চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলায় শিরোপা ধরে রেখেছেন মো. শরীফ। গতকাল শুক্রবার খেলার ১১৬তম আসরে অংশ নিয়ে এবারও একই জেলার বলী মো. রাশেদকে হারিয়ে বাজিমাত করেছেন তিনি। ৩০ মিনিটের বেশি সময়ের লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দেননি। তবে কৌশলগত ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় শরীফকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার বাসিন্দা শরীফ স্থানীয়দের কাছে ‘বাঘা’ শরীফ নামে পরিচিত। গত বছর জব্বারের বলীখেলায় প্রথমবার অংশ নিয়েই তিনি বাজিমাত করেন। সেবারও রানারআপ হন রাশেদ।
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে বেলুন উড়িয়ে এ খেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ। এরপর একে একে লড়াইয়ে নামেন ১২০ বলী। তাদের বেশির ভাগই তরুণ ও যুবক। বেশ কয়েকজন ছিলেন বয়স্ক। খেলার শুরু থেকে লালদীঘির মাঠ এবং আশপাশ কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে দর্শকরা বলীখেলা উপভোগ করেন। চারদিকে বাজতে থাকে ঢোল, বাঁশিসহ নানা বাদ্যযন্ত্র। ঢোলের তালে তাল মিলিয়ে কিছুক্ষণ পর পর বলীরা উঠতে থাকেন লড়াইয়ের মঞ্চে। দর্শকরা খেলা উপভোগ করেন ও অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেন।
খেলার প্রথম রাউন্ডে ৮০ জন অংশ নেন। পরে প্রথম রাউন্ডের চারজন এবং আগের বছরের শীর্ষ চারজন নিয়ে হয় ‘চ্যালেঞ্জ রাউন্ড’। এ রাউন্ডে চট্টগ্রামের তরুণ বলী কাঞ্চনকে হারিয়ে জয়ী হন কুমিল্লার কামাল। নিজ জেলার দিপুকে হারিয়ে শরীফ, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের রাসেলকে হারিয়ে কুমিল্লার শাহজালাল এবং রাঙামাটির রুবেলকে হারিয়ে রাশেদ সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেন। সেমিফাইনালে কামাল ও আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী শাহজালালকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেন শরীফ।
গতবারের মতো এবারও চূড়ান্ত লড়াইয়ে নামেন একই জেলার শরীফ ও রাশেদ। তাদের মধ্যে চলে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই। ততক্ষণেও নিশ্চিত নয়, এবার কার মাথায় উঠবে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। আবারও ‘বাঘা’ শরীফ? নাকি প্রথমবারের মতো রাশেদ বলী? ৩০ মিনিটের বেশি সময় খেলা চলার পর প্রধান রেফারি হাফিজুর রহমান ‘টেকনিক্যাল আউট’ ঘোষণা করেন রাশেদকে। এর মধ্য দিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ছিনিয়ে নেন শরীফ।
প্রধান অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা.
একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ের কাজে চট্টগ্রামে এসে বলীখেলা দেখতে লালদীঘি ময়দানে ছুটে যান অভিনেতা মোশাররফ করিম। সেখানে তিনি বলেন, ‘বলীখেলা দেশের ঐতিহ্যের স্মারক। আমি মনে প্রাণে চাই এ খেলা প্রতিবছর হোক।’
জব্বারের বলীখেলা এক বিশেষ ধরনের কুস্তি প্রতিযোগিতা, যা চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে প্রতিবছর ১২ বৈশাখে আয়োজন করা হয়। এই খেলায় অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় ‘বলী’। ১৯০৯ সালে বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে বলীখেলার প্রচলন করেছিলেন। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলাটি বসে লালদীঘি ময়দানের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। খেলার আগে ও পরের দিন মিলিয়ে মোট তিন দিন হয় বৈশাখী মেলা। সেই হিসাবে বৃহস্পতিবার ঐতিহ্যবাহী এই মেলা বসে। মেলায় মাটির তৈরি তৈজসপত্র, খেলনা, ফুলদানি, পুতুল, বেত-কাঠ ও বাঁশের তৈরি আসবাব, হাতপাখা, মাছ ধরার পলো, বেতের তৈরি ডালা, কুলো, ফলদ ও বনজ গাছের চারা, ফুল গাছের চারা, মুড়ি মুড়কি, পাটি, মাদুর, চুড়ি, প্রসাধনী সামগ্রী, দা-বঁটি, ছুরিসহ প্রায় সব পণ্যই পাওয়া যায়। মেলা ঘিরে শিশুদের আনন্দের কমতি থাকে না। আজ শনিবার মেলার শেষ দিন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া
ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক সব সময়ই দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল অনুযায়ী এগিয়েছে।
অতীতেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে লম্বা বিরতি দেখা গেছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৮—টানা ২৪ বছর পাকিস্তান সফরে যায়নি ভারত। আবার ১৯৬০ সালের পর পাকিস্তানও প্রথমবারের মতো ভারতে খেলতে যায় ১৯৭৯ সালে।
এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান নিয়মিত মুখোমুখি হয়েছে। এই সময়ে ভারত তিনবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে খেলে ১২ টেস্ট, পাকিস্তানও ভারতে গিয়ে খেলে ৮ টেস্ট।
দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান তিন টেস্ট খেলতে ভারতে যায়। এর মধ্যে একটি ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রথম এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ভারত ফিরতি টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যায় ২০০৪ সালে, যা ছিল ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেকের পর প্রথমবার।
২০০৪ সালের পাকিস্তান সফরে কড়া নিরাপত্তায় ব্যাটিংয়ে নামেন শচীন টেন্ডুলকার