রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হলে বিকল্প কী, সে পরিকল্পনা নেই বাংলাদেশের
Published: 24th, April 2025 GMT
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বৈশ্বিক ও ভূরাজনৈতিক নানা বাস্তবতায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এর আগের ঐতিহাসিক সংকটগুলোর আলোকে বাংলাদেশ কোনো রোহিঙ্গা নীতি বা শরণার্থী নীতি তৈরি করেনি। প্রত্যাবাসন চেষ্টা ব্যর্থ হলে বিকল্প রোডম্যাপ কী হবে, সে পরিকল্পনা বাংলাদেশের নেই।
বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকস (ঢায়রা) আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জেস: বাংলাদেশের জন্য নতুন কূটনৈতিক কৌশলের সন্ধানে’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক বুলবুল সিদ্দিক বলেন, ‘প্রত্যাবাসনে জটিলতার একটা বড় জায়গা হচ্ছে আমরা এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত না আমাদের রোডম্যাপটা কী। রাষ্ট্র হিসেবে আমরা বিগত সময়ের সংকটগুলো থেকে শিক্ষা নেইনি।’
রোহিঙ্গাদের কোন ‘লেন্সে’ আমরা দেখব সে বিষয়ক একটা নীতি দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা বিষয়টা আছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীন। এটা তো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না, এটি একটি হিউম্যানিটারিয়ান ক্রাইসিস (মানবিক সংকট)। আর একটা জায়গা থেকে তাদের আমরা দেখি। সেটি হলো সিকিউরিটির (নিরাপত্তা) জায়গা থেকে।’
ঐতিহাসিক সমস্যাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে রোহিঙ্গাবিষয়ক একটা রূপরেখা থাকা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন বুলবুল সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন না হওয়াতে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থান, শিক্ষাসহ তাদের জীবনমানে আমরা খুব বেশি নজর দিচ্ছি না। প্রত্যাবাসন যদি না হয় তাহলে আমাদের বিকল্প রোডম্যাপটা কী সে বিষয়েও আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই।’
চীন বা ভারত তাদের যে স্বার্থ, সেটির বাইরে যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা নীতি প্রণয়ন করা দরকার। প্রত্যাবাসন যদি না হয় তাহলে হোস্ট ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।’
বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমার সরকারের ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক চাল হতে পারে কি না, এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আরাকান আর্মির সাথে আলোচনা না করে এমন ঘোষণা দিলে সেটি কখনো ফলপ্রসূ হবে না।
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব স্যোশাল সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজের অধ্যাপক বখতিয়ার আহমদ বলেন, বার্মিজ সরকারের যে একটা হোমোজেনাস রাষ্ট্র (এক জাতিগোষ্ঠীর রাষ্ট্র) গঠন করার আকাঙক্ষা সেটি অনেক পুরোনো। ১৯৬০–এর দশক থেকে এটি তাদের আলোচনায় ছিল। ১৯৭০–এর দশকের শেষে এসে চেষ্টা করা হয়েছে। ’৮০–এর দশকে চেষ্টা হয়েছে। ’৯০–তে এসে তারা কিছুটা সফল হয় কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠাতে।
বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের সাথে ভারতের যে গভীর সম্পর্ক দেখা গেছে, তার ছিটেফোঁটা প্রতিফলন রোহিঙ্গা সংকটে দেখা যায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কোনো ফোরামে ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমর্থন দেয়নি। এ কারণে ভূরাজনীতি ও কূটনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেটুকু কূটনৈতিক সফলতা আমরা ১৯৭০, ১৯৮০ ও ১৯৯০–এ দেখেছি, ২০১৭ সালের পর সেটি দেখা যায়নি।’
রোহিঙ্গা সংকট ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক কিছু ভুল ছিল বলে মনে করেন অধ্যাপক বখতিয়ার আহমদ। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ভূরাজনীতির বিষয় থেকে রোহিঙ্গা সংকটকে আলাদা করে দেখার একটা প্রবণতা আছে। আমাদের প্রথম স্বীকার করতে হবে যে রোহিঙ্গা সংকট একটা আত্মপরিচয়ের সংকট। এটি একটি ভূখণ্ডগত পরিচয়।’
আরাকান রাজ্যে রোহাং বা রোয়াং বলে যে অঞ্চলটি আছে সে অঞ্চলের ওপর রোহিঙ্গাদের যে টেরিটোরিয়াল ক্লেইম, সেটিই রোহিঙ্গাদের আত্মপরিচয় উল্লেখ করে তিনি সে পরিচয়কে স্বীকার করে গ্লোবাল ফোরামে তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অধ্যাপক বখতিয়ার আহমদ বলেন, ‘আমাদের তখনকার সরকার রোহিঙ্গাদের অদ্ভুত একটা নামকরণ করেছে এফডিএমএন (জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক) নামে। এটাতে একটা বড় কূটনৈতিক ও কৌশলগত ভুল হয়েছে। শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা পাওয়ার যে আলোচনা, সেটাতে আমরা সুবিধা করতে পারছি না। এটা রোহিঙ্গাদের যে টেরিটোরিয়াল ক্লেইম, সেটিতেও হেল্প করছে না। কারণ, আমরা তাদের রোহিঙ্গা বলতে কার্পণ্য করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়লের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ শাহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স ও সোশিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইশরাত জাকিয়া সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়মা আহমদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব লর সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা হোসেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র র জন ত আম দ র ক টন ত র একট
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে আসতে চায় চীনা বহুজাতিক কোম্পানি টেনসেন্ট, কী ব্যবসা করে তারা
চীনা বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি টেনসেন্ট বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এক ফেসবুক পোস্টে এই তথ্য জানান।
ফেসবুক পোস্টে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লেখেন, বাংলাদেশে এসেছে মার্কিন জায়ান্ট স্টারলিংক। আজ (সোমবার) তাদের লাইসেন্স আবেদন অনুমোদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশে বিগ টেক জায়ান্ট আসার যাত্রাটা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ধরেই শুরু হলো। এভাবে আসবে আরও অনেকেই।
চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট টেনসেন্ট বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে একই পোস্টে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লিখেছেন, ‘আজ আমরা চায়নিজ জায়ান্ট টেনসেন্টের সঙ্গে অফিশিয়ালি বসেছি। তারাও বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের দ্রুততম সময়ে পলিসি সাপোর্টের আশ্বাস দিয়েছি।’
অসাইরিস গ্রুপও বাংলাদেশে আসছে বলে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে হাইপার স্কেলার ক্লাউড ও ডেটা সেন্টার হবে বাংলাদেশি ডাটা ও ক্লাউড কোম্পানি যাত্রার হাত ধরে। এখানে হচ্ছে বিগ জায়ান্টদের জন্য বিশ্বমানের সিকিউরড ক্লাউড সে-আপ, যেখানে আসতে পারে মেটা, গুগলের পেলোড। এমন অভাবনীয় সব উপহার বাংলাদেশকে দিতে চলছেন অধ্যাপক ইউনূস।
টেনসেন্টের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয় চীনের শেনজেনে অবস্থিত।
আরও পড়ুনবাংলাদেশের গেমশিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী চীনের টেনসেন্ট২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব