কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী বর্ষবিদায় ও বরণের ‘মাহা সংগ্রাইং পোয়ে’ আজ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে ঠান্ডা জল ছিটিয়ে একে অপরকে ভিজিয়ে নেচেগেয়ে আনন্দ–উল্লাসে মাতেন রাখাইন সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা। শনিবার সন্ধ্যায় এই উৎসব শেষ হবে।

কক্সবাজারের পাশাপাশি বান্দরবানেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাইং উৎসব। এই উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল আজ। উৎসবে গতকাল বুধবার প্রথম দিনের চেয়েও আজ ভিড় বেশি ছিল বলে উৎসব উদ্‌যাপন কমিটির নেতারা জানিয়েছেন।

কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতারা জানান, গতকাল বুধবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে রাখাইন অব্দ ১৩৮৬ সাল। পুরোনো অব্দকে বিদায় এবং নতুন অব্দ ১৩৮৭ সালকে বরণ করে নিতে রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষজন ১৭ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী সাংগ্রাইং বা জল উৎসব উদ্‌যাপন করছেন। আগের দিন শহরের টেকপাড়া ও চাউলবাজার রাখাইন পল্লির নারীরা শোভাযাত্রা বের করেন। এরপর শহরের বৌদ্ধমন্দির সড়কের শতবর্ষী ‘অগ্যামেধা বৌদ্ধবিহারে গিয়ে বুদ্ধমূর্তি স্নানের মাধ্যমে নববর্ষ উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।

রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মং চেং হ্লা বলেন, গত বছর শহরের ১২টিসহ টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, রামু, চৌফলদন্ডি ও চকরিয়ায় ৩৬টি মণ্ডপে সাংগ্রাইং উৎসব হয়েছিল। এবার ৩৭টির বেশি মণ্ডপে জল উৎসব চলছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে ৪৬ হাজার রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। ছোট–বড় সবাই উৎসবে মেতেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় শহরের টেকপাড়া, চাউলবাজার, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, বড় বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শত শত রাখাইন নারী–পুরুষ, শিশু–কিশোর ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে সড়কে ঢাকঢোল বাজিয়ে উৎসবে মেতেছেন। এসব এলাকায় আগে থেকেই সাজিয়ে রাখা হয় একাধিক মণ্ডপ। মণ্ডপে রাখা হয় পানিভর্তি নৌকা ও ড্রাম। তরুণীরা নৌকা ও ড্রামের পাশে সারিবদ্ধ হয়ে বসে থাকেন। তরুণেরা নেচেগেয়ে মণ্ডপে প্রবেশ করেন এবং তরুণীদের লক্ষ্য করে জল ছুড়ে মারেন। অপেক্ষমাণ তরুণীরা পাল্টা জল ছুড়ে মারেন। এভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে জল ছুড়ে মারার উৎসব। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও বিপুলসংখ্যক পর্যটক মণ্ডপে উপস্থিত থেকে রাখাইনদের উৎসব উপভোগ করেন।

টেকপাড়ার একটি মণ্ডপ দেখতে আসেন ঢাকার রাজারবাগ এলাকার ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন চৌধুরী। সঙ্গে স্ত্রী ও এক মেয়ে। রাখাইন শিশুরা হেলাল দম্পতিকে পানি ছুড়ে কিছুটা ভিজিয়ে দেন। তাতে খুশি হয়ে হেলাল উদ্দিন চৌধুরী (৪৫) বলেন, ‘রাখাইনদের জলকেলির কথা বহু আগেই জেনেছি; কিন্তু দেখা হয়নি। আজ নিজ চোখে দেখে ভালো লাগল।’

রাখাইন তরুণ উচিং মং বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা জল উৎসবের অপেক্ষায় থাকি। প্রিয়জনদের উপহারসামগ্রী কিনে দিই। ঘরে ঘরে চলে অতিথি আপ্যায়ন।’

জলকেলি উৎসব আনন্দময় ও উৎসবমুখর করতে সহযোগিতা দিচ্ছে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতা ও কক্সবাজার সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ক্যাথিং অং বলেন, রাখাইন অব্দকে বিদায় ও বরণ করে নেওয়ার জন্যই মূলত ‘সাংগ্রাইং পোয়ে’ অথবা জলকেলি উৎসবের আয়োজন করা হয়। হিংসা বিদ্বেষ ভুলে দেশের উন্নতিতে সব সম্প্রদায়ের মানুষ যেন একযোগে কাজ করতে পারেন এবং সবাই যেন সুখশান্তিতে বসবাস করতে পারেন, এ জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করা হয়।

এদিকে বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাইং উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ বিকেল ৩টায় জেলা শহরের রাজার মাঠে মৈত্রী পানিবর্ষণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন জেলার দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মং উষাথোয়াই মারমা ও পু চ নু মারমা।

সাংস্কৃতিক মঞ্চে পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর গান ও নৃত্যের পাশাপাশি দুটি সাজানো ময়ূরপঙ্খী নৌকায় পানিবর্ষণ উৎসব চলে। গানের তালে তালে তরুণ-তরুণীদের পানি ছিটানো উৎসবে আনন্দে-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন উপস্থিত দর্শকেরা। উৎসবে আসা তরুণী হ্লামেচিং মারমা জানালেন, পুরোনো বছরের সব গ্লানি মৈত্রীর পানিতে ধুয়েমুছে গেছে।

উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি চ নু মং মারমা জানিয়েছেন, আগামীকাল শুক্রবার উৎসবের শেষ দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র খ ইন উৎসব র শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

দুদিনের সফরে কলকাতায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু

ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু দুদিনের সফরে বুধবার কলকাতায় পৌঁছেছেন। বিকেলে তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ও রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা।

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু পরে নদীয়া জেলার কল্যাণীতে অবস্থিত অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের (এইমস) প্রথম সমাবর্তন উৎসবে যোগ দেন। সেখানে তাঁকে সংবর্ধনা জানান এইমসের পরিচালক রামজি সিং। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ তুলে দেন।

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রাষ্ট্রপতি যান দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে। সেখানে কালীমন্দিরে পূজা অর্চনা করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর কন্যা ইতিশ্রী মুর্মু।

দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও রামকৃষ্ণদেবের বংশধর কৌশিক চক্রবর্তী রাষ্ট্রপতির হাতে মন্দিরে নিবেদিত পদ্মফুল ও প্রসাদ তুলে দেন। পরে রাষ্ট্রপতি রামকৃষ্ণদেবের বসতঘর পরিদর্শন করে রাজভবনের উদ্দেশে রওনা হন।

বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রপতি ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘরে যাবেন। সেখানে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস), দেওঘরের প্রথম সমাবর্তন উৎসবে যোগ দেবেন। এ প্রতিষ্ঠানেও এই প্রথমবার সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাইয়ের ১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় উৎসব
  • ১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট
  • দুদিনের সফরে কলকাতায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু
  • ভৌতিক গল্প নিয়ে কানাডায় নুহাশ
  • তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
  • সিডনিতে ড্র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কেউ না থাকায় হতাশ প্রবাসীরা
  • ‘মুক্তির উৎসব’ করতে সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাবেক সমন্বয়কের আবেদন
  • এবার পরিবার নিয়ে ঘরে বসেই ‘উৎসব’