‘চূড়ান্ত হয়নি ১০৪৮৭ হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া, এজেন্সির অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না’
Published: 8th, April 2025 GMT
কোনো হজ এজেন্সির অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা সরকার বরদাস্ত করবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিয়ে ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, “হজ এজেন্সির কমিটমেন্ট ও দায়বদ্ধতার অভাবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বাড়ি ভাড়া এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় ১০ হাজার ৪৮৭ হজযাত্রীর হজযাত্রা নিয়ে শঙ্কিত ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে মক্কায় ৭ হাজার ২৭৪ জন এবং মদিনায় ৩ হাজার ২১৩ জন হজযাত্রী রয়েছেন।”
হজের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা বলেন, “সর্বশেষ ৭ এপ্রিল আমার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে জুম প্ল্যাটফর্মে সভা করেন। এজেন্সির দেওয়া তথ্য অনুসারে, ৮ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মক্কায় ১ হাজার ১২৬ জন এবং মদিনায় ১ হাজার ৬৭ জন হজযাত্রীর নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে হোটেল ও বাড়ি ভাড়ার রিকোয়েস্ট এখনও সাবমিট করা হয়নি।”
আরো পড়ুন:
দুই পরিবার একসঙ্গে ঈদ করব: মেহজাবীন
হজযাত্রী প্রতিস্থাপন ১৮ এপ্রিলের মধ্যে
“বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১ হাজার ৯০০ জন হজযাত্রীর মধ্যে আজ দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মক্কায় ৭৪ হাজার ৬২৬ জন ও মদিনায় ৭৮ হাজার ৬৮৭ জনের বাড়ি ভাড়া নিশ্চিত হয়েছে। মক্কায় ৭ হাজার ২৭৪ জন এবং মদিনায় ৩ হাজার ২১৩ জনসহ মোট ১০ হাজার ৪৮৭ জন হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া এখনও চূড়ান্ত হয়নি,” বলেও জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “আমার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হজ এজেন্সিগুলোকে অব্যাহতভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাড়ি ভাড়ার রিকোয়েস্ট সাবমিট করার জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত এরূপ এজেন্সির সংখ্যা ছিল ২১। কিন্তু এখন সেটা ৯টিতে নেমে এসেছে। বাড়ি ভাড়া চুক্তি সম্পাদন করেনি এমন এজেন্সিগুলোকে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।”
উপদেষ্টা বলেন, “সৌদি সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসারে আগামী ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সব হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উল্লিখিত সময়ের মধ্যেই সব হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার জন্যও আমরা হজ এজেন্সিসমূহকে চিঠি দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “আমরা সব এজেন্সিকে অনুরোধ জানাব তারা যেন হজযাত্রীদের হজ পালনের স্বার্থে সৌদি সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাড়ি ভাড়ার রিকোয়েস্ট সাবমিট ও উক্ত রিকোয়েস্ট অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীদের সৌদি গমনের ক্ষেত্রে আশঙ্কা থেকে যায়।”
কতিপয় হজ এজেন্সির কমিটমেন্ট ও দায়বদ্ধতার অভাবে এখনও বেসরকারি মাধ্যমের ১০ হাজার ৪৮৭ হজযাত্রীকে নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন জানিয়ে খালিদ হোসেন বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, কোনো এজেন্সির অবহেলার কারণে একজন হজযাত্রীও যদি হজ করতে না পারেন, সে দায় সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নিতে হবে। এ দায় কোনভাবেই ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বহন করবে না। কোনো এজেন্সির অবহেলা ও দায়িত্বহীনতাকে ধর্ম মন্ত্রণালয় বরদাস্ত করবে না।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হজ স দ আরব ইসল ম প ল য টফর ম ন হজয ত র হজয ত র র মদ ন য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা