নোয়াখালীতে মাজারে হামলার মামলা তুলে নিতে বাদীর বাবাসহ চারজনকে মারধরের অভিযোগ
Published: 2nd, April 2025 GMT
নোয়াখালী সদর উপজেলার কালাদরাফ ইউনিয়নে একটি মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় হওয়া মামলার বাদীর বাবা, দুই সাক্ষীসহ চারজনের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত আনুমানিক আটটার দিকে ওই ইউনিয়নের ডুবাইর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার ব্যক্তিদের দাবি, হামলাকারীরা বাদীর বাবা ও সাক্ষীদের চিকিৎসায় বাধা দেন। তাঁদের কাছ থেকে জোর করে খালি স্ট্যাম্পে সই আদায় করেন।
খবর পেয়ে সুধারাম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে পুলিশ সেখান থেকে কাউকে আটক করতে পারেনি। পরে আহত ব্যক্তিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সুধারাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুক্তার হোসেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মাজার ভাঙচুরের মামলার বাদীর বাবাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া ও বাদীর দুই ফুফাতো ভাইকে মারধরের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ যাওয়ার আগেই হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। তাই হামলায় জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ ফেব্রুয়ারি বেলা আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে কয়েক শ ব্যক্তি কালাদরাফ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সিরতালুক এলাকার শাহ সুফি আইয়ুব আলী দরবেশের মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এ সময় মাজারের সবকিছু গুঁড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। হামলাকারীরা এ মাজারে থাকা খাদেমসহ লোকজনদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করেন। ওই ঘটনায় স্থানীয় জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৪৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর থেকে মামলার আসামিরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ জামাল উদ্দিনের। মুঠোফোনে তিনি বলেন, গতকাল রাত আনুমানিক আটটার দিকে তাঁর বাবা চাঁন মিয়াকে (৬৫) বাড়ির পাশ থেকে তুলে পাশের ডুবাইর বাজারে বিএনপির ক্লাব নামে পরিচিত একটি ঘরে নিয়ে যান একদল লোক। সেখানে তাঁকে মারধর করে মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেন। খবর পেয়ে তাঁর (জালাল উদ্দিন) ফুফাতো ভাই এমরান হোসেন ও মো.
জামাল উদ্দিনের অভিযোগ, হামলাকারীরা এ সময় তাঁর বাবা ও ফুফাতো ভাইদের কাছ থেকে জোর করে অলিখিত স্ট্যাম্পে সই আদায় করেন। তাঁরা মামলার সাক্ষী। মারধরের পর তাঁদের চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে যেতে বাধা দেন হামলাকারীরা। বিষয়টি মুঠোফোনে সুধারাম থানার পুলিশকে জানান তিনি। পুলিশ এসে সবাইকে উদ্ধার করলেও হামলার ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করেনি।
মামলার বাদী জামাল উদ্দিনের অভিযোগ, মাজারে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি আরাফাত, আবু নোমান ও দেলোয়ারের নেতৃত্বে একদল লোক গতকাল রাতে তাঁর বাবা ও আত্মীয়দের মারধর করেছেন।
তবে অভিযোগের বিষয়ে আরাফাত হোসেন বলেন, মামলা প্রত্যাহার নিয়ে কোনো ঘটনা ঘটেনি। পাওনা টাকার লেনদেনকে কেন্দ্র করে জামাল উদ্দিনের বাবাসহ আত্মীয়দের সঙ্গে স্থানীয় আরেকটি পক্ষের হাতাহাতি হয়েছে। ওই ঘটনায় তাঁদের ওই পক্ষের তিনজন আহত হয়েছেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত পাঁচ বিএনপিকর্মী
নোয়াখালীর হাতিয়ায় হামলায় আহত হয়েছেন বিএনপির পাঁচ কর্মী। তাদের মধ্যে চারজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার তমরদ্দি বাজারে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ জন্য একই দলের অন্য নেতার অনুসারীদের দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আহত ব্যক্তিরা হলেন– সোহেল উদ্দিন (৩০), রুবেল (২৫), মো. রনি (২৬), এরশাদ (৩৫) ও পায়েল (২৫)। তাদের বাড়ি তমরদ্দি ইউনিয়নের আঠারোবেকী গ্রামে। আহত সবাই ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তানভীর হায়দারের কর্মী-সমর্থক।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে তমরদ্দি বাজারের একটি চা দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন। এ সময় কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পাঁচজন আহত হন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শিহাব উদ্দিনের ভাষ্য, সবার শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর চিহ্ন রয়েছে। কিছু আঘাত অনেক গভীর। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অনেকের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ জন্য চারজনকে রাতেই হাতিয়ার বাইরে চিকিৎসার পরামর্শ দেন।
ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তানভীর হায়দারের ভাষ্য, মঙ্গলবার ইউনিয়ন বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনীতে আসার পথে হামলায় তাঁর কয়েকজন কর্মী আহত হন। এ ঘটনায় দুটি মামলা হলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। ওই আসামিরাই বৃহস্পতিবারের হামলায় জড়িত। তারা সবাই উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের লোক।
তবে আলমগীর কবিরের দাবি, হামলায় তাঁর কোনো নেতাকর্মী জড়িত ছিলেন না। এমন অভিযোগ সত্য নয়।
হাতিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খোরশেদ আলম বলেন, বিএনপি নেতা তানভীর হায়দার ও আলমগীর কবিরের লোকজনের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাদের বিরোধ অনেক পুরোনো। আগের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।