ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুতা যায় সারা দেশে, ঈদে ৭০ কোটি টাকা বিক্রির আশা
Published: 20th, March 2025 GMT
কেউ সেলাই করছেন, কেউ করছেন আঠা লাগানোর কাজ, কেউ কাটছেন সোল, রং ও ব্লক বসাচ্ছেন কেউ কেউ, আবার কিছু কারিগর মোহর বসাতে ব্যস্ত। পাশেই স্বয়ংক্রিয় মেশিনে কারিগরদের একদল প্লাস্টিকের সোল প্রস্তুত করেছেন। চলছে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। দম ফেলার ফুরসত নেই।
এসব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুতা কারখানার চিত্র। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে জেলার পাদুকাশিল্পের কারিগরেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখানকার জুতা সারা দেশে যায়। এই ঈদ মৌসুমে ১৮ লাখ থেকে ২১ লাখ জোড়া জুতা তৈরি হবে। ৫০ কোটি থেকে ৭০ কোটি টাকার বেচাকেনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেলার জুতা তৈরির ব্যবসায়ীদের সংগঠন ও বিভিন্ন কারখানা সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাতে তৈরি ও মেশিনে তৈরি—দুই ধরনের জুতার কারখানা আছে। মেশিনে তৈরির জুতার কারখানাকে বলা হয় পিও ফুটওয়্যার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পিও ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় জেলায় পিও ফুটওয়্যারের কারখানা ৩৮টি। আর হাতে তৈরির জুতা কারখানা আছে ২০ থেকে ২৫টি। এসব কারখানায় ৫–৬ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিদিন গড়ে এসব কারখানায় প্রায় সোয়া এক লাখ জোড়া জুতা তৈরি হয়। এক জোড়া জুতার পাইকারি মূল্য সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা। সে হিসাবে জেলায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় পৌনে ২ কোটি থেকে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার জুতা তৈরি হয়।
কারখানায় উৎপাদিত জুতার পাইকারি মূল্য ২৬০ থেকে ৩৫০ টাকা। জুতার গুণগত মানে তাঁরা আপসহীন। এ জন্যই সারা দেশে এই জুতা যায়।ফারুক ওসমান, নিউ চায়না ফুটওয়্যারের মালিকএই এক মাসে ১৮ লাখ থেকে ২১ লাখ জোড়া জুতা তৈরি হবে, যা ৫২ কোটি থেকে ৭৩ কোটি টাকায় বিক্রি করা হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এসে জুতা দেখে কাভার্ড ভ্যানে করে নিয়ে যান।
শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলা শহরতলির পীরবাড়ি ও সদর উপজেলার শরীফপুর এলাকায় অবস্থিত সেভেন স্টার পিও ফুটওয়্যার, নিউ চায়না ফুটওয়্যার, ইনটেক্স পিও ফুটওয়্যার, গ্র্যান্ড পিও ফ্যাশন ফুট, ভরসা সুজের কারখানায় কারিগরদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।
এবার ৫০ কোটি থেকে ৭০ কোটি টাকার বেচাকেনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ও ফ টওয় য র ব র হ মণব ড় য়
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।