কাশ্মীরে নিরাপত্তাব্যবস্থায় যথেষ্ট গাফিলতি ছিল, মানল ভারত সরকার
Published: 25th, April 2025 GMT
কাশ্মীরে নিরাপত্তাব্যবস্থায় যথেষ্ট গাফিলতি ছিল বলে মেনে নিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে এই স্বীকারোক্তির পাশাপাশি সরকারের পক্ষে বিভিন্ন দলের নেতাদের বলা হয়, এমন গাফিলতি ভবিষ্যতে যাতে না হয়, সে জন্য সতর্ক থাকা হবে।
ওই বৈঠকে সরকারের পক্ষে থেকে এ কথাও বলা হয়, এই হামলার মদদদাতা পাকিস্তানকে কড়া জবাব দেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হলেও বৈঠকের চরিত্র নিয়ে বিরোধী নেতাদের নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারকে হতে হয়। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অন্য বিরোধী নেতারাও তাঁকে সমর্থন করেন। এই সংকটকালে প্রধানমন্ত্রী কেন বিহারের জনসভা বাতিল করলেন না, এ বিষয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন।
নামে সর্বদলীয় বৈঠক হলেও জম্মু–কাশ্মীরের শাসক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স, বিরোধী দল পিডিপি, বাম দল আরএসপি ও সিপিআইএমএলের মতো দলকে কেন ডাকা হলো না, তা জানতে চাওয়া হয়। বিরোধীরা এমন কথাও বলেন, এটা আদৌ সর্বদলীয় বৈঠক নয়। এটা বড়জোর সংসদীয় দলের বৈঠক বলা যেতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে বৈঠকে যোগ দেওয়া সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব দেন, সব দলের নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উচিত প্রকৃত অর্থে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা।
এই সংকটকালে সব দল সরকারের পাশে থাকার কথা বললেও বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা ও গাফিলতির বিষয়টি বড় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন নেতা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এত বড় একটা ঘটনা ঘটতে চলেছে, অথচ গোয়েন্দারা তা টের পর্যন্ত পেলেন না! ঘটনাস্থলে একজন নিরাপত্তারক্ষীও কেন ছিলেন না, সেই প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। এর পেছনে ছিল এক গভীর চক্রান্ত। অথচ কেউ তা টের পেল না কেন? এই ব্যর্থতার দায় পুরোপুরি সরকারের।
সরকারের পক্ষে গাফিলতি ও ব্যর্থতা মেনে নেওয়া হয়। তবে বলা হয়, প্রশাসনকে না জানিয়ে স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা ওই রুট খুলে দিয়েছিল। সন্ত্রাসীরা সেই সুযোগ নিয়েছে। সরকার জানায়, প্রতিবছর জুন মাসে অমরনাথযাত্রার আগে পহেলগামের রুট পর্যটকদের জন্য খোলা হয়। কিন্তু এবার স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা ২০ এপ্রিল থেকেই সরকারের অজান্তে তা খুলে দেয়। ফলে প্রশাসন নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের সুযোগ পায়নি।
বিরোধীরা জানতে চান, সন্ত্রাসবাদমুক্ত দাবি করা সত্ত্বেও কী করে সন্ত্রাসীরা অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে দাপাদাপি করে, তা বোধগম্য নয়। এর অর্থ একটাই, জম্মু–কাশ্মীর এখনো সন্ত্রাসমুক্ত নয়। সরকারের দাবি অসাড়। ভুয়া।
ওই বৈঠকে বিরোধী নেতারা শাসক দল বিজেপির হিন্দু–মুসলমান তত্ত্বেরও কড়া সমালোচনা করেন। বিভিন্ন নেতা বলেন, হিন্দুত্ববাদীরা এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে ও দেখাতে চাইছে। সাম্প্রদায়িকভাবে দেখানো হচ্ছে। সেই প্রচার করা হচ্ছে। বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ খোলাখুলিভাবে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করে চলেছেন। এই অপচেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার বলে বিরোধী নেতারা মন্তব্য করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র প
এছাড়াও পড়ুন:
কমলার বইয়ে ‘পর্দার অন্তরালের গল্প’
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখেছেন সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। স্মৃতিচারণামূলক বইটির তিনি নাম দিয়েছেন ‘হান্ড্রেড অ্যান্ড সেভেন ডেজ’ বা ‘১০৭ দিন’। বইটিতে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ‘পর্দার অন্তরালের গল্প খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছেন’ কমলা।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার কমলা হ্যারিস নিজেই নতুন বইয়ের কথা জানান। বইটির প্রকাশক বিশ্বখ্যাত মার্কিন প্রকাশনা সংস্থা সাইমন অ্যান্ড শুস্টার। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বইটি বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস।
বইটি হাতে নিয়ে করা একটি ভিডিও বার্তা নিজের ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন কমলা হ্যারিস। সেখানে বলেন, ‘মাত্র এক বছরের কিছুটা বেশি সময় আগে আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য নিজের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলাম। ১০৭ দিন আমি পুরো দেশ ভ্রমণ করি। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত নির্বাচনী প্রচার ছিল এটি।’
কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ও একমাত্র নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট। ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরে যান তিনি। এরপর জনপরিসরে কার্যত তাঁকে তেমন একটা দেখা যায়নি। এর মধ্যে কমলা এই বইয়ের ঘোষণা দিলেন।
অনেকটা নাটকীয়ভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছিলেন কমলা হ্যারিস। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আবারও ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৮২ বছর বয়সী বাইডেনের শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়। অনেক ডেমোক্র্যাট নেতা এর সমালোচনা শুরু করেন। এর মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলে প্রার্থী হন কমলা।
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত সাবেক মার্কিন সিনেটর কমলা ভিডিও বার্তায় জানান, নির্বাচন নিয়ে বইটিতে ‘খোলামেলাভাবে’ লিখেছেন তিনি। আরও বলেছেন, বইটি পড়লে বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের ‘পর্দার অন্তরালের অনেক বিষয়’ সম্পর্কে জানতে পারবেন পাঠকেরা।
কমলা হ্যারিস তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রচার নিয়ে বিশ্ব যা দেখেছে, সেটা ছিল কেবল গল্পের একটি অংশ মাত্র। এই বই আমাদের সেই নির্বাচনী লড়াই ফিরে দেখা নিয়ে নয়। আমার সেই সময়ের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার খোলামেলা বিবরণ তুলে ধরেছি এখানে। আমি বিশ্বাস করি, আমি সেই সময় যা দেখেছি, যা শিখেছি ও সামনে এগিয়ে যেতে যা প্রয়োজন সেসব অন্য সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার একটা মূল্য রয়েছে। এই বইটি লেখার সময় আমার মনে একটি সত্য বারবার ফিরে এসেছে। আর সেই সত্যটা হলো—কখনো কখনো লড়াইয়ের জন্য সময় প্রয়োজন।’
বইয়ের আগে আরও একটি ঘোষণা দেন কমলা। গত বুধবার তিনি জানান, আগামী বছর ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০২৮–এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের আবার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ‘উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না’।