বিদ্যমান সংবিধানের অধীনের সরকারকে বৈধ মনে করি না: ফরহাদ মজহার
Published: 18th, April 2025 GMT
বিদ্যমান সংবিধানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট তৈরি হয়েছে, তাই এর অধীনের সরকারকে বৈধ বলে মনে করেন না রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, এই গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে নতুন রাষ্ট্র গঠনের দিকে নেয়নি। গণঅভ্যুত্থানের শেষে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বহাল রাখা হয়েছে। তা ঠিক বলে মনে করি না। এই সংবিধানের অধীনের সরকারকে বৈধ মনে করি না। আমি জনগণের পক্ষে কথা বলি। এ সরকারের পক্ষে সবসময় থাকার প্রশ্নই আসে না। সকল প্রকার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে ইমাজিনেক্সট ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘জাতীয় সংস্কৃতি : প্রেক্ষিতে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিকে দেশের নতুন গঠনতন্ত্র উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, সংবিধান মানে আইন। ইংরেজরা আইন প্রণয়ন করে। জনগণ গঠনতন্ত্র করে। সংবিধান মানেই হচ্ছে ঔপনিবেশিক শাসক। আপনি লুটেরা মাফিয়া শ্রেণির পক্ষে, আপনি একটা শাসনতন্ত্র বানাবেন। একটা আইন দিয়ে গরিবদেরকে শোষণ করবেন। সাধারণ মানুষকে শোষণ করবেন। আগের মতোই চলবেন। আর গঠনতন্ত্র মানে জনগণ নিজেরা অংশগ্রহণ করে।
তিনি বলেন, সাংস্কৃতিকভাবে ফ্যাসিবাদের বিরোধিতাই আমাদের সংস্কৃতির মূল চরিত্র। সকল প্রকার জাতিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। এটা বাঙালি জাতিবাদের পাশাপাশি সকল প্রকার ধর্মীয় জাতিবাদের বিরুদ্ধেও অবস্থান। ইসলামে জাতিবাদের স্থান নেই।
পয়লা বৈশাখের মাধ্যমে উৎসব নজির অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেখিয়েছে মন্তব্য করে এই রাষ্ট্রচিন্তক বলেন, এই উৎসবে ধর্মনিরপেক্ষ, ধার্মিক, আস্তিক, নাস্তিক, সনাতন ধর্মাবলম্বী, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সকলে অংশগ্রহণ করেছে। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে গোষ্ঠীটি তৈরি হয় তাকে জাতি বলা হয়। এটা হচ্ছে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী।
গোলটেবিল বৈঠকে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, আমার সংস্কৃতি যত শক্তিশালী হোক আমাকে কিন্তু সেখানে বাইরের পৃথিবীর সংস্কৃতির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে টিকে থাকতে হবে। আকর্ষণ তৈরি করতে হবে। সেই জায়গা তৈরি নিয়ে ভাবতে হবে।
চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, বাইরে পৃথিবীতে বাংলাদেশের অনেক বন্ধু আছে। আমাকে খুঁজে বের করতে হবে, আমি আমার বন্ধুটাকে কীভাবে পেতে চাই। আমি যদি ভালোভাবে পেতে পারি, চাইতে পারি, আমার ধারণা বাংলাদেশে প্রচুর বন্ধু আছে, সেটা আমরা এখনো দেখছি, আগেও দেখেছি এবং আমার ধারণা ভবিষ্যতে আমরা দেখতে পারব।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনির্বাচিত সরকার না বলার দাবি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকারের সুনির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। জনসম্মতিহীন অবৈধ সরকারকে অনির্বাচিত সরকার বলা হয়। যেমন এক/এগারোর সরকার, আওয়ামী লীগ সরকার। এ সরকার অবৈধ বা জনসম্মতিহীন সরকার না। এটা ঠিক, সরকার ভোটের মাধ্যমে আসেনি।
অতীতে ৩০-৩৫ শতাংশ ভোটে বাংলাদেশের ক্ষমতায় রাজনৈতিক দলগুলো এসেছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ সরকারের প্রতি ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের সমর্থন রয়েছে। তাহলে এ সরকার কেন অনির্বাচিত? অনির্বাচিত সরকার তো বীনা সিক্রি (বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার) বলে বেড়ান। ভারতের সেনাবাহিনী বলে আমরা নির্বাচিত সরকার এলে সম্পর্ক স্বাভাবিক করব। অর্থাৎ সরকার অনির্বাচিত এবং দেশে অবৈধ সরকার চলছে।
ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হলে বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা হবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে সরোয়ার তুষার বলেন, আপনি বলছেন ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হলে দেশে বিশৃঙ্খলা হবে। ধরা যাক সরকার নির্বাচনটা মার্চে নিয়ে গেল। এখন যদি ডিসেম্বরের পরে বিশৃঙ্খলা হয় তার দায় কার? যারা এ কথা বলেছেন অবশ্যই তাদের নিতে হবে।
নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের সভাপতিত্বে ও ইমাজিনেক্সট ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র ও নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ ইমতিয়াজের সঞ্চালনায় ধারণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাফর ফিরোজ। আরও বক্তব্য দেন শিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফরহ দ মজহ র ন র ব চ ত সরক র এ সরক র র সরক র র বল ন
এছাড়াও পড়ুন:
জামায়াতের তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা
পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন, জাপা ও চৌদ্দ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ ৫ দফা দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
আরো পড়ুন:
মুক্তিযুদ্ধ না মানলে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা হবে: জামায়াত নেতা আযাদ
জনগণ রায় দিলে দেশকে ৫ বছরেই দারিদ্র্যমুক্ত করা সম্ভব: শফিকুর রহমান
তিনি ৫ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে, ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করতে হবে এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।”
এসব দাবি বাস্তবায়নে তিন দিনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
কর্মসূচি হলো:
১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুর রব ও মোবারক হোমাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আবদুর রহমান মুসা, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ইয়াসিন আরাফাত এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সরকার জুলাই জাতীয় ঘোষণা ও জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুত করেছেন। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জুলাই জাতীয় ঘোষণা ও জুলাই জাতীয় সনদের প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ তাদের পরামর্শ সরকারের নিকট উপস্থাপন করে। জামায়াতে ইসলামী বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। আমরা মনে করি, জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান ব্যতীত ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।
সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছে। অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, কোয়ালিটি-সম্পন্ন পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছে। এমনকি দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সাথে একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু তারপরও জনগণের দাবিসমূহ কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জনগণের দাবি আদায়ের জন্য গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তাই জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৫-দফা গণদাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ