বাদীর ভুলে শিশু ধর্ষণ মামলায় নির্দোষ ব্যক্তির সাজা
Published: 22nd, March 2025 GMT
শিশু ধর্ষণ মামলার বাদীর ভুলে এক আয়ুবের সাজা ভোগ করছেন আরেক আয়ুব আলী। জাতীয় পরিচয়পত্রে দুজনের নামই মো. আয়ুব আলী। তবে মা ও বাবার নামে কোনো মিল নেই।
তাদের একজনের বিরুদ্ধে শিশু অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। ওই মামলার এজাহারে একটি ভুল করেন বাদী। আসামি আয়ুবের বাবার ভুল নাম উল্লেখ করেন তিনি। ভুল নামটি আবার মিলে যায় আয়ুবের বাবার নামের সঙ্গে। বাদীর সেই ভুলের খেসারত দিচ্ছেন নিরপরাধ আয়ুব। ওই মামলায় সাজা ভোগ করছেন তিনি।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি হয়েছিল ২০১৭ সালের ৪ জুন, পাবনার সুজানগর থানায়। অভিযোগটি ছিল, পঞ্চম শ্রেণির এক শিশুকে অপহরণের পর ধর্ষণ। মামলায় মাগুরা পৌরসভার মো.
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই মামলার রায় দেন পাবনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে আয়ুবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অন্য দুই আসামিকে খালাস দেন আদালত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসামি ও বাবার নামে মিল থাকায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মূল আসামির বদলে মাগুরা পৌরসভার নিজনান্দুয়ালীর বাসিন্দা তেজপাতা ব্যবসায়ী মো. আয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি পাবনা জেলা কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।
আসামি আয়ুবের বাবার নাম মো. যদন আলী খান হলেও ভুল করে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল ওমেদ শেখ। স্থানীয় সূত্র জানায়, যদন আলী খানদের মূল বাড়ি জেলার মহম্মদপুর উপজেলার ঘুল্লিয়া গ্রামে। তবে দীর্ঘদিন তার ছেলে আয়ুব আলী পৌরসভার নিজনান্দুয়ালীর কাটাখালী আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা ছিলেন।
বছর চারেক আগে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশে জায়গা কিনে বাড়ি করেছেন। ওই একই আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকটি ঘর ব্যবধানে থাকতেন বর্তমানে কারাগারে থাকা আয়ুব আলীর বাবা মো. ওমেদ আলী ওরফে ওমেদ শেখ।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল আয়ুব তার (বাদী) পাবনার সুজানগর থানা এলাকার বাড়িতে যান। সেদিন সকাল ১০টার দিকে স্কুলে যাওয়ার সময় তার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ৭ এপ্রিল মেয়েটি বাড়ি ফিরে জানায় আয়ুব তাকে ধর্ষণ করেছে। ঘটনার প্রায় ২ মাস পর ওই বছরের ৪ জুন মামলা করেন শিশুটির মা।
আয়ুব আলীর ছেলে মো. শিমুল শেখ গত ১৩ মার্চ বলেন, “আমার বাবার নামে এমন মামলা কখনই হয়নি। মামলার বাদী, ভুক্তভোগী তাদের কাউকেই আমরা চিনি না। এই মামলার আসামি অন্য ব্যক্তি। পুলিশ ভুল করে আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।”
মামলার নথিতে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ২১ জুন এই মামলায় মো. আয়ুব আলী খান নামের একজন গ্রেপ্তার হন। ওই সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক এ কে এম শফিকুল আলম আদালতে দেওয়া নথিতে উল্লেখ করেন, মামলার এজাহারে আসামির বাবার নাম ভুল রয়েছে। ২০২১ সালের ২১ মার্চ তার জামিন হয়। জামিননামায় ওই ব্যক্তির বাবার নাম লেখা হয় মো. যদন আলী খান। স্থানীয় জামিনদার হিসেবে তার জামিননামায় স্বাক্ষর করেন তার ছেলে সাগর খান।
জানতে চাইলে মামলার বাদী গত শনিবার বিকেলে মোবাইলফোনে জানান, তিনি মামলা করেছিলেন আয়ুবের নামে। আসামি তার দূরসম্পর্কের আত্মীয়। আসামি অনেক দিন জেল খেটে জামিন পেয়েছেন। কয়েক দিন আগে তিনি শুনেছেন পুলিশ আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি নাকি আসল আয়ুব নন। তবে তিনি এ বিষয়ে সঠিক কিছু জানেন না।
আসামি আয়ুব আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তারা দুজনই ওই মামলায় আয়ুব আলীর আসামি হওয়া এবং প্রায় দুই বছর কারাগারে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্বামী কোথায়- জানতে চাইলে আয়ুব আলীর স্ত্রী বলেন, “একটু আগেও বাড়িতে ছিলেন। এখন বাড়ির বাইরে গেছেন।”
তিনি আরো বলেন, “পারিবারিক বিরোধের জেরে আমার বাবার অন্য পক্ষের মেয়ের শাশুড়ি ষড়যন্ত্রমূলক এই মামলা করে। আমার স্বামী ওসব কিছুই করেনি। পুরো ঘটনা বানোয়াট, সাজানো।”
কারাগারে থাকা মো. আয়ুব আলীর আইনজীবী মো. মাহবুবুল আকবর বলেন, “মামলার এজাহারে আসামির বাবার নামে ভুল থাকলেও জামিননামায় তার আসল বাবার নাম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই আসামির বাবার নাম ভুল লিখেই অভিযোগপত্র দেন। এই গাফিলতির কারণে আসল আসামির বদলে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে জেল খাটতে হচ্ছে।”
পাবনা সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবর রহমান মোবাইলফোনে জানান, কিছুদিন আগে তিনি সুজানগর থানায় যোগ দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি তার জানা থাকার কথা নয়। এটা এখন আদালতের বিষয়। তবে তিনি এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেবেন বলে জানান।
ঢাকা/শাহীন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স জ নগর থ ন আয় ব র
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫