নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সংস্কার চায় নারী অধিকার আন্দোলন
Published: 21st, April 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সংস্কারই সবার আগে জরুরি বলে মনে করছে নারী অধিকার আন্দোলন। সংগঠনটি বলেছে, বৃহত্তর নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে, এমন নারীদের নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করে তারপর সংস্কারের প্রস্তাব আনা দরকার।
গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। এ নিয়ে সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে নারী অধিকার আন্দোলন।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির ওপর ভিত্তি করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। প্রতিবেদনের সুপারিশের কিছু অংশ ইতিবাচক হলেও কিছু বিষয় দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী সমাজের প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ এখনো সিডও সনদের ২ ও ১৬ (১) (গ) ধারা সংরক্ষিত রেখেছে। যেখানে বিয়ে, তালাকসহ পারিবারিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের পূর্ণ সমতার কথা বলা হয়েছে। কমিশন সেই সংরক্ষণ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে, যা অপ্রয়োজনীয় এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অসম্মানসূচক। বরং সিডও সনদে স্বাক্ষরকালে যেভাবে এই সংরক্ষণ রাখা হয়েছিল, সেটি বজায় রেখেই এর বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো উচিত।
নারীর প্রতি সব রকম বৈষম্য বিলোপ সনদকে (কনভেনশন অন দ্য এলিমিনেশন অব অল ফর্মস অব ডিসক্রিমিনেশন অ্যাগেইনস্ট উইমেন) সংক্ষেপে সিডও সনদ বলে। ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘে সিডও সনদ গৃহীত হয়। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সিডও সনদে স্বাক্ষর ও অনুমোদন করে।
নারী অধিকার আন্দোলনের বিবৃতিতে বলা হয়, সুপারিশে সংবিধানে পরিবর্তন এনে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চয়তাসহ অভিন্ন পারিবারিক আইন, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন, ধর্ষণ প্রতিরোধ আইন, নাগরিকত্ব আইন ও সাক্ষী সুরক্ষা আইনে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে।
নারী অধিকার আন্দোলন মনে করছে, এসব সুপারিশ পবিত্র কোরআনের বিধানের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের ওপর একটি সুপরিকল্পিত আঘাত। যৌন পেশাকে সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা নারী সমাজের জন্য চরম অবমাননাকর বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এ জন্য নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সংস্কার সবার আগে জরুরি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের মূলধারার নারীদের প্রতিনিধিত্বে একটি নতুন কমিশন গঠন করে এ প্রতিবেদনটি সংশোধন করা হোক, যাতে করে এটি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
আরও পড়ুননারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদ ১৯ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।