পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাণের উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু ও বিহু (বৈসাবি) শুরু হবে ১২ এপ্রিল চাকমাদের ফুল বিজুর মধ্যে দিয়ে। এ উৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যে পাহাড়ের গ্রামে-পাড়ায় শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা। উৎসব আমেজে মেতে উঠেছে সবাই।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বৈসাবি উৎসবকে কেন্দ্র করে র্যালি করেছে খাগড়াছড়ি সার্বজনীন বৈসাবি উৎযাপন কমিটি। র্যালিটি শহরের মহাজন পাড়া চেঙ্গী স্কোয়ার থেকে শুরু হয়ে শাপলা চত্বর ঘুরে নিউজিল্যান্ড বৈসাবি মেলা প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন সার্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহবায়ক রবি শংকর তালুকদার।
বৈসাবি র্যালিতে বর্ণিল সাজে শতশত পাহাড়ি নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ অংশ নেন।
বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও নবর্বষের প্রথম দিন চাকমারা বিজু পালন করে থাকেন। প্রথম দিন ফুল বিজু, পরের দিন মূল বিজু অর্থাৎ অতিথি আপ্যায়নের দিন ও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনকে গুজ্জ্যপুজ্জ্য দিন বলা হয়।
এই উৎসবকে পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠি আলাদা আলাদা নামে অভিহিত করে। চাকমারা বলেন বিজু, মারমাদের সাংগ্রাই, ত্রিপুরাদের বৈসু ও তনচংগ্যাদের বিহু এই আদ্যক্ষর নিয়ে বৈসাবি। পাহাড়ের এই উৎসবকে ঘিরে খাগড়াছড়ির গ্রামে, পাড়ায় পাড়ায় চলছে ঘিলা খেলা, নাদেং খেলা, বাঁশ খরম দৌড়, রশি টানাটাানি, ফুটবল, মারমাদের ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা ও ত্রিপুরাদের গরয়া নৃত্যসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। এছাড়াও প্রবীণ ব্যাক্তিদের গোসল করিয়ে পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আর্শীবাদ নেয় তরুণ প্রজন্ম, শিশু কিশোর-কিশোরীরা।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, এই উৎসবটি পাহড়ে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এই দিনটি এলে পাহাড়ের লোকজন আনন্দে মেতে উঠেন। তাই ঐতিহ্য রক্ষায় এই আনন্দ আয়োজন।
খাগড়াছড়ির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক জীতেন চাকমা জানান, খাগড়াছড়ির এই ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে শুরু হয়েছে চারদিন ব্যাপী মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির নাচ, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগীতা, বেইন বুনন (কোমর তাত) প্রতিযোগীতা, ত্রিপুরাদের গরায়া নৃত্য, মারমাদের পানি খেলা, পাজন রান্নাসহ বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পাহাড়ি খাবার।
ঢাকা/রূপায়ন/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।