আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই গণহত্যার বিচার, ফ্যাসিবাদী অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবিলম্বে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধকরণের দাবি জানিয়েছে কয়েকটি সংগঠন। 

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বরাবর এক স্মারকলিপিতে তারা এ দাবি জানান। জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স, অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, স্টুডেন্ট এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি নামের সংগঠনগুলোর পাঁচ প্রতিনিধিরা এ দাবি তুলে ধরেন।

আইন উপদেষ্টার কাছে ওই স্মারকলিপিতে তারা লিখেছেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যৌথ নির্দেশনায় এদেশের সাধারণ নাগরিকদের ওপর চালানো হয়েছে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ, যার ফলে দুই সহস্রাধিক মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং বহু মানুষ এখনও পঙ্গু ও নিখোঁজ। এই গণহত্যার বিচার এখনও শুরু হয়নি। বিচার প্রক্রিয়া হচ্ছে চরম ধীরগতির, নানাভাবে প্রতিহত করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে। বিচারহীনতার এই ধারাবাহিকতা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৩২ ধারার অপব্যবহারের মাধ্যমে, যা সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি গ্রহণের বিধান দেয়। এই ধারা বর্তমানে রাষ্ট্রীয় খুনিদের বিচার এড়ানোর আইনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বহু প্রশাসনিক কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে। হাজার হাজার ভুক্তভোগী এখনও মামলা ও হয়রানির মুখোমুখি, অনেক নিরীহ নাগরিককে গুম-খুনের শিকার হতে হয়েছে, যাদের অধিকাংশের নামই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা মামলা ও মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত।

স্মারকলিপিতে দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফৌজদারি কার্যবিধি ১৩২ ধারা অবিলম্বে বাতিল বা সংস্কার করতে হবে, যাতে সরকারি কর্মকর্তারা দায়মুক্তি না পান। আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে সংগঠিত গণহত্যার বিচার, শাপলায় সংঘটিত গণহত্যা, পিলখানা, ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ২৬ মার্চসহ সকল হত্যাকাণ্ডের দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গসংগঠন এবং ১৪ দলের যেসব নেতা গত তিন নির্বাচনে ক্ষমতায় ছিলেন-তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বিগত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। গণহত্যা তদন্তে অসহযোগিতাকারী সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এখনও গুম থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান দিতে হবে এবং আয়নাঘর এবং গুমে জড়িতদের শাস্তির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিগত জুলাই আন্দোলনে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মামলাগুলোসহ গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দায়ের করা ষড়যন্ত্র, প্রহসন এবং রাজনৈতিক হয়রানিমূলক সকল মামলা বাতিল করতে হবে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে, অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনসমূহকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নামক দলটি বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, রাষ্ট্রকে ব্যবহার করেছে নিজস্ব স্বার্থে এবং জনগণের ওপর চালিয়েছে ফ্যাসিবাদী নিপীড়ন। এই মুহূর্তে এ দলটিকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিল করা না হলে ভবিষ্যতে দেশকে আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা আশাবাদী, আপনি এই সংকটময় সময়ে সাহসী ও ন্যায়নিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। ইতিহাসের আদালতে আপনি ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট স ম রকল প গণহত য র ব চ র স ম রকল প ত ব যবহ র কর কর মকর ত গ রহণ ক ষমত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন ফ্রিল্যান্সাররা। তবে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে না থাকায় পারিশ্রমিক পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। তাই বাংলাদেশে পেপ্যালসহ বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে দ্রুত চালুর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ও আইটি প্রফেশনাল কমিউনিটি। এ বিষয়ে সরকারের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছে সংগঠনটি। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

ফ্রিল্যান্সার ও আইটি পেশাজীবীরা বলেন, বিশ্বজুড়ে যখন ফ্রিল্যান্স কাজের মাধ্যমে আয় বাড়ছে, তখন পেমেন্ট গেটওয়ে সমস্যার কারণে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার ও আইটি উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা প্রতিবছর বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন। কিন্তু এখনও বাংলাদেশে পেপ্যাল, ওয়াইস, স্ট্রিপের মতো জনপ্রিয় পেমেন্ট সেবা চালু হয়নি। ফলে তরুণ উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সাররা আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে জটিলতায় পড়ছেন।

ফ্রিল্যান্সার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে আইটি ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করছেন। ৩ দশমিক ২ শতাংশ বৈশ্বিক বাজার শেয়ার নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং বাজার। এ কারণে গেটওয়ের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এখনও নানা জটিলতায় দেশে পেপ্যালের মতো আন্তর্জাতিক গেটওয়ে চালু হচ্ছে না। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশে এসব গেটওয়ে চালু আছে। 

ফ্রিল্যান্সার আতাউর রহমান বলেন, পেমেন্ট গেটওয়ে না থাকায় ক্রেতাদের ভিন্ন মার্কেটে নিয়ে যাচ্ছে অন্য দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে স্টারলিংক অনুমোদন পেয়েছে। আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক গেটওয়েও বাংলাদেশে চালু হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গ্রাফিক্স ডিজাইনার এমরাজিনা ইসলাম, এইচএম ওসমান শাকিল, গোলাম কামরুজ্জামান, আতিকুর রহমান, সুমন সাহা, মিনহাজুল আসিফ, রাসেল খন্দকার, সাজিদ ইসলাম প্রান্তসহ দেড় শতাধিক আইটি ও ফ্রিল্যান্স পেশাজীবী।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৫১ ফিলিস্তিনি নিহত
  • বিশ্বনেতাদের সতর্ক দৃষ্টির সামনেই ঘটছে গণহত্যা
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • ইসলামবিরোধী প্রস্তাবনা রুখে দেওয়া হবে: মামুনুল হক
  • ‘বিশ্বের নজরদারির মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল’
  • রাখাইনে করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হেফাজতের
  • ইয়েমেনে মার্কিন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা ইরানের
  • নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি