২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তিনি দেশটির ব্যবসায়িক অংশীদারদের ওপর ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপ করছেন। শুল্কের এ হার চীনের পণ্যে ৩৪ শতাংশ এবং কাতার, সৌদি আরব, জর্ডান ও ইরাকের মতো আরব দেশগুলোর জন্য ১০ থেকে ৩৯ শতাংশ হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বজুড়েই ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। ট্রাম্প তথাকথিত এই ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপ করার পেছনে তাঁর দেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের ‘বাণিজ্যিক ভারসাম্য’ প্রতিষ্ঠার যুক্তি হাজির করেন। কিন্তু তাঁর এ ঘোষণায় উল্টো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিসহ সারা বিশ্বই সম্ভাব্য মন্দায় পতিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে।

ট্রাম্পের ওই ঘোষণা বিদ্যমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার জন্য একটি গুরুতর হুমকি তৈরি করে। তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই দেশটির বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ‘পাল্টা’ শুল্ক আরোপ করা যুক্তিযুক্ত। তাঁর এ দৃষ্টিভঙ্গি বহু বছর ধরে চলা বহুপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনার মাধ্যমে অর্জিত স্বার্থের ভারসাম্যের পরিপন্থী। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে যথেষ্ট সুবিধা অর্জন করেছে, ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি এ সত্যকেও উপেক্ষা করে।

ট্রাম্পের একতরফা ও কল্পিত মূল্যায়নের ভিত্তিতে নির্ধারিত তথাকথিত এ ‘পাল্টা শুল্ক’ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মনীতি লঙ্ঘন, সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক পক্ষগুলোর বৈধ অধিকার ও স্বার্থকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন এবং নিয়মতান্ত্রিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থার জন্য এক ভয়ানক হুমকি তৈরি করে।

ট্রাম্পের একতরফা ও কল্পিত মূল্যায়নের ভিত্তিতে নির্ধারিত তথাকথিত এ ‘পাল্টা শুল্ক’ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মনীতি লঙ্ঘন, সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক পক্ষগুলোর বৈধ অধিকার ও স্বার্থকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন এবং নিয়মতান্ত্রিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থার জন্য এক ভয়ানক হুমকি তৈরি করে।

বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীল কার্যকারিতাকেও ক্ষুণ্ন করেছে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণা। ডব্লিউটিওর প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এ শুল্কব্যবস্থার ফলে ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী পণ্য বাণিজ্যে প্রায় ১ শতাংশ সামগ্রিক সংকোচন দেখা দিতে পারে। এটি আগের পূর্বাভাসের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে নিম্নমুখী।

বিশ্বজুড়ে শিল্প ও পণ্য সরবরাহব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি ট্রাম্পের এ শুল্ক পদক্ষেপ। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তায় ফেলতে এবং বিশ্ব অর্থনীতির চাকাকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এটি। এতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংকট উসকে উঠতে পারে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র আরোপিত শুল্কের শেষ দেখে নেওয়ার অঙ্গীকার চীনের০৮ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনচীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ১৪৫ শতাংশ১১ ঘণ্টা আগে

বিশেষজ্ঞদের মত, যুক্তরাষ্ট্রের ‘পাল্টা শুল্কারোপ’ শেষমেশ হিতে বিপরীত হয়ে উঠবে। ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, কানাডা ও অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

ইয়েল ইউনিভার্সিটির দ্য বাজেট ল্যাবের অনুমান, যদি অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পুরোদমে পাল্টা ব্যবস্থা আরোপ করে, তবে মার্কিন ভোক্তামূল্য ২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ১ শতাংশ কমবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ যবস থ র র জন য র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়র পদ নিয়ে ইশরাকের মামলায় ইসির ভূমিকায় এনসিপির উদ্বেগ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদ নিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মামলা, একতরফা রায় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কার্যক্রম ও তৎপরতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়। এতে বলা হয়, বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার বিষয়ে এনসিপি সর্বোচ্চ মনোযোগ দাবি করছে।

বিবৃতিতে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি, উল্লিখিত মামলার প্রথম তিন বছর পাঁচ মাসে ৩২টি তারিখ নির্ধারণ করা হলেও ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে মাত্র চার মাসে ১৭টি তারিখ দিয়ে মামলাটি তড়িঘড়ি করে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে এত দ্রুততার সঙ্গে তারিখ ধার্য করা হয়নি। ফলে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল শুধু এই মামলার একটি পক্ষকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে অন্যায্য সুবিধা প্রদান করেছেন কি না, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।’

এ মামলায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা রহস্যজনক ছিল দাবি করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এই মামলার বিবাদী হওয়া সত্ত্বেও মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। ফলে একতরফা রায় প্রদান করা হয়েছে। এমনকি রায়ের পরে তারা উচ্চ আদালতে প্রতিকার প্রার্থনা না করে মামলার বাদীকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘কমিশনের এমন তৎপরতা অস্বাভাবিক ও উদ্বেগজনক। এর আগেও আমরা দেখেছি নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষ আচরণ বজায় রাখার পরিবর্তে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে, যা একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দিচ্ছে বলে জনগণ মনে করে।’

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘এই রায় ঘোষণার আগেই সংশ্লিষ্ট আইনের অধীন গত ১৯ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে পুরো মামলাটিই অকার্যকর হয়ে গেছে। এরপরও রায় ও তড়িঘড়ি করে কমিশন কর্তৃক গেজেট প্রকাশের পেছনে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা জনসাধারণের সামনে পরিষ্কার করতে হবে।’

আরও পড়ুনইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ ইসির২৭ এপ্রিল ২০২৫

২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল বাতিল এবং ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন আদালত। ইশরাক ২০২০ সালের ৩ মার্চ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেছিলেন। রোববার রাতে তাঁকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

আরও পড়ুনঅবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে, মেয়র পদে বসা নিয়ে বললেন উপদেষ্টা২৬ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেয়র পদ নিয়ে ইশরাকের মামলায় ইসির ভূমিকায় এনসিপির উদ্বেগ
  • ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে বেইজিং: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী