বঙ্গীয় নববর্ষের স্বাতন্ত্র্য কোথায়? ছদ্মনামা লেখক এ বি এম ইংরেজি ১৯৬৭ সালে ‘পাকিস্তান অবজারভার’-এর পয়লা বৈশাখ ক্রোড়পত্রে লিখেছেন, ‘ঈদের উদ্যাপন হয় পুরো মুসলিম জাহানে,’ খ্রিষ্টান নিউ ইয়ার-এর প্রথা তো এ দেশে ব্রিটিশদের আমদানি; ‘বছরে শুধু একটা দিনই আমাদের গ্রামগুলো বিশেষ বঙ্গীয় রং আর উৎসবের চিহ্নে সেজে ওঠে।’ বাংলা নববর্ষ যেহেতু বিশেষভাবে দেশজ, অন্য কোনো উৎসবের সঙ্গে এর তুলনা হতে পারে না।
পাকিস্তান যুগের সংবাদপত্রে বঙ্গীয় নতুন সন উদ্যাপনের যে ভাষ্য ধরা পড়েছে, সেগুলোর ওপর ভর করে এই লেখায় আমার কাজ তিনটি। প্রথমত, এটা ব্যাখ্যা করা যে ঠিক কোন অর্থে বাংলা বর্ষপঞ্জির মহল বা তালুক হচ্ছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ত, কীভাবে বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন উদ্যাপনের প্রথা আধুনিক অর্থে ‘ঐতিহ্য’ হয়ে উঠল। এবং সর্বশেষে নববর্ষের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্কের প্রশ্নটিকে কীভাবে ফায়সালা করা হয়েছিল। বাংলা সন একান্তভাবে দেশজ—এ বি এমের এই দাবি সামান্য সঠিক হলেও সুনির্দিষ্টভাবে কথাটির মানে পাকিস্তান যুগে ছিল এই যে, বাংলা সন নির্দিষ্টভাবে বাংলার ভূগোলের মধ্যে প্রবিষ্ট। বাংলা সনের যে হিজরি এবং মোগল নছব, সেটার জিকির সূত্রে পঞ্চাশের দশক থেকেই এই ভূগোল বা স্থানিকতার কথাটা উঠতে থাকে। মোগল যুগে দরবারি বর্ষপঞ্জি হিজরি হলেও ‘পাকিস্তান অবজারভার’ তাদের ১৯৫৫ সালের নববর্ষ প্রতিবেদন-এ জানাচ্ছে: কৃষিভিত্তিক পূর্ববঙ্গে—যেখানে প্রকৃতির অলঙ্ঘ্য নিয়মে ষড়ঋতু ৩৬৫ দিন ঘিরে আবর্তিত—চান্দ্রমাসের হিজরি সন বিশৃঙ্খলা ঘটাতে বাধ্য। অর্থাৎ, একদিকে বাংলার প্রকৃতির আবর্তন এবং সেই প্রকৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শ্রমের নানা রকম ধরন, আর অন্যদিকে হিজরি সনের, মধ্যে একটি অসামঞ্জস্য আছে। মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর সিধা জবানে: চান্দ্রমাসের হিজরি সন মেনে তারিখ ঠিক করলে ‘তাহা প্রত্যেক বৎসর ফসল তোলার সময়ের সাথে মেলে না।’ (১৯৬৯)
১৩৭৩ বঙ্গাব্দের (১৯৬৭ সাল) পয়লা বৈশাখে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নববর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
দুদিনের সফরে কলকাতায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু দুদিনের সফরে বুধবার কলকাতায় পৌঁছেছেন। বিকেলে তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ও রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু পরে নদীয়া জেলার কল্যাণীতে অবস্থিত অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের (এইমস) প্রথম সমাবর্তন উৎসবে যোগ দেন। সেখানে তাঁকে সংবর্ধনা জানান এইমসের পরিচালক রামজি সিং। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ তুলে দেন।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রাষ্ট্রপতি যান দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে। সেখানে কালীমন্দিরে পূজা অর্চনা করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর কন্যা ইতিশ্রী মুর্মু।
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও রামকৃষ্ণদেবের বংশধর কৌশিক চক্রবর্তী রাষ্ট্রপতির হাতে মন্দিরে নিবেদিত পদ্মফুল ও প্রসাদ তুলে দেন। পরে রাষ্ট্রপতি রামকৃষ্ণদেবের বসতঘর পরিদর্শন করে রাজভবনের উদ্দেশে রওনা হন।
বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রপতি ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘরে যাবেন। সেখানে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস), দেওঘরের প্রথম সমাবর্তন উৎসবে যোগ দেবেন। এ প্রতিষ্ঠানেও এই প্রথমবার সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়েছে।