ছাত্রীদের বহিষ্কারের বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে: আনু মুহাম্মদ
Published: 12th, April 2025 GMT
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘বৈষম্যবাদী রাজনীতি ও মতাদর্শ এখনো প্রবলভাবে রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের লড়াইটা করতে হবে। সেটা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, সাংগঠনিকভাবে, বহুভাবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু ছাত্রীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার নয়। যাঁরা এর পেছনে ছিল, তাঁদের বিরুদ্ধেও কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটা নির্দিষ্ট করতে হবে।’
গতকাল শুক্রবার রাত ১০টায় একটি অনলাইন প্রতিবাদ সভায় যুক্ত হয়ে এ কথাগুলো বলেন আনু মুহাম্মদ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা ও অন্যায় বহিষ্কারাদেশ’ প্রত্যাহারের দাবিতে এই সভা হয়। রাত ৮টা থেকে শুরু হয়ে আনুমানিক সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এই সভা চলে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক নামক একটি ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সভা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠী, শিক্ষার্থী-শিক্ষক দল পাকিয়ে এসে মেয়েদের ওপর আক্রমণ করল। প্রশাসনও তাদের পক্ষে গেল। সারা দেশেই একই অবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় মব-সহিংসতা হচ্ছে, এর পক্ষে প্রশাসন দাঁড়াচ্ছে, সরকারও দাঁড়াচ্ছে। তাঁর মানে সমাজের মধ্যে থাকা এই শক্তি বড় ধরনের সহযোগিতা প্রশাসন থেকে পাচ্ছে।’
দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘পরপর তিনটা ঘটনা ঘটল। আপনারা দেখেছেন বাড়ির দরজা ভেঙে পুলিশ-ডিবি নাম করে একটা মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে গেল। পরে জানা গেল এটা সরকারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটাতে ব্যবহার করা হলো ১৯৭৪ সালের বিশেষ আইন। তাঁর মানে সরকার এখনো ১৯৭৪ সালেই রয়েছে।’
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আরেকটা ঘটনায় আপনারা দেখেছেন মাদ্রাসায় মেয়েদের কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। কিন্তু এটার মনিটর শিক্ষকের ঘরে। চিন্তা করা যায়! এটি অবিশ্বাস্য। আরেকটা ঘটনা দেখছেন একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারী হওয়ার কারণে তাঁর অফিসের মধ্যে দঙ্গল পাকিয়ে হইচই করা হচ্ছে। নারী হওয়ার কারণে তাঁকে চলে যেতে বলছে। ওই নারী অসহায়ের মতো বসে রয়েছেন। চারদিক থেকে কোনো সাহায্য আসছে না।’
সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জি এইচ হাবীব বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল বডির প্রধান যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করে নারীদের আক্রমণ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছাত্ররা যেভাবে নারী বিদ্বেষী কমেন্ট করেছে, অশ্লীল কথা বলেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদটা হওয়া উচিত।’
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দিলীপ রায় বলেন, ‘আমরা দেখছি সব কিছু মবতন্ত্রের মাধ্যমে মীমাংসা করতে চাওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এর বিরুদ্ধে আমরা নিষ্ক্রিয়তা দেখতে পাচ্ছি। সেই নিষ্ক্রিয়তার প্রতিরূপ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে পাচ্ছি। এ জিনিসটা জুলাই আগস্টের আকাঙ্ক্ষা নয়।’
নিউইয়র্ক বার্ড কলেজের ফ্যাকাল্টি মেম্বার ফাহমিদুল হক এই সভার সঞ্চালনা করেন। সভায় সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়মা আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজওয়ানা করিম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন, আল মামুন; ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক বখতিয়ার আহমেদ, ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ওলিউর সান, গ্রান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আজফার হোসেন, কর্নেল ইউনিভার্সিটির ভাষা প্রকল্পের সমন্বয়ক আহমেদ শামীম, ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্কের শিক্ষক নাাসরিন খন্দকার, ইউনিভার্সিটি অব যুরিখের শিক্ষক জিনাত হোসেন, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
এ ছাড়া ছাত্রসংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু, ছাত্র ফেডারেশনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আজাদ হোসেন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট ম হ ম মদ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রীবরদীতে ভারতীয় জিরা নিয়ে তুলকালাম
শেরপুরের শ্রীবরদী সীমান্তে ১৬ বস্তা ভারতীয় চোরাই জিরা ও কাপড় আটক করেছেন স্থানীয়রা। পরে স্থানীয় স্বার্থান্বেষী একটি মহল আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সেসব জিরা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে অন্য একটি পক্ষ আবার সেই জিরা আটক করে। এ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে উপজেলার ভায়াডাঙ্গা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে হাসধরা এলাকায় দ্বিতীয়বার আটক হয়। এসময় স্থানীয়রা বেশকিছু বস্তা জিরা লুট করে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা পুলিশ ও বিজিবিকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে মালামাল উদ্ধার করে তাওয়াকুচা বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, রাত ৯টার দিকে ভারতীয় চোরাই জিরা ও কাপড় বোঝাই একটি ট্রলি ঝিনাইগাতী থেকে ভায়াডাঙ্গা বাজার দিয়ে শ্রীবরদী হয়ে শেরপুরের দিকে যাচ্ছিলো। স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে ট্রলিটি আটক করে। এসময় ট্রলি চালক কৌশলে পালিয়ে যায়।
সেসময় স্থানীয় অপর একটি পক্ষ সুকৌশলে আরেক চালককে দিয়ে ট্রলিটি সরিয়ে নিয়ে যায়। ঘটনা জানাজানি হওয়ার সাথে সাথে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে হাসধরা এলাকায় ট্রলিটি আবার আটক হয়। এসময় প্রায় অর্ধেক মালামাল লুট করে এক পক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইমন আকন্দ বলেন, “আমরা ভায়াডাঙ্গা বাজারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। পরবর্তীতে স্থানীয় কয়েকজন নেতা নতুন করে অন্য ড্রাইভার দিয়ে ট্রলি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা অবৈধ পাচার হওয়া মালামাল জব্দ হোক এটাই চাই। এছাড়াও যারা মালামাল লুট করেছে এবং এই পাচারের সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।”
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী তাওয়াকুচা বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার আতিয়ার রহমান বলেন, “আমরা স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৬ বস্তা অবৈধ মালামাল জব্দ করেছি। এই ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা চলমান আছে।”
শ্রীবরদী থানার উপ-পরিদর্শক সুলতান আহমেদ বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার পূর্বেই বিজিবি মালামাল জব্দ করেছে। এই ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস