বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পরও হামলার শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা: আইজেনেট
Published: 16th, April 2025 GMT
বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পরেও সাংবাদিকেরা হামলার শিকার হচ্ছেন। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের নিশানা করা হচ্ছে। অনেক সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। কয়েকটি গণমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
সোমবার ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের (আইজেনেট) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আইজিনেট যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জার্নালিস্টের (আইসিএফজে) একটি প্রকল্প।
আইজিনেটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম জগতে বড় পরিবর্তন এসেছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা ছাড়াও ১৬৭ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি খ্যাতিমান গণমাধ্যমে মালিকানার কাঠামোয় বদল এসেছে বলে উল্লেখ করেছে আইজিনেট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় ছিলেন আওয়ামী লীগ–সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকেরা। ওই পদগুলোয় এখন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী–সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকেরা বসেছেন। সরকার পতনের পর সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে ২৯টি নেতৃত্বস্থানীয় পদে এমন বদল এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি দল সাংবাদিকদের কালো তালিকাভুক্ত করা শুরু করেন। তারা মনে করেন, ওই সাংবাদিকেরা ‘সাংবাদিকতার আড়ালে রাষ্ট্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত।’ এসব সাংবাদিকের অনেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন, আত্মগোপন করেছেন অথবা পেশাগত কার্যক্রম বন্ধ করেছেন। আর অন্যরা আইনি পদক্ষেপের মুখে পড়েছেন ও গ্রেপ্তার হয়েছেন।
সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এশিয়া কর্মসূচি সমন্বয়ক বেহ লিহ ই বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত ভিত্তিহীন ফৌজদারি মামলা ও তাদের আটক, বিভিন্ন মিডিয়া গ্রুপকে নিশানা করা ও ভাংচুরের ঘটনায় আমরা বিরক্ত। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর এই হামলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে বেহ লিহ ই আরও বলেন, ‘নতুন এই রাজনৈতিক যুগে পূর্ববর্তী সরকারের পদ্ধতিগুলো পুনরাবৃত্তি করা যাবে না; সমালোচক ও সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে আইনকে ব্যবহার করা যাবে না। একই সময়ে গণমাধ্যমগুলোকে নৈতিকতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করতে হবে এবং প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই তাদের সংবাদ প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইজ ন ট
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত আরও ৩, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।