অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘বৈষম্যবাদী রাজনীতি ও মতাদর্শ এখনো প্রবলভাবে রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের লড়াইটা করতে হবে। সেটা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, সাংগঠনিকভাবে, বহুভাবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু ছাত্রীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার নয়। যাঁরা এর পেছনে ছিল, তাঁদের বিরুদ্ধেও কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটা নির্দিষ্ট করতে হবে।’

গতকাল শুক্রবার রাত ১০টায় একটি অনলাইন প্রতিবাদ সভায় যুক্ত হয়ে এ কথাগুলো বলেন আনু মুহাম্মদ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা ও অন্যায় বহিষ্কারাদেশ’ প্রত্যাহারের দাবিতে এই সভা হয়। রাত ৮টা থেকে শুরু হয়ে আনুমানিক সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এই সভা চলে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক নামক একটি ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সভা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠী, শিক্ষার্থী-শিক্ষক দল পাকিয়ে এসে মেয়েদের ওপর আক্রমণ করল। প্রশাসনও তাদের পক্ষে গেল। সারা দেশেই একই অবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় মব-সহিংসতা হচ্ছে, এর পক্ষে প্রশাসন দাঁড়াচ্ছে, সরকারও দাঁড়াচ্ছে। তাঁর মানে সমাজের মধ্যে থাকা এই শক্তি বড় ধরনের সহযোগিতা প্রশাসন থেকে পাচ্ছে।’

দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘পরপর তিনটা ঘটনা ঘটল। আপনারা দেখেছেন বাড়ির দরজা ভেঙে পুলিশ-ডিবি নাম করে একটা মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে গেল। পরে জানা গেল এটা সরকারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটাতে ব্যবহার করা হলো ১৯৭৪ সালের বিশেষ আইন। তাঁর মানে সরকার এখনো ১৯৭৪ সালেই রয়েছে।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আরেকটা ঘটনায় আপনারা দেখেছেন মাদ্রাসায় মেয়েদের কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। কিন্তু এটার মনিটর শিক্ষকের ঘরে। চিন্তা করা যায়! এটি অবিশ্বাস্য। আরেকটা ঘটনা দেখছেন একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারী হওয়ার কারণে তাঁর অফিসের মধ্যে দঙ্গল পাকিয়ে হইচই করা হচ্ছে। নারী হওয়ার কারণে তাঁকে চলে যেতে বলছে। ওই নারী অসহায়ের মতো বসে রয়েছেন। চারদিক থেকে কোনো সাহায্য আসছে না।’

সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জি এইচ হাবীব বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল বডির প্রধান যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করে নারীদের আক্রমণ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছাত্ররা যেভাবে নারী বিদ্বেষী কমেন্ট করেছে, অশ্লীল কথা বলেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদটা হওয়া উচিত।’

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দিলীপ রায় বলেন, ‘আমরা দেখছি সব কিছু মবতন্ত্রের মাধ্যমে মীমাংসা করতে চাওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এর বিরুদ্ধে আমরা নিষ্ক্রিয়তা দেখতে পাচ্ছি। সেই নিষ্ক্রিয়তার প্রতিরূপ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে পাচ্ছি। এ জিনিসটা জুলাই আগস্টের আকাঙ্ক্ষা নয়।’

নিউইয়র্ক বার্ড কলেজের ফ্যাকাল্টি মেম্বার ফাহমিদুল হক এই সভার সঞ্চালনা করেন। সভায় সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়মা আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজওয়ানা করিম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন, আল মামুন; ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক বখতিয়ার আহমেদ, ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ওলিউর সান, গ্রান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আজফার হোসেন, কর্নেল ইউনিভার্সিটির ভাষা প্রকল্পের সমন্বয়ক আহমেদ শামীম, ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্কের শিক্ষক নাাসরিন খন্দকার, ইউনিভার্সিটি অব যুরিখের শিক্ষক জিনাত হোসেন, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

এ ছাড়া ছাত্রসংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু, ছাত্র ফেডারেশনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আজাদ হোসেন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট ম হ ম মদ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন করলো জেলা লিগ্যাল এইড না’গঞ্জ 

বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি নারায়ণগঞ্জ উদযাপন করলো জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দিনের শুরুতেই সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, নারায়ণগঞ্জ মোঃ আবু শামীম আজাদ পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে এর শুভ সুচনা করেন। 

এ সময় জাহিদুল ইসলাম মিঞা, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক, মো, রবিউল ইসলাম, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, ডাঃ এ.এফ.এম. মুশিউর রহমান, সিভিল সার্জন,  বিচারকবৃন্দ, জেল সুপার, জেলা সমাজ কল্যাণ বিষয়ক কর্মকর্তা, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, জেলা তথ্য বিষয়ক কর্মকর্তা, আইনজীবি সমিতির সভাপতি, সেক্রেটারীসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার আইনজীবিবৃন্দ, সকল আদালতের সহায়ক কর্মচারীবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। 

এরপর সকাল ৯টার দিকে লিগ্যাল এইড মেলা উদ্বোধন করা হয়। পরে জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জনাব মাইমানাহ আক্তার মনি, বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নারায়ণগঞ্জ। 

আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ জনাব মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরী, জানুয়ারি-২০২৪ হতে মার্চ- ২০২৫ পর্যন্ত লিগ্যাল এইড অফিসের কার্যক্রমের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

এই সময়ের মধ্যে ৬৫৭ জনকে মামলায় আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়, আইনি পরামর্শ গ্রহীতা ১২০ জন, আপোষ মিমাংসার জন্য ১২১২টি আবেদন প্রাপ্ত হয়ে ৪৯৭টি সফল মিমাংসা হয় এবং চার কোটি চৌষট্টি লাখ সত্তর হাজার চারশত টাকা আদায় করে পক্ষদের মধ্যে প্রদান করা হয়। 

আলোচনা সভায় সভাপতি বলেন যারা আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা লিগ্যাল এইড থেকে উপকৃত হচ্ছে। আজকে এখানে যারা এসেছেন তাদের দায়িত্ব হলো সকলের কাছে সরকারের এই সেবার বিষয়টি পৌছে দেয়া, যাতে করে অসহায়, হতদরিদ্র মানুষজন সহজে আইনি সেবাটা পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। 

নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, যেহেতু আইনের চোখে সবাই সমান তাই সবাইকে ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে লিগ্যাল এইড এর প্রচার এবং প্রসারের জন্য প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। 

মো. রবিউল ইসলাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আইনগত সহায়তা দিবসকে আরো মানুষের মধ্যে অধিক প্রচারের জন্য পরামর্শ প্রদান দিয়ে বলেন, দ্বন্দে কোনো আনন্দ নাই, তাই ঝামেলা মিটিয়ে সুন্দর জীবন যাপনের জন্য লিগ্যাল এইড এর সহায়তা নিতে পারে সকল শ্রেণীর মানুষ। 

পরবর্তীতে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান সমাপনী বক্তব্যে বলেন, মানুষ যাতে সহজে, দ্রুত বিচার পায়, দারিদ্রতার কারণে যেন কেউ আইনগত সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সে উদ্দেশ্যে লিগ্যাল এইড অফিস নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করে চলছে। তিনি মানুষদের আইনগত ভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। তার বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা সভা সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। 

এছাড়াও এই দিবসটি জনমানুষের মধ্যে অধিক প্রচার ও প্রসারের জন্য দিনব্যাপী লিগ্যাল এইড মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় অংশগ্রহণ করেন, জেলা আইনজীবী সমিতি, কর্মচারী কল্যান পরিষদ, লিগ্যাল এইড অফিস, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং জেলা কারাগার।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন স্থায়ী আইনগত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ
  • আইনগত সহায়তা দিবসে আলোচনা সভা-শোভাযাত্রা
  • মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়া ইশরাককে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ হয়েছে: আসিফ নজরুল
  • কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে ৪ জন নিহত
  • অনেক হয়রানিমূলক, বিদ্বেষমূলক মামলা হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা
  • জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন করলো জেলা লিগ্যাল এইড না’গঞ্জ 
  • ঢালাও মামলায় বাদীর স্বার্থ খুঁজে বের করার আহ্বান আসিফ নজরুলের
  • মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই ইশরাককে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ: আসিফ নজরুল
  • উচ্চ আদালতে সরকারের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই: আসিফ নজরুল