কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহতের জেরে গতকাল সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়েছিল ভারত। আজ পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে তার পাল্টায় বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাহ শরিফের সভাপতিত্বে ওই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পাঠানো বিবৃতিতে সিদ্ধান্তগুলো জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান কঠোরভাবে ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা নাকচ করেছে। পাকিস্তান বলেছে, এই চুক্তি বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় হওয়া একটি বাধ্যবাধকতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি, এককভাবে এই চুক্তি স্থগিতের কোনো বিধান নেই। পানি ভারতের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু, তা দেশের ২৪ কোটি মানুষের জীবনরক্ষা করে এবং যে কোনো মূল্যে এই পানি পাওয়ার বিষয়টি রক্ষা করা হবে। সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান যে পানি পাবে, তার প্রবাহ বন্ধ বা অন্যদিকে নেওয়ার যে কোনো চেষ্টা এবং ভাটি অঞ্চলের অধিকার ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা যুদ্ধের শামিল বলে বিবেচনা করা হবে এবং জাতীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করে এর জবাব দেওয়া হবে।

পাকিস্তান বলেছে, ভারতের বেপরোয়া ও দায়িত্বহীন আচরণের, যা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তসমূহ এবং আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে, প্রেক্ষিতে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিতের অধিকার প্রয়োগ করবে এবং তা শুধু সিমলা চুক্তি স্থগিতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আর তা ভারত পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসবাদ উসকে দেওয়া, আন্তঃসীমান্ত হত্যা বন্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবসমূহ না মেনে চলা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

পাকিস্তান অবিলম্বে ওয়াগা সীমান্ত চৌকি বন্ধ করছে। এই পথ দিয়ে ভারত থেকে সব ধরনের চলাচল বন্ধ থাকবে। বৈধভাবে যারা এই পথ দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছেন তারা অবিলম্বে এখান দিয়ে ফেরত যেতে পারবেন না। তবে ৩০ এপ্রিলের পরে এই সুযোগ দেওয়া হবে না।

ভারতীয় নাগরিকদের দেওয়া সব সার্ক ভিসা বাতিল করেছে পাকিস্তান। এই ভিসার আওতায় পাকিস্তানে অবস্থানরত সব ভারতীয় নাগরিককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশটি ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য শিখ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হচ্ছে না।

ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনে নিযুক্ত দেশটির প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। অবিলম্বে তাঁদেরকে পাকিস্তান ছাড়তে বলা হয়েছে। তাঁদের সহায়তায় নিযুক্ত কর্মীদেরও ভারতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনে কর্মকর্তার সংখ্যা ৩০ জনে নামিয়ে আনতে বলে পাকিস্তান। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তা করতে বলা হয়েছে।

ভারতের মালিকানাধীন বা ভারত থেকে পরিচালিত সব বিমান পরিবহন সংস্থার জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিতের ঘোষণাও দিয়েছে ইসলামাবাদ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ