গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, “বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন এসেছে, সেই পরিবর্তনে এমন কিছু গোষ্ঠী তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা নারীর উপর নির্যাতন চালাচ্ছে, সংখ্যালঘুর উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। মানুষের নিরাপত্তা যে ব্যবস্থা, সেই ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”

শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ছাত্র জনতার চার দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তাদের চার দফা দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে জুলাই গণহত্যার তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন; সারাদেশে অব্যাহত নারী-শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে ১২ ছাত্রনেতার নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর অপসারণ; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় নারী শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার; মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত, সাইবার সুরক্ষা আইন বাতিল করতে হবে।

আরো পড়ুন:

যে নৌকা চলে গেছে, তা ফিরিয়ে আনা যাবে না: আখতার

ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদ ও জুলাই গণহত্যার বিচার দাবি ছাত্রপক্ষের

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যাত্রায় প্রধান ভূমিকা থাকার কথা শ্রমিকের, কৃষকের, শিক্ষার্থীর, শিক্ষকের, নারীর, আদিবাসী জনতার। কিন্তু আমরা দেখছি, পরিস্থিতি এমন তৈরি করা হয়েছে যে, নারীর উপস্থিতি ও সক্রিয়তা কমানোর জন্য কিছু গোষ্ঠী তৎপর হয়ে আছে। তারা নারীর অংশগ্রহণ, সক্রিয়তা, সরব উপস্থিতি এবং নারীর যে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, সাংস্কৃতিক তৎপরতা, সেটাকে থামানোর জন্য চেষ্টা করছে কিছু বৈষম্যবাদী গোষ্ঠী।”

তিনি বলেন, “তারা নারীর সক্রিয়তা, আদিবাসী গোষ্ঠীর পরিচয় পছন্দ করে না। তারা সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বিভাজন তৈরি করে, শাপলা-শাহবাগ তৈরি করে। জনগণের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় বিভাজন তৈরি করে লুটেরা জনগোষ্ঠী যারা গত সরকারের সুবিধাভোগী, তাদের জন্য জায়গা তৈরি করে দেয়। এ ধরনের বৈষম্যবাদী গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদের মধ্যে এ ধরনের লোকজন দেখতে পাচ্ছি। যার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় নারী শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা।”

তিনি আরো বলেন, “ধর্ষণ, নারী নির্যাতন এমন মাত্রা নিয়েছে যে, আজ শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের, ধর্মের, জাতির, ভাষার নারী নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। সংখ্যালঘু মানুষও নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন, সংখ্যাগুরু মানুষও নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন।”

অধ্যাপক বলেন, “যে শ্রমিক জনগোষ্ঠী অভ্যুত্থানের সময় লড়াই করেছেন, তাদের মধ্যে লক্ষাধিক শ্রমিক নতুন করে বেকার হয়েছে গত কয়েক মাসে; কারখানা বন্ধ হয়েছে। সেই কারখানার ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সরকার নেয় নাই। গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বিশ্বব্যাপী খ্যাত প্রতিষ্ঠান, সেই গ্রামীণ ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণীর যারা কর্মচারীরাও সুবিচারের জন্য পথে পথে ঘুরছেন। ৩২ বছর ধরে তাদের কাজ স্থায়ী হয়নি। শ্রমজীবী মানুষ, আদিবাসী নারীরা নিরাপত্তাহীন হলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যাত্রা কীভাবে হবে?”

অধ্যাপক আরো বলেন, “সরকারের দুইটা ভূমিকা আমরা দেখতে পারছি। শ্রমিকরা যখন মজুরি দাবি করছেন কিংবা শিক্ষকেরা যখন তাদের কাজের নিরাপত্তা দাবি করছেন, মেয়েরা যখন ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন করছেন, তার উপরে সরকারের বিভিন্ন রকমের এজেন্সি ভয়ংকর রকম আগ্রাসী হয়ে আক্রমণ করছে। কিন্তু যে সমস্ত গোষ্ঠী ধর্মীয়, লিঙ্গীয়, জাতিগত ও শ্রেণীগত বৈষম্যের পক্ষে দাঁড়ায়, তারা সংঘবদ্ধ হয়ে তৎপরতা ও মব ভায়োলেন্স চালাচ্ছে। তাদের প্রতি সরকার নমনীয় হয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের এ উল্টো যাত্রার নিন্দা করি।”

সমাবেশের পাশেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের দাবিতে মানববন্ধন শেষে স্লোগান দিতে দিতে শাহবাগ ত্যাগ করেন যাতে নাগরিক কমিটির নেতা-কর্মীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আনু মুহাম্মদ বলেন, “কিছুক্ষণ আগে আমরা একটা স্লোগান শুনলাম ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’। আমরা এই স্লোগানকে স্বাগত জানাই। দিল্লির কোনো আধিপত্য বাংলাদেশের চলবে না। দিল্লির যারা অনুচর আছে, তাদের আধিপত্য এখানে চলবে না। কিভাবে এখানে আধিপত্য বিস্তার করে আছে, সেগুলো সুস্পষ্ট করুন। আদানীর যে চুক্তি আছে, তা বাতিল করতে হবে।”

তিনি বলেন, “সুন্দরবন বিনাশী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভারতের প্রকল্প, সেটা বাতিল করতে হবে। ভারতের সঙ্গে ট্রানজিটসহ বিভিন্ন অসম চুক্তি আছে, তা বাতিল করতে হবে। নদীর ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে ভারত, সেই নদী রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক পানি কনভেনশনে স্বাক্ষর করতে হবে। সরকারি কাজগুলো সুনির্দিষ্টভাবে করেনি। ভারত বিরোধিতার আওয়াজ তুলে ভারতের স্বার্থ রক্ষার রাজনীতি যেটা আমরা অতীতে দেখেছি, তার পুনরাবৃত্তি কিংবা অব্যাহত থাকবে, এটা হতে পারে না। আমরা দিল্লির আধিপত্য, ইসলামাবাদ, ওয়াশিংটন, বেইজিং কিংবা মস্কো; কোনো আধিপত্য বাংলাদেশে চলবে না।”

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি জামশেদ আনোয়ার তপনের সভাপতিত্বে ও ঢাবির বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি নুজিয়া হাসিন রাশার সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা রিতু, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, শ্রমিক কর্মচারী পরিষদের সমন্বয়ক শামীম ইমাম প্রমুখ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ত ল করত ম হ ম মদ সরক র র র জন য করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’

অন্তবর্তী সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “বাংলাদেশ বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সবাইকে ধৈর্য ধরে বিচার প্রক্রিয়া, সংস্কার এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সারাদেশ এখন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার অপেক্ষায় রয়েছে।”

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) জাহাঙ্গীরনগর বিবিদ্যালয়ে নির্মিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে, অদম্য ২৪ উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্মিত জুলাইয়ের ভিডিও ও ফটো ডকুমেন্টারি উপভোগ করেন।

আরো পড়ুন:

জবির পরিত্যক্ত ডাস্টবিনগুলো সংস্কার করল ছাত্রদল

রাকসু থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্বে যারা

আদিলুর রহমান খান বলেন, “১ বছর আগে বাংলাদেশে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেই ঐক্যই পারে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে। বিচার প্রশ্নে বলতে চাই কোনো অবস্থাতেই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া সরকার বিচারের ক্ষেত্রে দুর্বলতা স্কোপ রাখবে না। খুব দ্রুতই বেশ কয়েকটি বিচারের কাজ দৃশ্যমান হবে।”

তিনি আরো বলেন, “তরুণ ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি এবং দেশকে বাঁচানোর জন্য জীবন দিয়েছেন। ছাত্র-জনতার মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে। সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে।” এছাড়া স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য-২৪’ বিভাজন ভুলে একাত্ম হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।

সমাপনী বক্তব্যে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “সংঘবদ্ধ আন্দোলনে ৫ আগস্ট আমরা বিজয় অর্জন করেছি। এর মানে এই নয় যে, অন্য যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে আর স্বর আপনারা শুনবেন না। আপনারা দেখবেন, জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা সচেতন এবং কথা বলার ব্যাপারে উন্মুক্ত।”

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এই স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আবার স্মরণ করিয়ে দিলাম, আমরা যদি বাংলাদেশে কোনো অশান্তি দেখি, বৈষম্য দেখি, পরাজয়ের কালো মেঘ দেখি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অদম্য সংগ্রামীরা আবারো তাদের সেই কার্যক্রম শুরু করবে। গোটা বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে, আবার বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে।

অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, উপ -উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব, প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলমসহ জাহাঙ্গীরনগরের সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য দেন।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’
  • তিতুমীর কলেজে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী
  • হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না: নাহিদ 
  • ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
  • নরসিংদীতে আজ এনসিপির পদযাত্রা 
  • ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০ হাজার ছাড়াল
  • পাবিপ্রবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রজেক্ট শো
  • গণহত্যার বিচারের পর পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি রেজাউল করীমের
  • নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পথে নেমেছি: নাহিদ ইসলাম