ভারতের সঙ্গে সিমলা চুক্তি বাতিল পাকিস্তানের, উত্তেজনা চরমে
Published: 24th, April 2025 GMT
কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের জেরে দেশটির সঙ্গে ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তি বাতিল করেছে পাকিস্তান।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
দুই দেশের পরস্পরের সার্বভৌম ভূখণ্ডের প্রতি সম্মান করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সিমলা চুক্তিতে। তা ছাড়া বিরোধ নিষ্পত্তিতে যুদ্ধ এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি রয়েছে তাতে।
আরো পড়ুন:
বাণিজ্য-ভিসা-আকাশসীমা বন্ধসহ ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের একগুচ্ছ পদক্ষেপ
পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা: পাকিস্তানিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ
পৃথিবীর ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীর অঞ্চলটি ভারত ও পাকিস্তান যার যার দখল অনুযায়ী সিমলা চুক্তির আলোকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। ওই চুক্তি অনুযায়ী, কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি বজায় রেখেছে তারা।
এখন পাকিস্তান সিমলা চুক্তি বাতিল করায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতির আশঙ্কা আরো জোরালো হলো। এতে করে বেড়েছে সামরিক উত্তেজনাও।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের কাছে পারমাণবিক বোমা রয়েছে। যদিও তারা কখনো এর প্রয়োগ করেনি। চিরবেরী দেশ দুটি কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় মাঝেমাধ্যে সংঘাতে জড়ালেও সাম্প্রতিক ইতিহাসে কারগিল যুদ্ধ ছাড়া তাদের মধ্যে বড় কোনো যুদ্ধ হয়নি।
সিমলা চুক্তির প্রধান প্রধান বিষয়
১। অপরের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি: দুই দেশ তাদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি দেয়।
২। শান্তিপূর্ণ ন্যায়বিচার: চুক্তিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বা আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হবে; সশস্ত্র সংঘাতের মাধ্যমে নয়।
৩। নিয়ন্ত্রণের রেখা: এটি জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা চিহ্নিত করার জন্য একটি কাঠামো সৃষ্টি করে এবং সেই রেখা বরাবর একটি যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
৪। সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ: চুক্তিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে।
সিমলা চুক্তি ভবিষ্যতের আলোচনার জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে মনে করা হয়, যদিও বিভিন্ন সংঘাত ও কূটনৈতিক চাপে এর কার্যকারিতা চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল, যা বৃহস্পতিবার প্রমাণ হলো।
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে; পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের দায় দেখছে ভারত। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ তাদের সমর্থনকারীদের বিনাশ করার হুংকার দিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আরো কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পানি আটকে দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টাকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে মন্তব্য করেছে তার মন্ত্রিসভা।
ফলে ভারত ও পাকিস্তান কার্যত যুদ্ধ পরিস্থিতির মুখে রয়েছে।
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।