বৈচিত্র্যময় প্রতিভার মরিস ল্যাংলো ওয়েস্ট
Published: 24th, April 2025 GMT
অস্ট্রেলিয়ান লেখকদের সর্বাধিক পরিচিত রচনাগুলোর অন্যতম ঔপন্যাসিক মরিস ল্যাংলো ওয়েস্টের ‘দ্য ডেভিলস অ্যাডভোকেট’ এবং ‘দ্য শুজ অব দ্য ফিশারম্যান’। বঞ্চিত বস্তির শিশুদের নিয়ে নন-ফিকশন গল্পের ‘চিলড্রেন অব দ্য শ্যাডোস’ তাঁর অনন্য সৃষ্টি। ওয়েস্টের বইগুলোকে ‘ধর্মীয় থ্রিলার’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ধর্ম এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করেন তিনি। আজ এই প্রতিভাধর লেখকের জন্মদিন। ১৯১৬ সালের ২৬ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের সেন্ট কিল্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর সিডনিতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মরিস ওয়েস্ট তাঁর দীর্ঘ লেখালেখির জীবনে অনেক পুরস্কার, প্রশংসা ও মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। ৩০টি বই এবং অনেক নাটক লিখেছেন। তাঁর বেশ কয়েকটি উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তাঁর বইগুলো ২৮টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল এবং বিশ্বব্যাপী ৬০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল। একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক হওয়ার পর পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়। তাঁর প্রতিটি নতুন বই দশ লাখেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।
লেখক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরুর আগে তিনি বৈচিত্র্যময় পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। চৌদ্দ বছর বয়সে শৈশব জীবন অতিবাহিত করতে আশ্রয়স্থল হিসেবে ক্রিশ্চিয়ান ব্রাদার্স সেমিনারিতে প্রবেশ করতে হয়েছিল তাঁকে। বেশ কয়েক বছর ছিলেন সেখানে। চূড়ান্ত শপথ নেওয়ার আগেই ক্রিশ্চিয়ান ব্রাদার্স ত্যাগ করে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং পরে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি একজন কোড-ব্রেকার হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিছু সময়ের জন্য তিনি অস্ট্রেলিয়ার সপ্তম প্রধানমন্ত্রী বিলি হিউজের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেন। পরে সেনাবাহিনীতে যুক্ততার মধ্য দিয়ে তিনি নতুন অধ্যায়ের পরিকল্পনা করেন। সেনাবাহিনী থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি মেলবোর্নে দ্য হেরাল্ডের রেডিও নেটওয়ার্কে কাজ শুরু করেন। পরে অস্ট্রেলাসিয়ান রেডিও প্রোডাকশনে যুক্ত হন। স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করেন কিন্তু বছর দশেকের মধ্যে তিনি ভেঙে পড়েন এবং ব্যবসার তাঁর অংশ বিক্রি করে দিয়ে লেখক হিসেবে সিডনিতে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে একজন লেখক হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার গড়ার জন্য অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করে ইতালির সোরেন্টোতে গমন করেন। পরিবারের সঙ্গে তিনি অস্ট্রিয়া, ইতালি, ইংল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বসবাস করেন। এ যাত্রা পথে তিনি ব্রিটিশ সংবাদপত্র ডেইলি মেইলের ভ্যাটিকান সংবাদদাতা হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসেন।
এ সময়ের মধ্য তিনি চিলড্রেন অব দ্য সান, দ্য ডেভিলস অ্যাডভোকেট, ডটার অব সাইলেন্স, দ্য জুস অব দ্য ফিশারম্যান, দ্য অ্যামবাসাডর, দ্য টাওয়ার অব ব্যাবেল, সামার অব দ্য রেড উলফ, দ্য নেভিগেটর, প্রোটিয়াস এবং দ্য ক্লাউনস অব গড-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস রচনা করেন।
১৯৯৬ সালে ‘আ ভিউ ফ্রম দ্য রিজ: দ্য টেস্টিমনি অব আ টোয়েন্টিথ-সেঞ্চুরি ক্রিশ্চিয়ান’ আত্মজীবনীর প্রকাশের মাধ্যমে ওয়েস্ট জীবনের নানা বাঁকের অনেক অজানা বিষয়ের অবতারণা করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অব দ য
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ