রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বৈশ্বিক ও ভূরাজনৈতিক নানা বাস্তবতায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এর আগের ঐতিহাসিক সংকটগুলোর আলোকে বাংলাদেশ কোনো রোহিঙ্গা নীতি বা শরণার্থী নীতি তৈরি করেনি। প্রত্যাবাসন চেষ্টা ব্যর্থ হলে বিকল্প রোডম্যাপ কী হবে, সে পরিকল্পনা বাংলাদেশের নেই।

বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকস (ঢায়রা) আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জেস: বাংলাদেশের জন্য নতুন কূটনৈতিক কৌশলের সন্ধানে’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক বুলবুল সিদ্দিক বলেন, ‘প্রত্যাবাসনে জটিলতার একটা বড় জায়গা হচ্ছে আমরা এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত না আমাদের রোডম্যাপটা কী। রাষ্ট্র হিসেবে আমরা বিগত সময়ের সংকটগুলো থেকে শিক্ষা নেইনি।’

রোহিঙ্গাদের কোন ‘লেন্সে’ আমরা দেখব সে বিষয়ক একটা নীতি দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা বিষয়টা আছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীন। এটা তো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না, এটি একটি হিউম্যানিটারিয়ান ক্রাইসিস (মানবিক সংকট)। আর একটা জায়গা থেকে তাদের আমরা দেখি। সেটি হলো সিকিউরিটির (নিরাপত্তা) জায়গা থেকে।’

ঐতিহাসিক সমস্যাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে রোহিঙ্গাবিষয়ক একটা রূপরেখা থাকা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন বুলবুল সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন না হওয়াতে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থান, শিক্ষাসহ তাদের জীবনমানে আমরা খুব বেশি নজর দিচ্ছি না। প্রত্যাবাসন যদি না হয় তাহলে আমাদের বিকল্প রোডম্যাপটা কী সে বিষয়েও আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই।’

চীন বা ভারত তাদের যে স্বার্থ, সেটির বাইরে যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা নীতি প্রণয়ন করা দরকার। প্রত্যাবাসন যদি না হয় তাহলে হোস্ট ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।’

বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমার সরকারের ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক চাল হতে পারে কি না, এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আরাকান আর্মির সাথে আলোচনা না করে এমন ঘোষণা দিলে সেটি কখনো ফলপ্রসূ হবে না।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব স্যোশাল সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজের অধ্যাপক বখতিয়ার আহমদ বলেন, বার্মিজ সরকারের যে একটা হোমোজেনাস রাষ্ট্র (এক জাতিগোষ্ঠীর রাষ্ট্র) গঠন করার আকাঙক্ষা সেটি অনেক পুরোনো। ১৯৬০–এর দশক থেকে এটি তাদের আলোচনায় ছিল। ১৯৭০–এর দশকের শেষে এসে চেষ্টা করা হয়েছে। ’৮০–এর দশকে চেষ্টা হয়েছে। ’৯০–তে এসে তারা কিছুটা সফল হয় কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠাতে।

বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের সাথে ভারতের যে গভীর সম্পর্ক দেখা গেছে, তার ছিটেফোঁটা প্রতিফলন রোহিঙ্গা সংকটে দেখা যায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কোনো ফোরামে ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমর্থন দেয়নি। এ কারণে ভূরাজনীতি ও কূটনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেটুকু কূটনৈতিক সফলতা আমরা ১৯৭০, ১৯৮০ ও ১৯৯০–এ দেখেছি, ২০১৭ সালের পর সেটি দেখা যায়নি।’

রোহিঙ্গা সংকট ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক কিছু ভুল ছিল বলে মনে করেন অধ্যাপক বখতিয়ার আহমদ। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ভূরাজনীতির বিষয় থেকে রোহিঙ্গা সংকটকে আলাদা করে দেখার একটা প্রবণতা আছে। আমাদের প্রথম স্বীকার করতে হবে যে রোহিঙ্গা সংকট একটা আত্মপরিচয়ের সংকট। এটি একটি ভূখণ্ডগত পরিচয়।’

আরাকান রাজ্যে রোহাং বা রোয়াং বলে যে অঞ্চলটি আছে সে অঞ্চলের ওপর রোহিঙ্গাদের যে টেরিটোরিয়াল ক্লেইম, সেটিই রোহিঙ্গাদের আত্মপরিচয় উল্লেখ করে তিনি সে পরিচয়কে স্বীকার করে গ্লোবাল ফোরামে তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অধ্যাপক বখতিয়ার আহমদ বলেন, ‘আমাদের তখনকার সরকার রোহিঙ্গাদের অদ্ভুত একটা নামকরণ করেছে এফডিএমএন (জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক) নামে। এটাতে একটা বড় কূটনৈতিক ও কৌশলগত ভুল হয়েছে। শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা পাওয়ার যে আলোচনা, সেটাতে আমরা সুবিধা করতে পারছি না। এটা রোহিঙ্গাদের যে টেরিটোরিয়াল ক্লেইম, সেটিতেও হেল্প করছে না। কারণ, আমরা তাদের রোহিঙ্গা বলতে কার্পণ্য করছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়লের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ শাহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স ও সোশিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইশরাত জাকিয়া সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়মা আহমদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব লর সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা হোসেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র র জন ত আম দ র ক টন ত র একট

এছাড়াও পড়ুন:

কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস দেওয়ার সম্ভাবনা নেই: জ্বালানি উপদেষ্টা

জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতাম।

শুক্রবার সকালে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দুটি গ্যাসকূপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

সিলেটের যেসব এলাকা থেকে গ্যাস উত্তোলন হয় সেসব এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হবে কি? -এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, শিল্প কারখানা যেখানে গ্যাস পাচ্ছে না সেখানে বাসা বাড়িতে গ্যাস দেওয়া অপচয়। নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত এই সুযোগ বন্ধ রাখা উচিত। তবে যেসব এলাকায় গ্যাস উত্তোলন করা হয়, সেসব এলাকায় স্বল্পমূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ করবে সরকার।

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন কমছে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানি বেড়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানোর চেষ্টা চলছে।

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, কৈলাশটিলা-৭ ও সিলেট-১০ গ্যাস কূপ থেকে থেকে প্রতিদিন ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

শুক্রবার সকালে গোলাপগঞ্জে কৈলাসটিলা গ্যাসফিল্ড পরিদর্শন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি উপজেলার পৌর এলাকার কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ডের ৭ নম্বর কূপ এলাকা, বাপেক্সের রিগ বিজয়-১২ ও কৈলাশটিলা ১ নম্বর কূপে ওয়ার্কওভারের নিমিত্ত প্রস্তুতকৃত রিগপ্যাড পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি একই উপজেলাধীন কৈলাশটিলা এমএসটি প্লান্ট পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের (অপারেশন বিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মো. খালিদ আহমেদ, বাপেক্স/এসজিএফএলের প্রকৌশলী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহেব আহমদ, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেহসানুল ইসলাম, সেক্রেটারি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনির হোসেন।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ডের ডিজিএম ফারুক আহমদ, কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ড এমএসটি প্লান্টের ডিজিএম জাফর রায়হানসহ সংশ্লিষ্ট কূপের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলেটে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় মামলা, আসামি ১৫৯
  • জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহরে বাধা: ১৭ বিশিষ্ট নাগরিক ও ১৯ সংগঠনের নিন্দা
  • আপেল মাহমুদ অথবা রবিঠাকুরের কাদম্বিনীর গল্প
  • বালু ব্যবসার নামে প্রতারণা কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা
  • জাফলংয়ের পাথর কোয়ারিতে এখনও রাজনৈতিক ছায়া
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন জামায়াতের আমিরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • মরিচক্ষেতে গ্রেনেড, নিষ্ক্রিয় করলেন সেনাসদস্যরা
  • কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস দেওয়ার সম্ভাবনা নেই: জ্বালানি উপদেষ্টা