ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে দেশের বিভিন্ন শহরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাদের আইনের আওতায় আনা হয়। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

এদিকে সোমবারের হামলা-ভাঙচুরের পর খুলনা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ। তবে বেশির ভাগ স্থানে হামলার শিকার প্রতিষ্ঠানগুলোর শোরুম এখনও চালু হয়নি। সিলেটে বিএনপি নেতাদের মালিকানাধীন হোটেলে হামলা-ভাঙচুর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় এ পর্যন্ত খুলনায় ৩৩, সিলেটে ১৯, চট্টগ্রামে ৫, গাজীপুরে ৪, নারায়ণগঞ্জে ৪, কুমিল্লায় ৩ ও কক্সবাজারে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

খুলনায় লুণ্ঠিত জুতা উদ্ধার

খুলনায় বাটার শোরুম থেকে লুণ্ঠিত পাঁচ জোড়া জুতা, নারীদের ব্যবহৃত হাতব্যাগসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে বাটা, কেএফসি ও ডোমিনোস পিৎজায় ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। ভাঙচুরের কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনও চালু হয়নি ওই প্রতিষ্ঠানগুলো। 

মঙ্গলবার রাতে বাটার ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। অজ্ঞাতপরিচয় সাত-আটশ ব্যক্তিকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন কেএফসির ব্যবস্থাপক সুজন মণ্ডল। এ ছাড়া ডোমিনোস পিৎজার ব্যবস্থাপক শামসুল আলম একই সংখ্যক অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মো.

শফিকুল ইসলাম জানান, সোমবার রাতে ৩১ জনকে আটক করা হয়েছিল। তাদের এই তিন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এ নিয়ে ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় মোট ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। তাদের রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই। তারা ছিল সুযোগ সন্ধানী। 

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সম্পৃক্ততা

চট্টগ্রাম নগরে প্রতিবাদ মিছিল থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আটজনের মধ্যে পাঁচজনই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কর্মী বলে দাবি তাদের। ভাঙচুরের ঘটনায় আরও তিনটি মামলায় হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে নগরের খুলশী থানায় একটি মামলা করা হয়েছিল।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে খাইরুল, তামজিদ ও ইব্রাহিম ছাত্রলীগ এবং ইলিয়াস যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মঙ্গলবার নগরের চকবাজার থানায় এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রয়ন জান্নাত।

সিলেটে বিএনপি নেতাদের হোটেল ভাঙচুর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?

সিলেট নগরীর মীরবক্সটুলা এলাকায় সম্প্রতি চালু করা বহুতল হোটেল রয়েল মার্টের মালিক দুই বিএনপি নেতাসহ পাঁচ ব্যবসায়ী। হোটেল ভবনের দোতলায় ভাড়া নিয়ে রেস্টেুরেন্ট চালু করে কেএফসি। সোমবার বিকেলে নগরীতে কেএফসিতে প্রথমে হামলা হয়। ভাঙচুর করে চলে যায় মিছিলকারীরা। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে অভ্যর্থনা কক্ষসহ বিভিন্ন স্থানে আবারও ভাঙচুর করে। 

হোটেল মার্টের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, কেএফসির প্রতি আক্রোশ থাকলে আমাদের হোটেলে হামলা করবে কেন?

সাবেক সিটি মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ভাঙচুর ও লুটপাটে জড়িতদের খুঁজে বের করতে হবে। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে মিছিল থেকে হোটেল ভাঙবে কেন? নিশ্চয় তদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল।

ভাঙচুর ও লুটপাটের পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই দাবি করে এসএমপির পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম বলেন, ঘটনার পর থেকে ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়েছে। 

এদিকে গতকাল বুধবার আরও তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এ নিয়ে দুই দিনে ২১ জনকে আটক করা হয়। তাদের অধিকাংশ বহিরাগত। 

কোতোয়ালি থানার ওসি জিয়াউল হক জানান, দুটি মামলা হয়েছে। প্রতিটিতে ছয়-সাতশ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। 

ব্যবসায়ী অনন্ত মোহন পাল জানান, অর্ধশতাধিক দোকানে হানা দেওয়া হয়েছে। এটা লুটেরা শ্রেণির কাজ। 

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা ব্যুরো)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ল টপ ট ব যবস ক এফস ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

পাশাপাশি খোঁড়া হচ্ছে মা-ছেলের কবর, সেই দৃশ্য কাঁদাচ্ছে এলাকার মানুষকে

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে কেনেন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। সেটি চালিয়ে স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিলেন জিয়া উদ্দিন (২৭)। সঙ্গে ছিল তাঁর এক চাচাতো ভাই। পথে নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বালুবোঝাই একটি পিকআপ ভ্যান অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন জিয়া উদ্দিনের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম (১৬)। জিয়া উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী ফারজানা আক্তার (২৩), মেয়ে মাহমুদা কায়সার (৮) ও ছেলে মানারুল ইসলামকে (৩) গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জিয়া উদ্দিনের স্ত্রী ফারজানা আক্তার ও ছেলে মানারুল ইসলাম।

গতকাল শনিবার বেলা তিনটার দিকে মিরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের চিনকিরহাট এলাকায় ঘটে এই সড়ক দুর্ঘটনা। এরপর রাত আটটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জিয়া উদ্দিনের স্ত্রী ফারজানা আক্তার ও ছেলে মানারুল ইসলাম মারা যান। জিয়া উদ্দিন উপজেলার কাটাছড়া ইউনিয়নের বামন সুন্দর এলাকার দোস্ত মোহাম্মদের ছেলে। তাঁর শ্বশুরবাড়ি উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ অলিনগর এলাকায়।

আহত জিয়া উদ্দিনের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জিয়া উদ্দিনকে। সেখানে চিকিৎসাধীন তাঁর মেয়ে মাহমুদা কায়সারের অবস্থাও শঙ্কাজনক। এর মধ্যেই তিনজনের লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছে পারিবারিক কবরস্থানে। পাশাপাশি খোঁড়া হয়েছে ফারজানা আক্তার ও তাঁর ছেলে মানারুলের কবর।

কাটাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আলেয়া বেগম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় বামন সুন্দর এলাকার মা-ছেলেসহ তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে মা-ছেলের জন্য পাশাপাশি কবর খোঁড়ার দৃশ্য দেখে স্বজন ও প্রতিবেশীদের চোখ সিক্ত হচ্ছে। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।

সড়ক দুর্ঘটনায় পুত্রবধূ, নাতিসহ পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়ে আহাজারি করছেন বিবি হালিমা। আজ সকালে

সম্পর্কিত নিবন্ধ