‘বিপ্লবীরা মরে না তারা মৃত্যুঞ্জয়ী’
Published: 19th, April 2025 GMT
বাংলার ইতিহাসে গৌরবগাথা কম নয়। কিন্তু প্রায় স্মৃতির অতলে চলে গেছে আমাদের জাতীয় জীবনের এক অমূল্য বীরত্বগাথা চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ। সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের সমস্ত অহংকার চূর্ণ করে দিয়েছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে কয়েকজন তরুণ যোদ্ধা। দোর্দণ্ড প্রতাপের ব্রিটিশ শাসনের বিশাল ভারতবর্ষে চট্টগ্রামকে ৪ দিন স্বাধীন করে রেখেছিল কয়েকজন অকুতোভয় বিপ্লবী। সেই ঘটনাকে স্মরণ করে ‘যুব বিদ্রোহ উৎসব’ উদযাপন করল চট্টগ্রামের বোধন আবৃত্তি পরিষদ।
শুক্রবার চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বোধন ‘রাস্তা জুড়ে রোদ হোক’ শিরোনামে তৃতীয়বারের মতো এই যুব বিদ্রোহ উৎসবের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কথামালায় অংশ নেন সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক সুভাষ দে, কবি ও প্রাবন্ধিক কমলেশ দাশগুপ্ত, কথাসাহিত্যিক ড.
প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক সুভাষ দে বলেন, ‘যুব বিদ্রোহ একদিনে আসেনি। বিপ্লবীদের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা পরিশ্রম ও জীবন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এটি এক যুগান্তকারী ইতিহাস হিসেবে রচিত হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের চরমতম এ সত্যকে আমরা ভুলতে বসেছি।’
কবি কমল দাশগুপ্ত বলেন, ‘ইতিহাস সবসময় স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বিপ্লবীরা মরে না, তারা মৃত্যুঞ্জয়ী। চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে যারা নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন সেই মহান শহীদদের আদর্শকে তরুণদের সামনে তুলে ধরতে হবে।’
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ড. আজাদ বুলবুল বলেন, ‘যুব বিদ্রোহের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক-প্রগতিশীল সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বিপ্লবীদের ভুলে যাওয়া যাবে না। নব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে গর্বের ইতিহাস।’
কথামালা শেষে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্য নিকেতন ও নৃত্যরূপ একাডেমি। দলীয় গানে অংশ নেয় ধ্রুপদ সংগীত নিকেতন।
বোধনের অর্থ সম্পাদক অনুপম শীলের সঞ্চালনায় একক আবৃত্তিতে অংশ নেন বোধনের আবৃত্তিশিল্পী সুবর্ণা চৌধুরী, পল্লব গুপ্ত, সংগীতা কর চৌধুরী, সুচয়ন সেনগুপ্ত, শর্মিলা বড়ুয়া, জলিল উল্লাহ ও ত্রয়ী দে। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে বোধন আবৃত্তি পরিষদের শিল্পীরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ত যশ ল প
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’