ওসির আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে খুলনার পূর্ব রূপসা থেকে তিন ঘণ্টা বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। পরে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও পুলিশের যৌথ বৈঠক শেষে পুনরায় বাস চলাচল শুরু হয়।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ডে ঘটনাটি ঘটে। দুপুর ১টার দিকে বাস চলাচল শুরু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাস শ্রমিক জানান, হাইওয়েতে ইজিবাইকসহ বিভিন্ন ধরনের থ্রি-হুইলার বন্ধের দাবি জানিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। এরপরও থ্রি-হুইলার বন্ধে প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
আরো পড়ুন:
মধ্যপাড়া পাথর খনির ভূগর্ভে শ্রমিকের মৃত্যু
রূপগঞ্জে যৌথবাহিনী-শ্রমিক সংঘর্ষ, আহত শতাধিক
শনিবার সকাল ৭টার দিকে রহিম নামে এক ব্যক্তি ইজিবাইকে যাত্রী নিয়ে পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসেন। এসময় বাস শ্রমিকরা ইজিবাইকটি আটকে রাখেন। ইজিবাইক চালক রহিম এ বিষয়ে রূপসা থানায় অভিযোগ জানান। রূপসা থানার ওসি মো.
তারা আরো জানান, ওসি মাহফুজুর রহমান বুলু নামে এক মোটর শ্রমিককে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নেওয়ার চেষ্টা করেন। তার আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকরা সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন এবং বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতরা ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশের সঙ্গে বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে তারা যৌথ বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে দুপুর ১টার দিকে মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা সাধারণ শ্রমিকদের শান্ত করে পুনরায় বাস চলাচল শুরু করান।
পূর্ব রূপসা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মোল্লা বলেন, “ইজিবাইক ও মাহিন্দ্রার মতো যান মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ। এরাই ঝামেলা সৃষ্টি করে। কিছু বাস শ্রমিক মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করে হুটহাট গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন। এটি খুবই দুঃখজনক।”
তিনি আরো বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হয়। হুটহাট যাতে শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করতে না পারে, সেজন্য ২৩ এপ্রিল আমরা শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায় বসব।”
রূপসা থানার ওসি মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, “থ্রি-হুইলার ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আমরা পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাই। সেখনে বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি সমাধান করা হয়।”
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’