নোয়াখালী সদর উপজেলার কালাদরাফ ইউনিয়নে একটি মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় হওয়া মামলার বাদীর বাবা, দুই সাক্ষীসহ চারজনের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত আনুমানিক আটটার দিকে ওই ইউনিয়নের ডুবাইর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

হামলার শিকার ব্যক্তিদের দাবি, হামলাকারীরা বাদীর বাবা ও সাক্ষীদের চিকিৎসায় বাধা দেন। তাঁদের কাছ থেকে জোর করে খালি স্ট্যাম্পে সই আদায় করেন।

খবর পেয়ে সুধারাম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে পুলিশ সেখান থেকে কাউকে আটক করতে পারেনি। পরে আহত ব্যক্তিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সুধারাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুক্তার হোসেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মাজার ভাঙচুরের মামলার বাদীর বাবাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া ও বাদীর দুই ফুফাতো ভাইকে মারধরের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ যাওয়ার আগেই হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। তাই হামলায় জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ ফেব্রুয়ারি বেলা আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে কয়েক শ ব্যক্তি কালাদরাফ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সিরতালুক এলাকার শাহ সুফি আইয়ুব আলী দরবেশের মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এ সময় মাজারের সবকিছু গুঁড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। হামলাকারীরা এ মাজারে থাকা খাদেমসহ লোকজনদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করেন। ওই ঘটনায় স্থানীয় জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৪৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর থেকে মামলার আসামিরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ জামাল উদ্দিনের। মুঠোফোনে তিনি বলেন, গতকাল রাত আনুমানিক আটটার দিকে তাঁর বাবা চাঁন মিয়াকে (৬৫) বাড়ির পাশ থেকে তুলে পাশের ডুবাইর বাজারে বিএনপির ক্লাব নামে পরিচিত একটি ঘরে নিয়ে যান একদল লোক। সেখানে তাঁকে মারধর করে মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেন। খবর পেয়ে তাঁর (জালাল উদ্দিন) ফুফাতো ভাই এমরান হোসেন ও মো.

রিয়াদ এবং আরেক আত্মীয় শাহ আলম যান। তখন হামলাকারীরা তাঁদের তিনজনকেও মারধর করে আটকে রাখেন।

জামাল উদ্দিনের অভিযোগ, হামলাকারীরা এ সময় তাঁর বাবা ও ফুফাতো ভাইদের কাছ থেকে জোর করে অলিখিত স্ট্যাম্পে সই আদায় করেন। তাঁরা মামলার সাক্ষী। মারধরের পর তাঁদের চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে যেতে বাধা দেন হামলাকারীরা। বিষয়টি মুঠোফোনে সুধারাম থানার পুলিশকে জানান তিনি। পুলিশ এসে সবাইকে উদ্ধার করলেও হামলার ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করেনি।

মামলার বাদী জামাল উদ্দিনের অভিযোগ, মাজারে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি আরাফাত, আবু নোমান ও দেলোয়ারের নেতৃত্বে একদল লোক গতকাল রাতে তাঁর বাবা ও আত্মীয়দের মারধর করেছেন।

তবে অভিযোগের বিষয়ে আরাফাত হোসেন বলেন, মামলা প্রত্যাহার নিয়ে কোনো ঘটনা ঘটেনি। পাওনা টাকার লেনদেনকে কেন্দ্র করে জামাল উদ্দিনের বাবাসহ আত্মীয়দের সঙ্গে স্থানীয় আরেকটি পক্ষের হাতাহাতি হয়েছে। ওই ঘটনায় তাঁদের ওই পক্ষের তিনজন আহত হয়েছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঘটন য় ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ