয়ার বাকি অংশ এমন একটি যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছে, যা মানচিত্রটি নতুন করে আঁকতে পারে।