এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল শহীদ আনাস-নাঈমা-সাফওয়ান, তাদের পরিবারে শুধুই হাহাকার
Published: 10th, April 2025 GMT
টেবিলে বইপত্র সব গুছিয়ে রাখা। কেউ নেড়েচেড়েও দেখেনি। অথচ এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। এসএসসি পরীক্ষার সময় বাসায় হুলুস্থুল লেগে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরিবারে শুধুই হাহাকার। অন্য ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষা দিতে গেল, চেয়ে চেয়ে সেই দৃশ্য দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না শহীদদের মা–বাবা আর পরিবারের সদস্যদের।
বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। এবার সারা দেশে ৩ হাজার ৭১৫টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই পরীক্ষা। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। নাঈমা সুলতানা, শাহারিয়ার খাঁন আনাসদেরও এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। তাদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড, প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষার প্রবেশপত্রসহ অন্যান্য নথি পরিবারের সদস্যদের কাছে এখন শুধুই স্মৃতি।
নাঈমা সুলতানার মা আইনুন নাহার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়েও ঘুমাতে পারিনি। বড় মেয়ে তাসপিয়া সুলতানা একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে, আজ তারও পরীক্ষা ছিল। নাঈমা থাকলে দুই বোন রাত জেগে একসঙ্গে পড়ত। এ কথা মনে করে বড় মেয়েটা কান্না শুরু করে আর পড়তে পারেনি। নাঈমার রেজিস্ট্রেশন কার্ড এখন আমাদের কাছে শুধুই স্মৃতি, মনকে সান্ত্বনা দিই, আমার মেয়েটা বেঁচে থাকলে ও এবার এসএসসি পরীক্ষা দিত।’
নাঈমা উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে দশম শ্রেণিতে পড়ত। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর বাড়ির নিচে পুলিশ ছাত্র-জনতাকে ধাওয়া দেয়। নাঈমা তখন চার তলা ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে কাপড় আনতে গিয়েছিল। পুলিশের ছোড়া একটি গুলি নাঈমার মাথার বাঁ পাশে লেগে মাথার মগজ বেরিয়ে যায়।
আইনুন নাহার জানালেন, নাঈমা মারা যাওয়ার মাসখানেক আগে অনলাইনে চার ঘণ্টা কাজ করলে ২০ হাজার টাকা বেতন পাবে, কাজটি সে করবে কি না তা জানতে চেয়েছিল। তখন নাঈমার বাবা বলেছিলেন, এখন বাবা কষ্ট করে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নিতে পারবেন, তাই নাঈমাকে কাজ করতে হবে না। ভালো করে পড়াশোনা করে এসএসসিতে ভালো ফল করতে বলেছিলেন। তা তো আর হলো না।
নাঈমা প্রায়ই তাঁর মাকে বলত, তোমার মেয়ের পরিচয়ে একসময় তুমি পরিচিত হবে। আইনুন নাহার বলেন, ‘এখন সবাই আমাকে চেনে শহীদ নাঈমা সুলতানার মা হিসেবে।’
মাত্র ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় শাহারিয়ার খাঁন আনাস। গেন্ডারিয়ার আদর্শ একাডেমি স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগে দশম শ্রেণিতে পড়ত সে।
আনাসের মা সানজিদা খান বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টায় মনে হয়েছে, এখন ছেলের পরীক্ষার হলের সামনে থাকতাম। বেলা একটায় মনে হয়েছে, আনাসের পরীক্ষা শেষ হতো এখন। আজকে যাতে ঝামেলা না হয়, তাই হয়তো আগের দিনই ছেলের পছন্দের খাবার রান্না করে রাখতাম, যাতে ছেলে পরীক্ষা দিয়ে ফিরে খেতে পারে। প্রতি মুহূর্তে আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্য আজ আনাসকে মনে করেছে। আমরা যা মনে করেছি, বাস্তবে তার কিছুই হয়নি।’
সানজিদা খান তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজকের দিনটা আমার খুব ব্যস্ত থাকার কথা ছিল। আনাসের ১০ বছরের সাধনা। কত দোয়া, কত টেনশন, কত স্বপ্ন। আনাস আগেই বলেছিল, মা কফি খেতে হবে, নইলে পড়ব কেমন করে? টেবিলে সাজানো বই, ঘরে রাখা কফি, ফাইলে গোছানো রেজিস্ট্রেশন কার্ড, শুধু আনাসটাই নেই। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে আনাস চলে গেছে জীবনের সকল পরীক্ষা অতিক্রম করে।’
সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণিতে পড়ত সাফওয়ান আখতার সদ্য। ৫ আগস্ট বিকেলে সাভারে সাফওয়ান পুলিশের গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
সাভারের বাসায় ৫ আগস্ট দুপুরে রান্না করছিলেন সাফওয়ানের মা খাদিজা বিন জুবায়েদ। সাফওয়ান পড়ার টেবিলেই ছিল। গৃহশিক্ষক অমিত সাহাকে সাফওয়ান নিজেই ফোন করে বলেছিল, ‘ভাইয়া, এখন আইসেন না, গুলি খেয়ে মরে যাবেন।’
শিক্ষককে সন্ধ্যা সাতটায় আসতে বলেছিল সে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর পাওয়ার পর সাফওয়ানের বাবা মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান স্ত্রী খাদিজা বিন জুবায়েদকে বিজয় মিছিলের খবর জানিয়ে ছেলেকে নিচে পাঠাতে বলেছিলেন।
সেদিন আনন্দমিছিলে অংশ নিয়ে সাভারের পাকিজা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সাফওয়ান তাঁর বাবার সঙ্গেই ছিল। দুপুরে খাওয়া হয়নি বলে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাবা আখতারুজ্জামান বাসায় ফিরে এসেছিলেন। ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে আরেকটু আনন্দ করতে চেয়েছিল।
মাগরিবের আজানের আগে সব সময় বাসায় ফেরা ছেলে আর ঘরে ফেরে না। পরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ (আইসিইউ) বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাফওয়ানকে খুঁজতে থাকেন সবাই। হাসপাতালের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় স্ট্রেচারে কয়েকটি লাশ ছিল। সন্ধ্যায় সাফওয়ানকে পড়াতে আসা সেই শিক্ষক একটি লাশ দেখে বলেন, সাফওয়ানের চেহারার সঙ্গে মিল আছে মনে হচ্ছে। বাবা কাছে গিয়ে দেখলেন, নিথর হয়ে পড়ে থাকা লাশটিই তাঁর সাফওয়ানের।
এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল সাফওয়ানের। স্কুলে প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষার কয়েকটি পরীক্ষা দেওয়ার পর স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তানজিলা মোস্তাফিজের চোখের সামনেই জন্ম ও বড় হয়েছে মামাতো ভাই সাফওয়ান। তানজিলা সাভারে মামার বাসায় থেকেই পড়াশোনা করেছেন। তাই সাফওয়ানকে পড়ানোর দায়িত্বও ছিল তাঁর।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তানজিলা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইটা পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। শুধু বাংলা আর বায়োলজি পড়তে চাইত না। এসএসসিতে ভাই গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাবে এটা ধরে নিয়েছিলাম। ভাইয়ের জন্য এইচএসসির বই, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার গাইডও সংগ্রহ করে রেখেছিলাম। কত স্বপ্ন ছিল, কত পরিকল্পনা ছিল—ভেবেছিলাম পরীক্ষা শেষ হলে বলব, চল এবার নতুন স্বপ্নের পথে হাঁটা শুরু করি।’
তানজিলা জানালেন, সাফওয়ানের মা খাদিজা বিন জুবায়েদ মেসেঞ্জারের ফ্যামিলি গ্রুপে লিখেছেন—আজ সাফওয়ানের পরীক্ষা, সবাই দোয়া করো। তানজিলার সঙ্গে রাগ দেখিয়েছেন, তিনি কেন ফোন করে সাফওয়ানের পরীক্ষা কেমন হলো তা জানতে চাইলেন না।
এই মায়ের পাগলামী দেখে পরিবারের অন্য সদস্যদের চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না বলে জানালেন তানজিলা।
আরও পড়ুন‘তোকে ছাড়া আমি ভালো নেই বাপ’০১ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র পর ক ষ স ফওয় ন র পর ব র র র পর ব র পর ক ষ র বল ছ ল সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
কোস্টগার্ডে রাজস্ব খাতে নিয়োগ, ২৭ পদে আবেদন শুধু অনলাইনে
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড অসামরিক জনবল নিয়োগ দেবে। রাজস্ব খাতভুক্ত এসব শূন্য পদে বিধিমোতাবেক সরাসরি নিয়োগের জন্য শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশের প্রকৃত নাগরিকদের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। অনলাইন (Online) ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হবে না। অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ ও আবেদন ফি জমাদান শুরু হয়েছে আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে।
পদের নাম ও বর্ণনা—
১. সাঁটলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর
পদসংখ্যা: ১
গ্রেড: ১৩
বেতনস্কেল: ১১০০০-২৬৫৯০ টাকা
আবেদনের যোগ্যতা: কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএতে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি এবং কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষতা
২. সাঁটমুদ্রাক্ষরিক-কাম-কম্পিউটার অপারেটর
পদসংখ্যা: ২
গ্রেড: ১৪
বেতনস্কেল: ১০২০০-২৪৬৮০ টাকা
আবেদনের যোগ্যতা: কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএতে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি এবং কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষতা
৩. ইউডিএ/কম্পিউটার অপারেটর
পদসংখ্যা: ৩
গ্রেড: ১৪
বেতনস্কেল: ১০২০০-২৪৬৮০ টাকা
আবেদনের যোগ্যতা: কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি এবং কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষতা
৪. ধর্মীয় শিক্ষক
পদসংখ্যা: ১
গ্রেড: ১৪
বেতনস্কেল: ১০২০০-২৪৬৮০ টাকা
আবেদনের যোগ্যতা: কোনো স্বীকৃত মাদ্রাসা বোর্ড থেকে অন্যূন ২য় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে; সংশ্লিষ্ট কাজে অন্যূন ২ (দুই) বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা; হাফেজ বা কারিগণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং সুললিত কণ্ঠের অধিকারী হতে হবে।
৫. অটোমেকানিক
পদসংখ্যা: ২
গ্রেড: ১৪
বেতনস্কেল: ১০২০০-২৪৬৮০ টাকা
আবেদনের যোগ্যতা: কোনো স্বীকৃত বোর্ড হতে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) বা সমমানের পরীক্ষায় অন্যূন ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ এবং কোনো স্বীকৃত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) বা ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠান হতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ১ (এক) বছর মেয়াদি অন্যূন ২য় শ্রেণির ট্রেড কোর্স সনদপ্রাপ্ত।
৭ বৃত্তিতে বিদেশে পড়াশোনা, আবেদনের সুযোগ ২ দিন৪০৪ পদে সরকারি চাকরি, আবেদন শেষ আগামীকাল৬. ড্রাইভার
পদসংখ্যা: ১৩
গ্রেড: ১৫
বেতনস্কেল: ৯৭০০-২৩৪৯০ টাকা
আবেদনের যোগ্যতা: কোনো স্বীকৃত বোর্ড হতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ; ভারী গাড়ি চালনার বৈধ ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চালকেরা অগ্রাধিকার পাবেন।
৭. ইলেকট্রিশিয়ান
পদসংখ্যা: ১
গ্রেড: ১৬
বেতনস্কেল: ৯৩০০-২২৪৯০ টাকা
আবেদনের যোগ্যতা: কোনো স্বীকৃত বোর্ড হতে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) বা সমমানের পরীক্ষায় অন্যূন ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ এবং কোনো স্বীকৃত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) বা ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠান হতে অটো ইলেকট্রিশিয়ান সনদপ্রাপ্ত।
এআই/প্রথম আলো