গাজায় গণহত্যা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে থেমে নেই প্রতিবাদ
Published: 8th, April 2025 GMT
ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান বর্বরতার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সোমবার (৭ এপ্রিল) দিনব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে তাদের এ প্রতিবাদী কর্মসূচি থেমে নেই।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকাল থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে নানা প্রতিবাদী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)
ইসরাইলের লাগাতার বর্বর আগ্রাসন, গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে এবং নির্যাতিত গাজাবাসীর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে মুখে কালো পতাকা বেধে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে রাবি শাখা ছাত্রদল। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তারা এ কর্মসূচি পালন করে।
সর্দার জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী, যুগ্ম আহ্বায়ক এস.
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাবি শিক্ষক সমিতি।
এতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ এবং উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুর রব, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সোহেল রানা, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আইরিন আক্তার প্রমুখ।
অন্যদিকে, একই দাবিতে বেলা ১১টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন জাবি শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিকের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন, শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, যুগ্ম-আহ্বায়ক রায়হান হোসেন মিল্টন,সদস্য তানজিলা বৈশাখী,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
প্রধান ফটকের সামনে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শেখ বাজার প্রদক্ষিণ করে তারা। পরে শেখপাড়া বাজার হয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এসে ফিলিস্তিনিদের দোয়া ও মোনাজাত করেন তারা।
এ কর্মসূচিতে ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাসুদ রুমী মিথুনের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন, ইবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, যুগ্ম-সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, রিপন হোসেন, বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ, আহসান হাবীব, আনারুল ইসলাম, রোকন উদ্দিন, সদস্য সাব্বির হোসেন, রাফিজ আহমেদ, নুর উদ্দিন, উল্লাস, রোকন, সাক্ষর, সাবিক, রিয়াজ, আলিনুর প্রমুখ।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)
দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে গাজায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রবিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শাবিপ্রবি শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানান।
শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন, সভাপতি রাহাত জামান, সাধারণ সম্পাদক নাঈম সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান আশিক, সহ সাধারণ সম্পাদক আবু আফসার মোজাম্মেল, ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক রিমকাতুল রাশেদ অথৈ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান চাঁদ প্রমুখ।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ‘স্টপ জেনোসাইড, সেভ গাজা’ প্রতিপাদ্যে মানববন্ধন করেছেন নোবিপ্রবি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় তারা ‘ফ্রম দ্যা রিভার টু দ্যা সি, ফিলিস্তিন উইল বি ফ্রি’, ‘আমেরিকার আগ্রাসন, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ইসরাইল নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্ত পাক’ ইত্যা স্লোগান দিতে থাকেন।
মানববন্ধনে অন্যদের মাঝে বক্তব্য দেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল, উপ-উপাচার্য ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ, আইন বিভাগের চেয়ারম্যান মো: জামশেদুল ইসলাম প্রমুখ।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)
সোমবার (৭ এপ্রিল) রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল প্রাঙ্গণ ইসরাইল কর্তৃক আগ্রাসন ও বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে সিকৃবি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের মুল সড়ক প্রদক্ষিণ করে টিএসসির সামনে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া করেন।
মিছিলে তারা ‘নারায়ে তাকবীর’, ’আল্লাহু আকবার’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি’, ’প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘ফ্রি ফ্রি গাজা’ প্রভৃতি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটির (আইএসইউ)
ইসরায়েলি আগ্রাসন, নিপীড়ন ও গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির মহাখালী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন আইএসইউ এর শিক্ষার্থীরা।
ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে আইএসইউ শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচিতে যোগদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল আউয়াল খান।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম, আইকিউএসি পরিচালক অধ্যাপক মো. একরামুল হক, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, রেজিস্ট্রার মো. ফাইজুল্লাহ কৌশিক প্রমুখ।
মহাখালী ক্যাম্পাসে আয়োজিত সমাবেশ শেষে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গুলশান ১ প্রদক্ষিণ করে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। মিছিলে শিক্ষার্থীদের হাতে ইসরাইলের আগ্রাসনবিরোধী নানা স্লোগান, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার দেখা যায়।
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপস থ ত ছ ল ন ছ ত রদল র উপ চ র য ম হ ম মদ ল ইসল ম গণহত য ব প রব সদস য এ সময় আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর মাকে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন (২৩) ও তাঁর মা তাহমিনা বেগম (৫২) হত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পৃথক তিনটি স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা।
আজ সোমবার বেলা একটার দিকে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বরে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন তাঁরা। এরপর বেলা তিনটার দিকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
নিহতের সহপাঠী নূর মোহাম্মদ সোহান বলেন, ‘আমাদের সহপাঠী ও তাঁর মায়ের হত্যাকারী একজন ধর্ষক। আমাদের বোনের ওপর সে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও তার মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি। ঘটনার শুরু থেকেই পুলিশের গাফিলতি আমরা লক্ষ করেছি।’
আরেক সহপাঠী মুনিয়া আফরোজ বলেন, ‘আমাদের বান্ধবীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, যা লাশ উদ্ধারের সাত দিন পর জানা গেল। পুলিশ তদন্তে অবহেলা করেছে। আমাদের দাবি, এক সপ্তাহের মধ্যে এই জোড়া খুনের পেছনে আরও বড় কোনো শক্তি আছে কি না, তা সুষ্ঠু তদন্ত করে উন্মোচন করতে হবে। মামলা বিশেষ আদালতে হস্তান্তর করতে হবে। ধর্ষকের সুষ্ঠু বিচার ও ফাঁসি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’
সাইফুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের সহপাঠী সুমাইয়া ও তাঁর মায়ের হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড কে, তা বের করতে হবে পুলিশকে। এর পেছনে সুমাইয়ার পরিবারের কেউ জড়িত আছে কি না, সেটিও তদন্ত করতে হবে।’
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, প্রথমে পুলিশ বলেছিল, সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় এবং তা দেখে ফেলার কারণে তাঁর মাকে হত্যা করা হয়। পরে জানা যায়, কবিরাজ মোবারক হোসেন সুমাইয়াকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছেন। এ ছাড়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশে গড়িমসি হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। দ্রুত প্রতিবেদন প্রকাশ ও মামলাটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে হত্যাকারীর ফাঁসি কার্যকর করার দাবি জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, ‘স্মারকলিপিটি পেয়েছি। রাষ্ট্রের কাজ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিষয়টি আমরা দেখব।’
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান জানান, ‘আমরা তদন্ত করছি। আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে কুমিল্লা নগরের কালিয়াজুরি এলাকার ভাড়া বাসা থেকে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে নিহত তাহমিনা বেগম সুজানগর এলাকার প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্ত্রী। তাঁর মেয়ে সুমাইয়া আফরিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ঘটনার সময় তাঁরা বাসায় একা ছিলেন। ৭ সেপ্টেম্বর রাতে তাহমিনা বেগমের দুই ছেলে বাসায় ফিরে হত্যার বিষয়টি টের পান। পরদিন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন তাহমিনা বেগমের বড় ছেলে মো. তাজুল ইসলাম। সেদিনই পুলিশ কবিরাজ মোবারক হোসেনকে (২৯) গ্রেপ্তার করে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং ওই দিন রাতেই তাঁকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হন।