বাবার দেশ নয়, মায়ের দেশের হয়ে খেলবেন বুফনের ছেলে
Published: 20th, March 2025 GMT
লাইবেরিয়ার কিংবদন্তি জর্জ উইয়াহর ছেলে টিমোথি উইয়াহ খেলেন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে। ব্রাজিলের সাবেক লেফটব্যাক মার্সেলোর ছেলে স্পেনের বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়। ব্রাজিলের সাবেক ডিফেন্ডার মাজিনিওর ছেলে থিয়াগো আলকানতারা খেলেছেন স্পেনের জার্সিতে। সাবেক সেনেগালিজ স্ট্রাইকার সুলেমান সানের ছেলে লিরয় সানে জার্মানির উইঙ্গার। বাবা এক দেশের জাতীয় দলে ও ছেলের আরেক দেশের জাতীয় দলে খেলার আরও উদাহরণ আছে। লুইস বুফন হাঁটছেন সে পথেই।
আরও পড়ুনইয়ামালের রোজা রেখে খেলায় আপত্তি নেই স্পেন কোচের১ ঘণ্টা আগেনামেই পরিষ্কার, লুইস বুফনের শিকড় কে। সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলকিপার জিয়ানলুইজি বুফন। ইতালির সাবেক এই গোলকিপারের ছেলে লুইস বাবার মতো পোস্টের নিচে দাঁড়াননি। তিনি হয়েছেন উইঙ্গার। পার্থক্য আছে আরও। বুফন যেমন তাঁর জন্মভূমি ইতালির গোলপোস্ট আগলেছেন, লুইস সে পথে হাঁটতে চান না। চেক প্রজাতন্ত্রের জাতীয় দলে খেলতে চান লুইস। ১৭ বছর বয়সী এ উইঙ্গারের মা অ্যালেনা সেরেদোভার বাড়ি চেক প্রজাতন্ত্রে। ১৯৯৮ সালে মিস চেক রিপাবলিক খেতাবজয়ী সেরেদোভা সে বছর মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করে শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নেন।
চলতি মাসের শুরুতে সিরি ‘বি’র দল পিসার হয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক লুইসের। পার্মা, জুভেন্টাস ও ইতালি দলে বুফনের সাবেক সতীর্থ ‘সুপার পিপ্পো’খ্যাত ফিলিপ্পো ইনজাঘি পিসার কোচের দায়িত্বে। তাঁর হাত ধরেই পেশাদার ফুটবলের সিনিয়র পর্যায়ে অভিষেক লুইসের। পর্তুগালে একটি টুর্নামেন্ট সামনে রেখে চেক প্রজাতন্ত্রের অনূর্ধ্ব-১৮ দলের অনুশীলনে যোগ দিতে প্রাগে পৌঁছেছেন লুইস।
চেক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে (এফএসিআর) দেওয়া সাক্ষাৎকারে লুইস বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চেক প্রজাতন্ত্রের হয়ে খেলা আমার ক্যারিয়ার ও উন্নতির জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। মা তো এমনিতেই খুব খুশি। বাবাও রোমাঞ্চিত। কারণ, জাতীয় (বয়সভিত্তিক) দলে এই প্রথম ডাক পেয়েছি। বাবাও আমাকে চেক প্রজাতন্ত্রের হয়ে খেলার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, আমার জন্য খেলোয়াড় হিসেবে বেড়ে ওঠার এটাই সেরা পথ।’
আরও পড়ুনমেসি–দিবালার পর চোট কেড়ে নিল মার্তিনেজকেও, আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে খেলবেন কারা২ ঘণ্টা আগেচেক প্রজাতন্ত্রের অনূর্ধ্ব-১৮ দলের অনুশীলনে গত ফেব্রুয়ারিতে ডাক পান লুইস। এখন তিনি স্কোয়াডে জায়গা করে নেওয়ার অপেক্ষায়। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচ আছে চেক অনূর্ধ্ব-১৮ দলের। মায়ের দেশ চেক প্রজাতন্ত্র হলেও লুইস জানিয়েছেন, এই দেশের ভাষা শিখতে বেশ সমস্যা হচ্ছে তাঁর, ‘চেক ভাষায় খুব ভালো কথা বলতে পারি না। কিন্তু যখন বুঝলাম এখানে আসতে পারি, ঠিক তখন থেকেই ভাষা শিখতে শুরু করি। প্রতিদিন ডুয়োলিঙ্গোয় (ভাষা শেখার ওয়েবসাইট) ১০ মিনিট করে কাটাই।’
লুইসের জন্ম ইতালির তুরিনে। বেড়ে ওঠাও ইতালিতে। চেক প্রজাতন্ত্রের হয়ে খেললে ভবিষ্যতে তো ইতালির মুখোমুখি হতে হবে। তখন কেমন লাগবে তাঁর? উত্তর শুনুন লুইসের মুখেই, ‘আমার জন্ম ইতালিতে। বেড়ে ওঠাও সেখানে। কিন্তু শতভাগ পেশাদার হতে চাইলে প্রতিটি ম্যাচকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। সেটা হোক ইতালি কিংবা অন্য কোনো জাতীয় দলের বিপক্ষে।’
ইতালির হয়ে ২০০৬ বিশ্বকাপ জিতেছেন লুইসের বাবা জিয়ানলুইজি বুফন। জুভেন্টাসের হয়ে জিতেছেন ১০টি সিরি ‘আ’ শিরোপা। ২০১১ সালে প্রাগে সেরেদোভাকে বিয়ে করেন বুফন। তিন বছর পর বিচ্ছেদ হয় তাঁদের মধ্যে। লুইসের আরেক ভাইয়ের নাম ডেভিড লি। যুক্তরাষ্ট্রের রক ব্যান্ড ফন হেলেনের গায়ক ডেভিড লি রথের নামে ডেভিড লির নাম রাখেন বুফন। লুইস বুফনের পুরো নাম লুইস টমাস বুফন। বুফন সিনিয়র ছেলের নাম রেখেছেন নিজের আদর্শ ক্যামেরুনের সাবেক গোলকিপার টমাস এন কোনোর নামে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।