ভণিতা

নববর্ষ উৎসবকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিভিন্ন নামে অভিহিত করে থাকে। এই উৎসবটি মারমাদের কাছে ‘সাংগ্রাইং’, চাকমাদের কাছে ‘বিজু’ এবং ত্রিপুরাদের কাছে ‘বৈসু’ নামে পরিচিত।

আবার ম্রো জনগোষ্ঠীর কাছে এটি ‘চাংক্রান’, চাক জনগোষ্ঠীর কাছে ‘সাংগ্রাইং’, খুমী জনগোষ্ঠীর কাছে ‘সাংক্রাইং’, খেয়াং জনগোষ্ঠীর কাছে ‘সাংরান’ এবং তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর কাছে ‘বিষু’ নামে পরিচিত।

আবার বাংলা পঞ্জিকায় এই সময়টিকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘মহা বিষুব সংক্রান্তি’ হিসেবে। আমরা ধরে নিতে পারি, আদিবাসীদের উপরোক্ত বিভিন্ন শব্দাবলির উৎপত্তি ঘটেছে এই ‘বিষুব সংক্রান্তি’ শব্দদ্বয় থেকে।

নববর্ষ উৎসবের পরিব্যাপ্তি ও বিশ্বজনীনতা

পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই উৎসব উদযাপনের রেওয়াজ রয়েছে। বাংলাদেশের বাঙালি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ‘চৈত্র পরব’ বা ‘বিয়ু পরব’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ও মায়ানমারের রাখাইন জনগোষ্ঠীর কাছে এটি পরিচিত ‘সাংগ্রাইং’ হিসেবে। কমলগঞ্জের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের কাছে এটি ‘বিষু’ নামে পরিচিত। ভারতের হিমাচল প্রদেশ ও হিমালয়ের প্রায় সবক’টি রাজ্যে বিষুব সংক্রান্তি ‘বিষু’ বা ‘বৃষু’ নামে পরিচিত।  

হিমালয়ের চম্বা (প্রাচীন নাম চম্বা নগরী) ও কিন্নৌর অঞ্চলের আদিবাসীরা ‘বিষু’ পালন করেন বর্ষবরণ উৎসব হিসেবে। নেপালেও এই উৎসবটিকে বলা হয় ‘বিষু’ উৎসব। ভারতের আসামে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী ‘স’ বা ‘ষ’-কে উচ্চারণ করে ‘হ’ হিসেবে। একারণে অহমীয়াদের কাছে ‘বিষু’র উচ্চারণটি হয়ে গেছে ‘বিহু’। আসামের প্রায় প্রতিটি জনগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব বিষু বা বিহু নৃত্য। দেওরী সম্প্রদায় মনে করে বিষু শব্দটি এসেছে তাদের ভাষা থেকে। তাদের ভাষায় ‘বি’ মানে চরম, ‘ষু’ মানে আনন্দ। তাদের কাছে ‘বিষু’ হলো চরম আনন্দের উৎসব। আসামের বোড়ো সম্প্রদায়ের কাছে এই নববর্ষের উৎসবটি পরিচিত ‘বৈশাগু’ হিসেবে, যা ত্রিপুরাদের ‘বৈসুক’ শব্দেরই আরেকটি রূপ।

খ্রিস্টীয় প্রথম-দ্বিতীয় শতাব্দী বা তারও আগে ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃতি পরিব্যাপ্ত হয়েছিল দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায়। অন্যান্য অনেক সাংস্কৃতিক উপাদানের সাথে বিষুব সংক্রান্তিও চলে গেল সেখানে। খ্রিস্টীয় ও ইসলামী প্রভাব পড়েনি এমন দেশ, যেমন মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশে এই উৎসব পালিত হয় বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণ উৎসব হিসেবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি পরিচিতি পেয়েছে ‘সংক্রান্তি’ বা ‘সংক্রান্ত’ হিসেবে। থাইল্যান্ডে এটি ‘সংক্রান’ এবং মায়ানমারে ‘থিংগিয়ান’ হিসেবে পরিচিত, যা সংস্কৃত শব্দ ‘সংক্রান্ত’ থেকে এসেছে।

মূলত ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এপ্রিলের মাঝামাঝি এই বর্ষবরণ উৎসব পালিত হয়ে আসছে স্মরণাতীতকাল থেকে। এ থেকে আমরা বলতে পারি, এই উৎসবটি একটি বিশ্বজনীন বা আন্তর্জাতিক উৎসব।

ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ উৎসব বৈসু উপলক্ষে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। আদালত সড়ক, খাগড়াছড়ি, ১১ এপ্রিল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জনগ ষ ঠ র ক ছ পর চ ত

এছাড়াও পড়ুন:

জবি ছাত্রীর আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় আটক তরুণ

রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সংগীত বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীর বাবা প্রণব মজুমদার (৫৯) বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে সূত্রাপুর থানা মামলা করেন। মামলায় ইয়াছিন মজুমদার (২৩) নামের এক তরুণকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

আজ বুধবার সূত্রাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। নিহত শিক্ষার্থী হলেন প্রত্যাশা মজুমদার অথৈ। 

মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, ‘ইয়াছিন মজুমদার দীর্ঘদিন ধরে অথৈকে উত্যক্ত করছিল। স্কুলজীবনে তাদের মধ্যে পরিচয় ছিল। আমার মেয়ে ঢাকা চলে এলে ইয়াছিন তাকে অনুসরণ করে ঢাকায় আসে এবং লালবাগ থানা এলাকায় জমিদারী ভোজ নামক রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের চাকরি নেয়। সে আগের মতো আমার মেয়েকে উত্যক্ত করতে থাকে। পরবর্তীতে ইয়াছিন কৌশলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে। একপর্যায়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত উৎসবের অনুশীলন শেষে মেসে ফেরার পথে ইয়াসিন অথৈকে গালমন্দ করে ও উৎসবে অংশ না নিতে চাপ দেয়। পরে তার (অথৈ) রুমের দরজা ভেঙে তাকে অবস্থায় ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার। মেসের মালিকের স্ত্রী মোসা. জ্যোৎস্না বেগম প্রথম ঘটনাটি জানতে পারেন। এরপর ইয়াছিন মজুমদারসহ কয়েকজন অথৈকে উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

এজাহারে নিহতের বাবা প্রণব মজুমদার বলেন, ‘আমার ধারণা, বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মেয়ের সহপাঠীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ছুটে আসি।’

এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানার ওসি বলেন, ‘আমরা অভিযুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। কোর্টে চালান দিয়েছে। আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ‘মেয়ের বাবার মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রশাসনকে বলেছি, আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ‘জনপদের বর্ষবরণ ১৪৩২’
  • উপহার পেল পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া জেরিনের পরিবার
  • জবি ছাত্রীর আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় আটক তরুণ
  • রমনা বটমূলে বোমা হামলা: হাইকোর্টের রায় ৮ মে
  • পদ্মা নদীতে টর্নেডো, পানির স্তম্ভ উঠে গেল আকাশের দিকে
  • রমনা বটমূলে বোমা হামলা: হাইকোর্টের রায়  ৮ মে
  • সিডনিতে প্রতীতির বর্ষবরণে বাঙালিয়ানার জয়গান
  • ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে উৎসবকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে: মোহাম্মদ আজম
  • দৃশ্যপটে ‘আনন্দ’, মঙ্গল কোথায়
  • যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের