একীভূত করার কথা বলে ট্রাম্প আসলে কানাডার কাছ থেকে কী চায়
Published: 16th, April 2025 GMT
উত্তর আমেরিকার মানচিত্রে ম্যাচিয়াস সিল দ্বীপ একটি ক্ষুদ্র বিন্দুমাত্র।
তবে জনবসতিহীন, কুয়াশায় ঢাকা পাথুরে এই দ্বীপটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই দ্বীপটি ‘গ্রে জোন’ হিসেবে পরিচিত অঞ্চলে অবস্থিত। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরল এক আন্তর্জাতিক বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই ছোট্ট দ্বীপ।
প্রতিবেশী ও দীর্ঘদিনের মিত্র এই দুই দেশই দীর্ঘদিন ধরে দ্বীপটি ও এর আশপাশের জলসীমার মালিকানা দাবি করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে কানাডার নিউ ব্রান্সউইক প্রদেশ এই জায়গায় এসে মিলে গেছে। দুই দেশই সেখানকার মূল্যবান গলদা চিংড়ি ধরা ও বিক্রির অধিকার চায়।
গলদা চিংড়ি ধরেন এমন একজন মার্কিন জেলে হচ্ছে জন ড্রাইউন। তিনি ৩০ বছর ধরে গ্রে জোনে মাছ শিকার করছেন। তিনি বলছিলেন, প্রতিবছর গ্রীষ্মের শুরুর দিকে চিংড়ি শিকারের মৌসুমে মার্কিন ও কানাডীয় জেলেদের মধ্যে কে আগে ফাঁদ বসাবে, তা নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। জন বলেন, এই করতে গিয়ে মানুষ শরীরের অঙ্গ হারিয়েছে, মাথায় আঘাত পেয়েছে, মাথা ফেটে গেছে—এমন সবকিছু হয়েছে।
এসব আঘাতের ঘটনা সাধারণত তখনই ঘটে, যখন এক জেলের জাল বা দড়িতে আরেকজন জেলে আটকে যায়। কানাডীয় এক জেলের দড়িতে আঙুল আটকে ড্রাইউনের এক বন্ধু আঙুল হারান। ড্রাইউন একে বলছেন তাঁর গ্রে জোন যুদ্ধের চিহ্ন।
১৭ শতকের শেষ দিক থেকে মাচিয়াস সিল দ্বীপ ঘিরে প্রায় ২৭৭ বর্গমাইল সমুদ্র এলাকা বিরোধপূর্ণ। ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক একটি আদালত দুই দেশকেই এই জলসীমায় মাছ ধরার অনুমতি দেন।
দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই বিরোধ কেবল একটি ব্যতিক্রম বলা যায়—দুই দেশের মধ্যে বিচ্ছিন্ন উত্তেজনার জায়গা। বাকি সব ক্ষেত্রে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ।
তবে দুই দেশের এই সম্পর্ক এখন বদলাতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরা, কানাডার পণ্যে বড় অঙ্কের পাল্টা শুল্ক আরোপ এবং কানাডাকে ৫১তম রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার মতো বক্তব্য নতুন করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। এত কিছুর মধ্যেও প্রশ্ন জাগে—ট্রাম্প আসলে কানাডার কাছ থেকে কী চান?
চিংড়ি নিয়ে যুদ্ধ
যুক্তরাষ্ট্রের কাটলার ও মেইন হচ্ছে ‘গ্রে জোনের’ সবচেয়ে কাছের শহর। এখানে কিছু বাড়ি, একটি দোকান ও চিংড়ির একটি পাইকারি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে।
সাগরে থাকা চিংড়ির ওপর মূলত কাটলারের অস্তিত্ব নির্ভর করে। এখানকার জেলেরা প্রতিদিন গালফ অব মেইনের তলদেশে ফাঁদ পেতে মূল্যবান চিংড়ি ধরে বাজারে বিক্রি করেন।
চিংড়ির মৌসুমে এই জলসীমা নৌকা ও দড়ির চিহ্নে ভর্তি থাকে। জায়গা ও জীবিকার জন্য জেলেদের লড়াই চলতে থাকে এবং মাঝেমধ্যে সেটা খারাপ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়।
গলদা চিংড়ি ধরেন এমন একজন মার্কিন জেলে হচ্ছে জন ড্রাইউন। তিনি ৩০ বছর ধরে গ্রে জোনে মাছ শিকার করছেন। তিনি বলছিলেন, প্রতিবছর গ্রীষ্মের শুরুর দিকে চিংড়ি শিকারের মৌসুমে মার্কিন ও কানাডীয় জেলেদের মধ্যে কে আগে ফাঁদ বসাবে, তা নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।জন ড্রাইউন বলেন, ‘আমরা কি এই বিষয়টি পছন্দ করি?’ নিজেই জবাব দেন, একদমই না। তিনি বলেন, ‘যত দিন আমার নিশ্বাস থাকবে, তত দিন এ নিয়ে আমি অভিযোগ করে যাব।’
মেইনের আরেক জেলে নিক লেমিউ বলেন, গত কয়েক বছরে প্রায় ২০০ ফাঁদ চুরি হয়েছে। এসব ঘটনার জন্য তিনি কানাডিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বীদের দায়ী করেন।
নিক লেমিউ বলেন, ‘এটি আমাদের এলাকা। এটিই আমাদের কাজ করার জায়গা। এমন ব্যাপার আমাদের ভালো লাগে না।’
মার্কিন জেলেদের অভিযোগ করেন, বড় চিংড়ি কীভাবে ধরা যায়, সেই নিয়ম তৈরি করে কানাডীয়রা কাজ করছে।
কানাডীয় জেলেরাও পাল্টা অভিযোগ করেন, মার্কিন জেলেরা তাদের জলসীমা অতিক্রম করে গোপনে কানাডার জলসীমায় ঢুকে পড়ছেন।
কানাডার সীমান্ত কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি ইউনিয়ন অভিযোগ করেছে, তাদের রীতিনীতির প্রয়োগের চেষ্টার জবাবে মার্কিনরা সহিংসতার হুমকি দিয়েছে। এ কারণে কানাডার কিছু কর্মকর্তা ‘গ্রে জোনে’ কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
কানাডা মাচিয়াস সিল দ্বীপে থাকা স্বয়ংক্রিয় বাতিঘরের দেখাশোনা করতে সেখানে নিয়মিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীদের পাঠায়। কানাডা বলছে, দ্বীপ যে তাদের নিয়ন্ত্রণের, এটিই তার প্রমাণ। অন্যদিকে, মার্কিনরা যুক্তি দিচ্ছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউএস মেরিন দ্বীপটি দখলে রেখেছিল। সেটাই হচ্ছে তাদের সার্বভৌমত্বের প্রমাণ।
ম্যাচিয়াস সিল দ্বীপ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।