লাইবেরিয়ার কিংবদন্তি জর্জ উইয়াহর ছেলে টিমোথি উইয়াহ খেলেন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে। ব্রাজিলের সাবেক লেফটব্যাক মার্সেলোর ছেলে স্পেনের বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়। ব্রাজিলের সাবেক ডিফেন্ডার মাজিনিওর ছেলে থিয়াগো আলকানতারা খেলেছেন স্পেনের জার্সিতে। সাবেক সেনেগালিজ স্ট্রাইকার সুলেমান সানের ছেলে লিরয় সানে জার্মানির উইঙ্গার। বাবা এক দেশের জাতীয় দলে ও ছেলের আরেক দেশের জাতীয় দলে খেলার আরও উদাহরণ আছে। লুইস বুফন হাঁটছেন সে পথেই।

আরও পড়ুনইয়ামালের রোজা রেখে খেলায় আপত্তি নেই স্পেন কোচের১ ঘণ্টা আগে

নামেই পরিষ্কার, লুইস বুফনের শিকড় কে। সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলকিপার জিয়ানলুইজি বুফন। ইতালির সাবেক এই গোলকিপারের ছেলে লুইস বাবার মতো পোস্টের নিচে দাঁড়াননি। তিনি হয়েছেন উইঙ্গার। পার্থক্য আছে আরও। বুফন যেমন তাঁর জন্মভূমি ইতালির গোলপোস্ট আগলেছেন, লুইস সে পথে হাঁটতে চান না। চেক প্রজাতন্ত্রের জাতীয় দলে খেলতে চান লুইস। ১৭ বছর বয়সী এ উইঙ্গারের মা অ্যালেনা সেরেদোভার বাড়ি চেক প্রজাতন্ত্রে। ১৯৯৮ সালে মিস চেক রিপাবলিক খেতাবজয়ী সেরেদোভা সে বছর মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করে শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নেন।

চলতি মাসের শুরুতে সিরি ‘বি’র দল পিসার হয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক লুইসের। পার্মা, জুভেন্টাস ও ইতালি দলে বুফনের সাবেক সতীর্থ ‘সুপার পিপ্পো’খ্যাত ফিলিপ্পো ইনজাঘি পিসার কোচের দায়িত্বে। তাঁর হাত ধরেই পেশাদার ফুটবলের সিনিয়র পর্যায়ে অভিষেক লুইসের। পর্তুগালে একটি টুর্নামেন্ট সামনে রেখে চেক প্রজাতন্ত্রের অনূর্ধ্ব-১৮ দলের অনুশীলনে যোগ দিতে প্রাগে পৌঁছেছেন লুইস।

চেক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে (এফএসিআর) দেওয়া সাক্ষাৎকারে লুইস বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চেক প্রজাতন্ত্রের হয়ে খেলা আমার ক্যারিয়ার ও উন্নতির জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। মা তো এমনিতেই খুব খুশি। বাবাও রোমাঞ্চিত। কারণ, জাতীয় (বয়সভিত্তিক) দলে এই প্রথম ডাক পেয়েছি। বাবাও আমাকে চেক প্রজাতন্ত্রের হয়ে খেলার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, আমার জন্য খেলোয়াড় হিসেবে বেড়ে ওঠার এটাই সেরা পথ।’

আরও পড়ুনমেসি–দিবালার পর চোট কেড়ে নিল মার্তিনেজকেও, আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে খেলবেন কারা২ ঘণ্টা আগে

চেক প্রজাতন্ত্রের অনূর্ধ্ব-১৮ দলের অনুশীলনে গত ফেব্রুয়ারিতে ডাক পান লুইস। এখন তিনি স্কোয়াডে জায়গা করে নেওয়ার অপেক্ষায়। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচ আছে চেক অনূর্ধ্ব-১৮ দলের। মায়ের দেশ চেক প্রজাতন্ত্র হলেও লুইস জানিয়েছেন, এই দেশের ভাষা শিখতে বেশ সমস্যা হচ্ছে তাঁর, ‘চেক ভাষায় খুব ভালো কথা বলতে পারি না। কিন্তু যখন বুঝলাম এখানে আসতে পারি, ঠিক তখন থেকেই ভাষা শিখতে শুরু করি। প্রতিদিন ডুয়োলিঙ্গোয় (ভাষা শেখার ওয়েবসাইট) ১০ মিনিট করে কাটাই।’

লুইসের জন্ম ইতালির তুরিনে। বেড়ে ওঠাও ইতালিতে। চেক প্রজাতন্ত্রের হয়ে খেললে ভবিষ্যতে তো ইতালির মুখোমুখি হতে হবে। তখন কেমন লাগবে তাঁর? উত্তর শুনুন লুইসের মুখেই, ‘আমার জন্ম ইতালিতে। বেড়ে ওঠাও সেখানে। কিন্তু শতভাগ পেশাদার হতে চাইলে প্রতিটি ম্যাচকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। সেটা হোক ইতালি কিংবা অন্য কোনো জাতীয় দলের বিপক্ষে।’

ইতালির হয়ে ২০০৬ বিশ্বকাপ জিতেছেন লুইসের বাবা জিয়ানলুইজি বুফন। জুভেন্টাসের হয়ে জিতেছেন ১০টি সিরি ‘আ’ শিরোপা। ২০১১ সালে প্রাগে সেরেদোভাকে বিয়ে করেন বুফন। তিন বছর পর বিচ্ছেদ হয় তাঁদের মধ্যে। লুইসের আরেক ভাইয়ের নাম ডেভিড লি। যুক্তরাষ্ট্রের রক ব্যান্ড ফন হেলেনের গায়ক ডেভিড লি রথের নামে ডেভিড লির নাম রাখেন বুফন। লুইস বুফনের পুরো নাম লুইস টমাস বুফন। বুফন সিনিয়র ছেলের নাম রেখেছেন নিজের আদর্শ ক্যামেরুনের সাবেক গোলকিপার টমাস এন কোনোর নামে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ত য় দল র র হয়

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ