আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না: আখতার হোসেন
Published: 23rd, March 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই এ দেশের মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। একাত্তরের পরে তারা গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিল। এ দেশের মানুষ যে গণতন্ত্র চেয়েছিল– ’১৪, ’১৮ ও ’২৪-এর নির্বাচন– সে গণতন্ত্রের মুখে চুনকালি দিয়েছে। আমাদের চোখের সামনে যারা মারা গেছে, তাদের রক্তের শপথ– আমাদের শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে শনিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এনসিপি ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এদিন একই দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
আখতার হোসেন বলেন, অভ্যুত্থানের সাত মাস হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো বিচারিক কাজ শুরু করেনি। আমরা বলতে চাই, অবিলম্বে লীগের বিচার শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগের নামে কোনো সাংগঠনিক বা রাজনৈতিক কাজ করতে দেওয়া যাবে না। না হলে ছাত্র-জনতা আবার রাজপথে এসে লড়াই করবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিলেন, তাঁকে জীবন দিয়ে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। জামায়াত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে, তাদের নেতাকর্মীকে ফাঁসির মাধ্যমে তা পরিশোধ হয়েছে। এর পর আবার আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হয়েছে; পিলখানা, শাপলা গণহত্যা ও দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। আবারও যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হয়, আপনার-আমার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।
রাজধানীর বকশীবাজারে বিকেলে কারা কনভেনশন সেন্টারে লালবাগ থানা এনসিপি আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে যারাই পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। যদি ক্যান্টনমেন্ট বা ভারত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার পথ করে দিতে চায়, তবে তাদেরও প্রতিহত করা হবে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, ফ্যাসিবাদের দোসরদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কেবল আওয়ামী লীগকেই বিদায় করা হয়নি উল্লেখ করে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে আমরা বলেছিলাম, আওয়ামী লীগ এবং এই ফ্যাসিবাদী ১৫ বছরের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই এক-এগারোর বন্দোবস্ত থেকে। সেই এক-এগারোর বন্দোবস্তের ফলেই কিন্তু আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ক্ষমতা পেয়েছিল। আরেকটি এক-এগারো আমরা কখনও বাংলাদেশে হতে দেব না।
দেশজুড়ে বিক্ষোভ: আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা। তা না হলে সারাদেশ থেকে ঢাকামুখী হয়ে আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ‘ওয়ারিয়রস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশে আহতরা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি প্রত্যাখ্যান করে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে ৬৪ জেলা থেকে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবার ঢাকামুখী হয়ে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা সরকারের নেই’– প্রধান উপদেষ্টা ড.
গণসংহতি আন্দোলন পাবনা জেলার উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও এর রূপরেখা শীর্ষক আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের সাত মাস পার হওয়ার পরও বিচারকাজ এখনও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় এগোয়নি। আওয়ামী লীগের যে নেতৃবৃন্দের নির্দেশে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, অবিলম্বে তার বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে।
আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে এনসিপি। স্থানীয় পৌর মুক্তমঞ্চ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে কিশোরগঞ্জে ‘ওয়ারিয়রস অব জুলাই’ সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল শহরের সরকারি গুরুদয়াল কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মেহেরপুরে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আয়োজনে গতকাল মিছিলটি প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের এক দফা দাবিতে ফেনীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।
এদিকে, গণভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান। গত শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ দাবি জানান। নাসের রহমান লেখেন, গণভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা করা হোক। এই গণহত্যাকারী দলকে কোনো সুস্থ, বিবেকবান ও সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ কখনোই সমর্থন করতে পারে না।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকাল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক; নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ গণহত য র জন ত র স মন এনস প আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই বিপ্লবী মেয়েরা আজ নিরাপদ বোধ করছে না: ফরহাদ মজহার
জুলাই বিপ্লবে সামনে থাকা মেয়েরা আজ নিরাপদ বোধ করছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও কবি ফরহাদ মজহার।
তিনি বলেছেন, “গণঅভ্যুত্থান বলতে আসলে কি বুঝায়, আমাদের সমাজে এর পরিষ্কার ধারণা নেই। সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সামনের সাড়িতে অনেক মেয়ে ছিল। কিন্তু তারা হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেল? তারা আর রাজপথে নেই। কারণ তারা রাজপথে আর নিরাপদবোধ করছে না। আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে রাষ্ট্র আর সরকারের পার্থক্য স্পষ্ট না। ফলে দেশ সামনের দিকে আগাতে পারছে না।”
সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে ‘অভ্যুত্থান: বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর হেরিটেজ স্টাডিজ এ সভার আয়োজন করে।
আরো পড়ুন:
রাবিতে ছড়িয়ে পড়েছে ছোঁয়াচে রোগ ‘স্ক্যাবিস’
রাবির ভর্তি পরীক্ষা: একটি ইউনিটেই ৭৫০ ওএমআর বাতিল
ফরহাদ মজহার বলেন, “১৯৭২ এর সংবিধান আমরা বাতিল করতে চেয়েছিলাম। কারণ, ওই সংবিধান সাধারণ মানুষ প্রণয়ন করেনি। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শক্তি, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যাবস্থা, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ এক হয়ে লড়েছিল। কিন্তু বর্তমান ইন্টেরিম সরকার আমাদের জুলাই ঘোষণাপত্র করতে দেয়নি। আমরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য জুলাই ঘোষণাপত্র ও নতুন গঠণতন্ত্র চাই।”
রাবি রেজিস্ট্রার ও সেন্টার ফর হেরিটেজ স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভার প্রধান অতিথি ছিলেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক প্রমুখ।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী