কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নিয়েছে ভারত। আজ বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। পরে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সিদ্ধান্তগুলো সাংবাদিকদের জানান।

বিক্রম মিশ্রি জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে যে পরিমাণ পানি পাকিস্তানের পাওয়ার কথা, চুক্তি স্থগিত করায় আপাতত তা ব্যাহত হবে। অর্থাৎ চুক্তি অনুযায়ী পানি পাকিস্তান পাবে না।

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তিতে সই করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান। এ চুক্তির আওতায় সিন্ধু, চন্দ্রভাগা, শতদ্রু, ঝিলাম ও বিপাশা নদীর পানি পাকিস্তানে প্রবাহিত হয়। এই গ্রীষ্মকালে চুক্তিটি স্থগিত করার অর্থ চুক্তি অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি পাকিস্তান পাবে না।

নয়াদিল্লির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া। আগামীকাল বুধবার থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ স্থলসীমান্ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ওই সীমান্ত দিয়ে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের সবাইকে ১ মের মধ্যে ফিরে যেতে হবে।

তৃতীয় সিদ্ধান্ত হলো দিল্লিতে পাকিস্তানের হাইকমিশনে নিযুক্ত সব সামরিক উপদেষ্টাকে বহিষ্কার। তাঁদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনছে নয়াদিল্লি।

চতুর্থ সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, হাইকমিশনগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তাদের সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হবে।

পঞ্চম সিদ্ধান্ত হলো সীমান্তচৌকি বন্ধ ও দূতাবাসে কর্মীর সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি পাকিস্তানিদের ভারতে আসাও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে সব পাকিস্তানির জন্য সার্ক ভিসা বাতিল করার কথা জানানো হয়েছে। এই ভিসায় যাঁরা ভারতে রয়েছেন, তাঁদের ফেরত যাওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির বৈঠকে পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনার দায় পুরোপুরি পাকিস্তানের ওপর চাপানো হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পেহেলগাম শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বৈসরণ উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর ওই হামলা হয়। পর্যটকদের কাছে বিপুল জনপ্রিয় এ উপত্যকাকে ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। গতকালের এ ঘটনা ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিতে সম্ভাব্য সবকিছু করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামের কাছে এক প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পর শহরটিতে এখনো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অবশ্য সেখানে অল্প অল্প করে পর্যটক ফিরতে শুরু করেছেন।

গত সপ্তাহে শহরের প্রধান মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, খালি হয়ে গিয়েছিল হোটেলগুলো। এখন সেখানে আবার অল্প অল্প করে প্রাণ ফিরছে।

গত মঙ্গলবার পেহেলগাম থেকে তিন মাইল (৫ কিলোমিটার) দূরে পাহাড়চূড়ার উপত্যকা বৈসারানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের ওপর গুলি চালায় একদল বন্দুকধারী। এই বৈসারানকে অনেক সময় ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়।

বৈসারানের হামলাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে এবং ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কাশ্মীরের দুই অংশ দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তরে পুরো অঞ্চলকে দুই দেশই নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।

দিল্লি এ হামলার কোনো সামরিক জবাব দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।

১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।

১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।

পেহেলগামের মতো এলাকার অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। হামলার জেরে সেখানে বহু মানুষের জীবিকা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনকাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড়, ভাঙা হচ্ছে বাড়ি: ‘আমার ভাই জড়িত থাকলেও পরিবারের অপরাধ কী’১৮ ঘণ্টা আগেহামলার পরদিন (২৩ এপ্রিল) ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পেহেলগামের বৈসারান এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাপ্তাই হ্রদের ‘দ্বীপে’ রিসোর্ট-কটেজ, টানছে পর্যটক
  • ভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট
  • হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা
  • কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে চতুর্থ দিনের মতো গোলাগুলি