ফেনীতে গণমাধ্যমে কর্মরত একাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন রহিম উল্লাহ নামের এক বিএনপি নেতা। রহিম উল্লাহ জেলার ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। একটি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে গতকাল বুধবার বিকেলে এই মামলা করেন তিনি। তবে অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক দাবি করে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার কর্মরত সাংবাদিকেরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।

ফুলগাজীর আমলি আদালতের বিচারক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুজ জোহরার আদালতে মামলা দায়েরের পর আদালত আমলে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের ফেনী জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক তারেক চৌধুরী, দৈনিক ফেনী পত্রিকার সম্পাদক আরিফুল আমিন, দৈনিক ফেনীর প্রতিবেদক মামুনুর রহমান, ঢাকা পোস্টের জামশেদ আলম ও ওমর ফারুক।

জানা যায়, ২২ এপ্রিল ‘সীমান্তে চোরাচালান সাম্রাজ্যে ইউপি সদস্য, বললেন ব্যবসা করি’ শিরোনামে ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নে মাদকের কারবার, চোরাচালান ও মানব পাচার চক্র নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ফেনী ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট। এই প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পরই মামলা করেন রহিম উল্লাহ।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৪ এপ্রিল দৈনিক ফেনীর সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রহিম উল্লাহর সঙ্গে কিছু কথা বলার জন্য সময় চান তারেক চৌধুরী। ১৮ এপ্রিল চারজন সাংবাদিক দৈনিক ফেনী ও ঢাকা পোস্টের লোগো সংবলিত মাইক্রোফোন নিয়ে বাদীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন ও প্রশ্ন করতে থাকেন। তাঁরা তারেক চৌধুরীর হয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে রহিম উল্লাহর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

তবে চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন দৈনিক ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি তারেক চৌধুরী। তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুঠোফোনে রহিম উল্লাহর বক্তব্য নিয়েছি। এতে সবকিছুর দায় স্বীকার করে এসব কর্মকাণ্ড তাঁর পেশা বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রতিবেদনে সেটিই লেখা হয়েছে। তিনি যদি অভিযোগ অস্বীকার করতেন, তখন সেটিই লেখা হতো। ১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের সম্পূর্ণ কলরেকর্ড সংরক্ষিত আছে। পাশাপাশি দৈনিক ফেনীর ফেসবুক পেজেও এটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে কোথাও চাঁদা দাবি কিংবা সংবাদের বিষয়ের বাইরে কোনো কথা হয়নি। তিনি এজাহারে যা উল্লেখ করেছেন তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও কাল্পনিক।

এদিকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকেরা। এ সময় মামলার বাদী ইউপি সদস্য ও বিএনপিকর্মী রহিম উল্লাহর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।

আজ দুপুরে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন সাংবাদিক এ কে এম আবদুর রহিম, মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া, আবু তাহের, দিলদার হোসেন, মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে ‍শিবচর থানায় মামলাটি করেন।

এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।

মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না সাত কলেজের শিক্ষকেরা
  • দুর্গাপূজায় অরাজকতা রোধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান মহিলা পরিষদের
  • বন কর্মকর্তার ১৭ বিয়ে: আদালতে মামলা, তদন্তে পিবিআই
  • শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তনের দাবিতে ৫টি পরিবেশবাদী সংগঠনের মানববন্ধন
  • ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর মাকে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন