গুলশানে যুবককে গুলি করে হত্যায় ‘সেভেন স্টার গ্রুপ’, অভিযোগ পরিবারের
Published: 21st, March 2025 GMT
গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমনকে গুলি করে হত্যার পেছনে মহাখালী এলাকার ‘সেভেন স্টার গ্রুপের’ সদস্যরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে দাবি তাদের। পুলিশ বলছে, এ বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত করলেও এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে গুলশান ১–এর পুলিশ প্লাজার উত্তর পাশের সড়কে সুমন মিয়াকে (৩৫) গুলি করে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। ওই ঘটনায় সুমনের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে আজ শুক্রবার গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় বলা হয়েছে, সেভেন স্টার গ্রুপের রুবেল ও তাঁর সহযোগীরা এর আগে একাধিকবার সুমনের ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন এবং তাঁকে মারধরও করেছিলেন। ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসার দ্বন্দ্বের জের ধরেই গতকাল রাতে সুমনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী।
মৌসুমী আক্তার প্রথম আলোকে জানান, মহাখালীর টিবি গেট এলাকায় ‘প্রিয়জন’ নামে সুমনের ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা রয়েছে। তিনি মহাখালী এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ দিতেন। আর সেভেন স্টার গ্রুপের রুবেলও মহাখালীতে কেব্ল টিভি সংযোগ ও ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা করতেন। ২০২০ সালে করোনার সময় রুবেলের সহযোগী জামাল, সেন্টু ও আফজাল মারধর করে সুমনের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ সময় তাঁরা কয়েক লাখ টাকার ইন্টারনেট লাইনের তার নিয়ে যান।
মৌসুমী আক্তার জানান, ওই ঘটনার পর তৎকালীন গুলশান থানার ওসিকে অনুরোধ করে পুলিশের হস্তক্ষেপে সেই সংযোগ আবার চালু করেছিলেন সুমন। তখন সন্ত্রাসী রুবেলের সহযোগী জামাল ও সেন্টুর নেতৃত্বে মহখালীর টিবি হাসপাতালের গেট এলাকায় সুমনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে তাঁর দুই হাত ভেঙে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় জামালসহ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করলেও পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করেনি। পরে তাঁরা জামিনে মুক্ত হন। পরে আফজাল, শফিক, বিন্দু ও সেন্টু কয়েকবার সুমনকে মারধর করেন। এরপর টিবি হাসপাতাল এলাকার বাসা ছেড়ে দিয়ে এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁরা ভাষানটেকের একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। সুমনের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায়। তাঁর বাবার নাম মাহফুজুর রহমান।
মৌসুমী আক্তার বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর সালোয়ার কামিজ তৈরির জন্য গুলশান ১–এর পুলিশ প্লাজার কাছে গিয়েছিলেন সুমন। সেখান থেকেই হয়তো তাঁকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে সুমনের শ্বশুর আক্তার শেখ প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে রুবেলের এক সহযোগীকে অস্ত্রসহ পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছিলেন সুমন। তার পর থেকে রুবেল বাহিনী তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। রুবেল বাহিনী কয়েকবার সুমনকে মারধর করে, আবার তাঁর বিরুদ্ধেই থানায় মামলা দিয়েছিল। তারা সম্প্রতি সুমনকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের গুলশান বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো.
নিহত সুমনের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজি ও মারামারির অভিযোগে গুলশান, বনানী ও বাড্ডা থানায় ছয়-সাতটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স মন স মন র স মনক গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।
শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন:
বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’
শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’
চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’
ঢাকা/রাজীব