অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সংস্কারই সবার আগে জরুরি বলে মনে করছে নারী অধিকার আন্দোলন। সংগঠনটি বলেছে, বৃহত্তর নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে, এমন নারীদের নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করে তারপর সংস্কারের প্রস্তাব আনা দরকার।

গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। এ নিয়ে সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে নারী অধিকার আন্দোলন।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির ওপর ভিত্তি করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। প্রতিবেদনের সুপারিশের কিছু অংশ ইতিবাচক হলেও কিছু বিষয় দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী সমাজের প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ এখনো সিডও সনদের ২ ও ১৬ (১) (গ) ধারা সংরক্ষিত রেখেছে। যেখানে বিয়ে, তালাকসহ পারিবারিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের পূর্ণ সমতার কথা বলা হয়েছে। কমিশন সেই সংরক্ষণ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে, যা অপ্রয়োজনীয় এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অসম্মানসূচক। বরং সিডও সনদে স্বাক্ষরকালে যেভাবে এই সংরক্ষণ রাখা হয়েছিল, সেটি বজায় রেখেই এর বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো উচিত।

নারীর প্রতি সব রকম বৈষম্য বিলোপ সনদকে (কনভেনশন অন দ্য এলিমিনেশন অব অল ফর্মস অব ডিসক্রিমিনেশন অ্যাগেইনস্ট উইমেন) সংক্ষেপে সিডও সনদ বলে। ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘে সিডও সনদ গৃহীত হয়। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সিডও সনদে স্বাক্ষর ও অনুমোদন করে।

নারী অধিকার আন্দোলনের বিবৃতিতে বলা হয়, সুপারিশে সংবিধানে পরিবর্তন এনে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চয়তাসহ অভিন্ন পারিবারিক আইন, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, অভিভাবক ও প্রতিপাল‍্য আইন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন, ধর্ষণ প্রতিরোধ আইন, নাগরিকত্ব আইন ও সাক্ষী সুরক্ষা আইনে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে।

নারী অধিকার আন্দোলন মনে করছে, এসব সুপারিশ পবিত্র কোরআনের বিধানের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের ওপর একটি সুপরিকল্পিত আঘাত। যৌন পেশাকে সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা নারী সমাজের জন্য চরম অবমাননাকর বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এ জন্য নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সংস্কার সবার আগে জরুরি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের মূলধারার নারীদের প্রতিনিধিত্বে একটি নতুন কমিশন গঠন করে এ প্রতিবেদনটি সংশোধন করা হোক, যাতে করে এটি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।

আরও পড়ুননারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদ ১৯ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ