Samakal:
2025-08-01@17:51:34 GMT

গোসল যখন থেরাপি

Published: 8th, April 2025 GMT

গোসল যখন থেরাপি

সারাদিন কেমন যায় আপনার? ঘুম থেকে উঠে দৌড়, কাজ, লোকজন, ফোন, চিন্তা! দিনশেষে নিজেকে একটু সময় দেওয়া কি হয়? আমরা নিজেদের এতটাই ব্যস্ত করে ফেলেছি যে, নিজের শরীর-মনের খবর নেওয়ারও সময় পাই না। অথচ খুব সাধারণ একটা কাজ–গোসল–এটিই হতে পারে আপনার ছোট্ট একটি থেরাপি। 
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। একটু যত্ন নিয়ে গোসল করলে সেটি শুধু শরীর পরিষ্কার করা নয়, বরং মানসিক প্রশান্তির চর্চা হয়ে ওঠে। 
গোসলকে থেরাপি বলার কারণ
ব্যস্ত শহরের দমবন্ধ করা দিন, টানা কাজের ক্লান্তি, সম্পর্কের টানাপোড়েন, মানসিক উদ্বেগ–সব মিলিয়ে আমরা এমন একটি সময় পার করছি, যেখানে একটু নিজের সঙ্গে সময় কাটানো যেন বিলাসিতা। অথচ একটুখানি সচেতনতা এবং কিছু ছোট প্রস্তুতিতে ঘরোয়া গোসলের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় একরকম প্রশান্তি, এক ধরনের নিরাময়। 
গবেষণা বলছে, হালকা গরম পানিতে বিভিন্ন এসেনসিয়াল অয়েল মিশিয়ে গোসল করলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন ‘কর্টিসল’-এর মাত্রা কমে যায়। এতে করে মস্তিষ্কের উত্তেজনা কমে, রক্ত সঞ্চালন ঠিক হয়, ঘুম ভালো হয় এবং মানসিক চাপ ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকে। 
অনেক সময় আমরা যা বলতে পারি না, তা যেন পানির নিচে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেওয়ার মধ্যে একটু একটু করে গলে যায়। 
বিশেষ করে যখন আপনি গোসলের সময়কে শুধু ‘শরীর ধোয়ার সময়’ না ভেবে একটু নিজের মতো করে সাজিয়ে নেন, তখন সেটি আর সাধারণ গোসল থাকে না। সেটি হয়ে ওঠে নিজেকে জড়িয়ে ধরার, হালকা হবার, আবার নতুন করে জেগে ওঠার সময়। 
কখন এ গোসল সত্যি প্রশান্তি এনে দিতে পারে? 
হ্যাঁ, নির্দিষ্ট কিছু সময় টার্গেট করে আপনি দিতে পারেন প্রশান্তির এই গোসল! বিশেষ করে–
যখন আপনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। 
টানা কাজে ক্লান্ত হয়ে গেছেন। 
ঘুম আসছে না, মন অস্থির হয়ে আছে। 
সম্পর্কের টানাপোড়েনে নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন। 
শুধু একাকী কাটানো ভালো সময় খুঁজছেন নিজের জন্য। 
এ সময়গুলোতে ১৫-৩০ মিনিটের গোসল হতে পারে আপনার নিজের সঙ্গে একটি নীরব থেরাপি সেশন। 
চাইলে এমন গোসল আপনি ঘরে করতে পারেন! 
নিচে দিলাম গোসলের একটি রেসিপি। ঠিক রান্নার মতো, শুধু খাওয়ার জন্য নয়, শান্তির জন্য। 
গোসলের রেসিপিতে যা যা লাগবে–হালকা গরম পানি, এসেনসিয়াল অয়েল (যেমন- ল্যাভেন্ডার, ইউক্যালিপটাস, চন্দন), হার্বাল সাবান, মোমবাতি বা হালকা আলো, লুফা বা স্ক্রাবার, হালকা কোনো মিউজিক, তোয়ালে, ময়েশ্চারাইজার, এক কাপ গরম লেবু-চা বা গ্রিন টি 
প্রক্রিয়া: 
১.

গোসলের আগে মোবাইল বন্ধ রাখুন, ৩০ মিনিট পুরো নিজেকে দিন। 
২. মোমবাতির আলোতে বা হালকা আলোতে গোসল শুরু করুন। পাশাপাশি শুকনো কোনো স্থানে আপনার ফোনে বাজিয়ে দিন হালকা মিষ্টি গানের সুর! 
৩. বাথটাবের পানিতে আপনার প্রিয় এসেনসিয়াল অয়েল-এর কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে নিন। চাইলে এর পরিবর্তে দিতে পারেন লেবু, কমলা বা জাম্বুরার কয়েকটি বড় করে কাটা টুকরো। গরম পানিতে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে কিছু গভীর শ্বাস নিন। 
৪. ধীরে ধীরে পুরো শরীরে হার্বাল সাবান মাখুন। স্ক্রাবার দিয়ে আলতো করে শরীরের সর্বত্র ঘষে নিন। মাথার তালুতে লম্বা সময় ধরে দু’হাতের আঙুল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। 
৫. শেষে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল শেষ করুন। 
৬. তোয়ালে দিয়ে গা মুছে, শরীরে হালকা সুগন্ধি বা লোশন লাগিয়ে চা নিয়ে কিছুক্ষণ ব্যালকনিতে চুপচাপ বসে থাকুন।
বিশেষ টিপস 
ছেলেদের জন্য–
চুলে একটু গরম তেল ম্যাসাজ করে রাখলে মাথা ঠান্ডা থাকে। 
দাড়ি থাকলে ল্যাভেন্ডার ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। 
বডি স্প্রে বা আফটারশেভ লাগালে সারাদিন ফ্রেশ লাগবে। 
মেয়েদের জন্য– 
চুলে অলিভ অয়েল দিয়ে গরম তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখলে চুল মসৃণ হয়। 
হাত-পায়ে স্ক্রাব ব্যবহার করলে ক্লান্তি কমে যায়। 
গোসলের পর ময়েশ্চারাইজার বা অ্যালোভেরা জেল লাগান–ত্বক নরম থাকবে। 
সবার আগে আপনি আপনার। নিজের জন্য এই ৩০ মিনিট বের করে ফেলুন। মোবাইল, ব্যস্ততা, চিন্তা সব এক পাশে রাখুন। এ থেরাপি কেউ আপনাকে দেবে না, আপনাকে নিজেকে দিতে হবে। 
নিজেকে ভালোবাসতে শুরু করুন এক বালতি গরম পানি, এক চিমটি সুগন্ধি আর কিছুটা নীরবতা দিয়ে। দেখবেন, জীবনটা একটু একটু করে হালকা লাগছে। v
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গরম প ন র জন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ