গণঅভ্যুত্থানের পর কিছু গোষ্ঠী নারীর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে: আনু মুহাম্মদ
Published: 22nd, March 2025 GMT
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, “বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন এসেছে, সেই পরিবর্তনে এমন কিছু গোষ্ঠী তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা নারীর উপর নির্যাতন চালাচ্ছে, সংখ্যালঘুর উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। মানুষের নিরাপত্তা যে ব্যবস্থা, সেই ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ছাত্র জনতার চার দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তাদের চার দফা দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে জুলাই গণহত্যার তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন; সারাদেশে অব্যাহত নারী-শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে ১২ ছাত্রনেতার নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর অপসারণ; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় নারী শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার; মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত, সাইবার সুরক্ষা আইন বাতিল করতে হবে।
আরো পড়ুন:
যে নৌকা চলে গেছে, তা ফিরিয়ে আনা যাবে না: আখতার
ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদ ও জুলাই গণহত্যার বিচার দাবি ছাত্রপক্ষের
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যাত্রায় প্রধান ভূমিকা থাকার কথা শ্রমিকের, কৃষকের, শিক্ষার্থীর, শিক্ষকের, নারীর, আদিবাসী জনতার। কিন্তু আমরা দেখছি, পরিস্থিতি এমন তৈরি করা হয়েছে যে, নারীর উপস্থিতি ও সক্রিয়তা কমানোর জন্য কিছু গোষ্ঠী তৎপর হয়ে আছে। তারা নারীর অংশগ্রহণ, সক্রিয়তা, সরব উপস্থিতি এবং নারীর যে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, সাংস্কৃতিক তৎপরতা, সেটাকে থামানোর জন্য চেষ্টা করছে কিছু বৈষম্যবাদী গোষ্ঠী।”
তিনি বলেন, “তারা নারীর সক্রিয়তা, আদিবাসী গোষ্ঠীর পরিচয় পছন্দ করে না। তারা সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বিভাজন তৈরি করে, শাপলা-শাহবাগ তৈরি করে। জনগণের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় বিভাজন তৈরি করে লুটেরা জনগোষ্ঠী যারা গত সরকারের সুবিধাভোগী, তাদের জন্য জায়গা তৈরি করে দেয়। এ ধরনের বৈষম্যবাদী গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদের মধ্যে এ ধরনের লোকজন দেখতে পাচ্ছি। যার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় নারী শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা।”
তিনি আরো বলেন, “ধর্ষণ, নারী নির্যাতন এমন মাত্রা নিয়েছে যে, আজ শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের, ধর্মের, জাতির, ভাষার নারী নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। সংখ্যালঘু মানুষও নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন, সংখ্যাগুরু মানুষও নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন।”
অধ্যাপক বলেন, “যে শ্রমিক জনগোষ্ঠী অভ্যুত্থানের সময় লড়াই করেছেন, তাদের মধ্যে লক্ষাধিক শ্রমিক নতুন করে বেকার হয়েছে গত কয়েক মাসে; কারখানা বন্ধ হয়েছে। সেই কারখানার ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সরকার নেয় নাই। গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বিশ্বব্যাপী খ্যাত প্রতিষ্ঠান, সেই গ্রামীণ ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণীর যারা কর্মচারীরাও সুবিচারের জন্য পথে পথে ঘুরছেন। ৩২ বছর ধরে তাদের কাজ স্থায়ী হয়নি। শ্রমজীবী মানুষ, আদিবাসী নারীরা নিরাপত্তাহীন হলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যাত্রা কীভাবে হবে?”
অধ্যাপক আরো বলেন, “সরকারের দুইটা ভূমিকা আমরা দেখতে পারছি। শ্রমিকরা যখন মজুরি দাবি করছেন কিংবা শিক্ষকেরা যখন তাদের কাজের নিরাপত্তা দাবি করছেন, মেয়েরা যখন ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন করছেন, তার উপরে সরকারের বিভিন্ন রকমের এজেন্সি ভয়ংকর রকম আগ্রাসী হয়ে আক্রমণ করছে। কিন্তু যে সমস্ত গোষ্ঠী ধর্মীয়, লিঙ্গীয়, জাতিগত ও শ্রেণীগত বৈষম্যের পক্ষে দাঁড়ায়, তারা সংঘবদ্ধ হয়ে তৎপরতা ও মব ভায়োলেন্স চালাচ্ছে। তাদের প্রতি সরকার নমনীয় হয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের এ উল্টো যাত্রার নিন্দা করি।”
সমাবেশের পাশেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের দাবিতে মানববন্ধন শেষে স্লোগান দিতে দিতে শাহবাগ ত্যাগ করেন যাতে নাগরিক কমিটির নেতা-কর্মীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আনু মুহাম্মদ বলেন, “কিছুক্ষণ আগে আমরা একটা স্লোগান শুনলাম ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’। আমরা এই স্লোগানকে স্বাগত জানাই। দিল্লির কোনো আধিপত্য বাংলাদেশের চলবে না। দিল্লির যারা অনুচর আছে, তাদের আধিপত্য এখানে চলবে না। কিভাবে এখানে আধিপত্য বিস্তার করে আছে, সেগুলো সুস্পষ্ট করুন। আদানীর যে চুক্তি আছে, তা বাতিল করতে হবে।”
তিনি বলেন, “সুন্দরবন বিনাশী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভারতের প্রকল্প, সেটা বাতিল করতে হবে। ভারতের সঙ্গে ট্রানজিটসহ বিভিন্ন অসম চুক্তি আছে, তা বাতিল করতে হবে। নদীর ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে ভারত, সেই নদী রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক পানি কনভেনশনে স্বাক্ষর করতে হবে। সরকারি কাজগুলো সুনির্দিষ্টভাবে করেনি। ভারত বিরোধিতার আওয়াজ তুলে ভারতের স্বার্থ রক্ষার রাজনীতি যেটা আমরা অতীতে দেখেছি, তার পুনরাবৃত্তি কিংবা অব্যাহত থাকবে, এটা হতে পারে না। আমরা দিল্লির আধিপত্য, ইসলামাবাদ, ওয়াশিংটন, বেইজিং কিংবা মস্কো; কোনো আধিপত্য বাংলাদেশে চলবে না।”
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি জামশেদ আনোয়ার তপনের সভাপতিত্বে ও ঢাবির বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি নুজিয়া হাসিন রাশার সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা রিতু, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, শ্রমিক কর্মচারী পরিষদের সমন্বয়ক শামীম ইমাম প্রমুখ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ত ল করত ম হ ম মদ সরক র র র জন য করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের আলোচনা ও ঐকমত্যের সূচনাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। দলটি বলেছে, আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জনগণ শুধু কথায় নয়, বাস্তবে সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির পদক্ষেপ দেখতে চায়।
শুক্রবার জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
তারা বলেন, এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপ দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত অভিপ্রায় অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, অধ্যাপক ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক ও বিবৃতিতে আগামী বছরের পবিত্র রমজানের আগেই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ এবং তার পূর্বশর্ত হিসেবে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচারের প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জনের ঘোষিত প্রত্যয়ে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গণমানুষের রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাঠামোগত মৌলিক সংস্কার এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচারের ব্যবস্থা। এই বিষয় দুটির দৃশ্যমান অগ্রগতিই কেবল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি রচনা করতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সমাজের শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবীদের মতামত, আকাঙ্ক্ষা ও অংশগ্রহণে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে দ্রুত ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়নের আহ্বান জানায় জেএসডি।