আগের দিন এক সহপাঠীকে মারধরের জের ধরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আজ মঙ্গলবার দল বেঁধে হামলা করেন ঢাকা সিটি কলেজে। দুপুরে প্রায় তিন ঘণ্টা দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত সাতজন আহত এবং সিটি কলেজে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর ঠেকাতে পুলিশ সদস্যরা কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ করেছে সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কী নিয়ে এই সংঘর্ষ, সে বিষয়ে পুলিশ বলছে, গতকাল ঢাকা কলেজের পোশাক পরিহিত (উচ্চমাধ্যমিক) এক শিক্ষার্থীকে কয়েকজন সায়েন্স ল্যাব মোড়ে মারধর করে। এ সময় ওই শিক্ষার্থী পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, যারা মারধর করেছে, তাদের শরীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পোশাক ছিল না। এ ঘটনায় সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়িত, এমন দাবি করে আজ বেলা ১১টার পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের ফটকে এসে হামলা ও ভাঙচুর করেন। এর জেরেই তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওই হামলার পর দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় লাঠিসোঁটা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেন দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশও লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে দফায় দফায় সরিয়ে দেয়। বেলা তিনটার পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। এ সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে অন্তত সাতজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে তাঁদের মধ্যে কে কোন কলেজের শিক্ষার্থী, তা জানা যায়নি।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, গতকালের মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের এখানে এসে ভাঙচুর চালান। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে দুই পক্ষকে দুই দিকে ঠেলে দেয়। প্রথমে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের তাঁদের ক্যাম্পাসে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বের হয়ে আসে। পরে তাঁদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। এসব শিক্ষার্থীর (সিটি কলেজ) মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল কেউ কেউ যেকোনো কারণেই হোক পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। তারপরও তাঁদের বুঝিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে যেতে বলা হয়। তাঁদের কেউ কথা শুনে আবার কেউ কথা শোনেন না। তাঁরা পুলিশের ওপরে ব্যাপক আকারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তারপর শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে।

ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে মারমুখী ভঙ্গিতে এক পক্ষের শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানী সায়েন্স ল্যাব এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কল জ র শ ক ষ র থ দ র কল জ র শ ক ষ র থ র স ঘর ষ র ঘটন ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত নেতা গ্রেপ্তার

সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে চাঁদা নেওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম ওরফে অপুকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জানে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

আরও পড়ুনচাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতাসহ আটক ৫২৬ জুলাই ২০২৫

মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় জানে আলম জড়িত।

গত ১৭ জুলাই গুলশানে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দেন আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদসহ কয়েকজন। তাঁরা শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। সিদ্দিক আবু জাফর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দেন। গত শনিবার রাতে চাঁদার বাকি টাকা আনতে যান তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকে রাজ্জাকসহ পাঁচজন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। বাকি চারজন হলেন ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও অপ্রাপ্তবয়স্ক একজন। ঘটনাটিতে গুলশান থানায় মামলা করেছেন সিদ্দিক আবু জাফর। মামলার এজাহারে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের বাইরে অপু নামের একজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া প্রাপ্তবয়স্ক চার আসামিকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আর প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আরেকজনকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুনপ্রথমে পুলিশ নিয়ে বাসায়, পরে হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা ২৮ জুলাই ২০২৫

রাজ্জাক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় জানে আলম ও আবদুর রাজ্জাক উভয়কে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে।

পুলিশ জানায়, শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার পর রাজ্জাকসহ কয়েকজন তা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেন। নিজের ভাগের পাঁচ লাখ টাকা রাজ্জাক তাঁর বাড্ডার ভাড়া বাসায় (মেস বাসা) রাখেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুনচাঁদাবাজির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ জন ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ২ জন বহিষ্কার২৬ জুলাই ২০২৫

এর আগে গত বুধবার ডিএমপির এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজ্জাকের একটি ভাড়া বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার ৪টি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। এটি বাসাটি পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় অবস্থিত বলে গতকাল জানায় গুলশান থানা–পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এই সোয়া দুই কোটি টাকার চেক নেওয়া হয় রংপুর-৬ আসনের (পীরগঞ্জ) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘ট্রেড জোন’ থেকে।

আরও পড়ুনসমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি: আবদুর রাজ্জাকসহ চারজন সাত দিনের রিমান্ডে২৭ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ