রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। আয় কমলেও তার বিপরীতে খরচ কমেনি। ফলে ছয় মাসে হোটেলটি অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি লোকসান করেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় হোটেলটির লোকসান বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। হোটেলটির চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক হোটেল চেইন ইন্টারকন্টিনেন্টালের মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিএসএল)। ১৯৮৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। গত সপ্তাহে বিডি সার্ভিসেস চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই–ডিসেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই আর্থিক প্রতিবেদন থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের আয়, ব্যয় ও লোকসানের তথ্য পাওয়া গেছে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই–ডিসেম্বরে কোম্পানিটি আয় করেছে ৬৭ কোটি টাকা। তার বিপরীতে সব ধরনের খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর ডিসেম্বর শেষে হোটেলটির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫১ কোটি টাকা। এ লোকসানের পেছনে বড় কারণ আয় কমে যাওয়া ও ব্যাংকঋণের সুদহার বৃদ্ধি। ২০২৩ সালের জুলাই–ডিসেম্বরে হোটেলটি আয় করেছিল ৯০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পাঁচ তারকা এই হোটেলের আয় ২৩ কোটি টাকা বা প্রায় ২৬ শতাংশ কমে গেছে। আয় কমলেও হোটেলটির খরচ খুব বেশি কমেনি। এ কারণে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছে হোটেলটি।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আগস্টে সরকার বদল ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে হোটেল ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাতে দুই মাসের বেশি সময় তারকা হোটেলগুলোর বড় অংশই ছিল অতিথিশূন্য। জুলাই আন্দোলনে শাহবাগ এলাকা রূপ নিয়েছিল অন্যতম আন্দোলনকেন্দ্রে। এ কারণে আন্দোলনের পুরোটা সময়জুড়ে দেশি–বিদেশি পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছিল শাহবাগ এলাকায় অবস্থিত ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল। এ সময় নানা অনুষ্ঠান আয়োজনও প্রায় বন্ধ ছিল হোটেলটিতে। যার ধাক্কা লেগেছে হোটেলটির আয়ে। সরকার বদলের পর সেপ্টেম্বর–অক্টোবর থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করে। এ কারণে অক্টোবর–ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যবসা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই–ডিসেম্বরের ৬৭ কোটি টাকা আয়ের বিপরীতে হোটেলটির পরিচালন ও প্রশাসনিক ব্যয় ছিল ১২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালন খরচ ছিল ৩৩ কোটি টাকা, হোটেলের প্রশাসনিক খরচ ছিল প্রায় ২২ কোটি টাকা। আর হোটেলের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বিডি সার্ভিসেসের প্রশাসনিক খরচ ছিল প্রায় ৭১ কোটি টাকা, যার বড় অংশই হোটেল পুনঃসংস্কারে নেওয়া ঋণের সুদ বাবদ ব্যয়।

হোটেলসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে এসে ব্যাংকঋণের সুদ বেড়ে যাওয়ায় হোটেলটির সুদ বাবদ খরচও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। সেই তুলনায় আয় বাড়েনি। ফলে লোকসানের পাল্লা ভারী হয়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ২৩ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। অথচ ওই তিন মাসে হোটেলটির পরিচালন ও প্রশাসনিক খরচ বাবদ ব্যয় করতে হয় ৫৭ কোটি টাকা। ফলে ওই তিন মাসেই হোটেলটি ৩০ কোটি টাকা লোকসান করে। তার বিপরীতে অক্টোবর–ডিসেম্বর প্রান্তিকে এসে আগের প্রান্তিকের চেয়ে হোটেলটির আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ কোটি টাকায়। তার বিপরীতে ওই প্রান্তিকে পরিচালন ও প্রশাসনিক খরচ বাবদ ব্যয় করতে হয় ৬৭ কোটি টাকা। গত অক্টোবর–ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে লোকসান দাঁড়ায় ১৮ কোটি টাকা। আর ছয় মাসের হিসাবে এই লোকসান দাঁড়ায় প্রায় ৫১ কোটি টাকায়।

হোটেল ব্যবসা ছাড়া ইন্টারকন্টিনেন্টালের সংলগ্ন এলাকায় ব্যাংকসহ বিভিন্ন অফিসভাড়া বাবদ আয়ও রয়েছে বিএসএলের। গত বছরের জুলাই–ডিসেম্বরে এ খাত থেকে বিএসএল আয় করেছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে এ খাত থেকে কোম্পানিটির আয় ছিল পৌনে ৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক আমানতের সুদ বাবদও আয় বেড়েছে কোম্পানিটির। এই খাত থেকে গত জুলাই–ডিসেম্বরে কোম্পানিটি আয় করেছে ৪ কোটি টাকার বেশি। ২০২৩ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোটেলটির এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই–আগস্টের ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে হোটেল ব্যবসায় বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। তাই জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, পরের তিন মাসে ব্যবসা কিছুটা স্বাভাবিক হলেও আগের তিন মাসের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বড় লোকসান হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম বর প র ন ত ক জ ল ই ড স ম বর ২০২৩ স ল র ত র ব পর ত ছয় ম স শ হব গ পর ম ণ ব যবস বছর র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা

অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।

সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।

স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কর্মস্থলে অনুপস্থিত, পাঁচ প্রকৌশলী ও এক স্থপতি বরখাস্ত
  • গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্
  • বারসিকের গবেষণা: রাজশাহীর ৯৯ ভাগ দোকানেই মিলছে নিষিদ্ধ কীটনাশক
  • মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
  • দলবদলের বাজারে চেলসিই রাজা, শীর্ষ দশে আর কারা
  • গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়ালো
  • আলোচিত ষোড়শী আইনার পারিশ্রমিক কত?
  • গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল: বলছে ইসরায়েলভিত্তিক দুই মানবাধিকার সংস্থা
  • পৃথিবী থেকে ৩৭ কোটি মাইল দূরে থাকা মহাকাশযানের ক্যামেরা যেভাবে মেরামত করেছে নাসা