বেচারা, কথা বলতে বলতে ক্যামেরার সামনেই কেঁদে ফেললেন। ‘আমার সন্তান যখন স্কুলে যায় আর তার সহপাঠীরা বলে, তার বাবা একজন চোর, তাতে তার কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে আসাটা কষ্টদায়ক। আমি ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে তার বাবা একজন সৎমানুষ, তিনি যে কোনো খেলোয়াড়ের মতোই ভুল করতে পারেন।’
রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচিয়ার এই মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গী ছিলেন তাঁর পাশে বসা ভিএআরের দায়িত্বে থাকা পাবলো গঞ্জালেসও। কোপা দেল রের ফাইনালে থাকা এ দু’জনকে নিয়েই রিয়াল মাদ্রিদের জোর আপত্তি। তাদের দু’জনের দিকেই বার্সেলোনার প্রতি আনুগত্যের অভিযোগ এনেছিল এমবাপ্পেদের ক্লাব। এবং ক্লাবটির নিজস্ব টিভি চ্যানেল ‘আরএমটিভি’-তে রীতিমতো দুই ম্যাচ অফিসিয়ালের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। পাঁচ বছর ধরে ফিফার নথিভুক্ত হলেও বুর্গোসের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই।
সেই তাঁকে কেন কোপা দেল রের ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে? রেফারিকে নিয়ে এসব কাণ্ডে সায় দেওয়ার মতো কাউকে পাশে পাচ্ছে না রিয়াল মাদ্রিদ। রয়েল স্প্যানিশ ফুটবল সংস্থা এই ব্যাপারে চুপ, লা লিগা অনড়, নীরব বার্সেলোনা। বরং অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছে– ‘যথেষ্ট হয়েছে।’ রেফারিদের কান্নার দৃশ্য ভাইরাল হওয়ার পর এক্স হ্যান্ডেলে ‘স্টপ রেফারি হ্যারাসমেন্ট নাও’ হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড চলছে এখন স্পেনে।
রেফারিকে পাল্টানোর দাবিতে রিয়াল এতটাই প্রতিবাদী ছিল যে ফাইনালের আগে কোনো অফিসিয়াল ফটোসেশন, সংবাদ সম্মেলন, ট্রেনিং– কিছুই করেনি। সৌজন্যতা ও বহু বছরের রীতি ভেঙে তারা ম্যাচের আগের রাতে অফিসিয়াল ডিনারেও আসেনি। আর রিয়ালের এই পুরো ব্যাপারটিকে ‘নাটক’ মনে করছে বার্সা।
‘ডেইলি স্পোর্ট’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বার্সার অন্দরমহলে এই ব্যাপারটি নিয়ে কাউকে মিডিয়ার সামনে কিছু না বলার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে। তারা মনে করছে, ফাইনালের আগে রেফারিকে মানসিক চাপে রাখতেই এসব নাটক করা হচ্ছে। তারা ম্যাচটিকে কলঙ্কিত করতেই রেফারিকে নিয়ে এসব গল্প তৈরি করেছে। রিয়াল মাদ্রিদ নাকি ফুটবলের চেয়ে মাঠের বাইরের এসব আলোচনা বেশি করে সামনে এনেছে নিজেদের সম্ভাব্য পরাজয়ের অজুহাত খুঁজতে!
বার্সেলোনা এফসির সভাপতি জোয়ান লোপার্তো তাদের অফিসিয়াল ভিডিও বার্তায় এটুকু বলেছেন, ‘রেফারিদের সম্মান দেখাতে হবে এবং ম্যাচে যে কোনো পরিস্থিতি মেনে নিতে হবে।’ কিন্তু নির্দিষ্ট এই রেফারিকে নিয়ে কেন এত আপত্তি রিয়াল মাদ্রিদের? এক পরিসংখ্যানে তারা দেখিয়েছে, এই রেফারি যে ম্যাচগুলো পরিচালনা করেছেন, তাতে রিয়ালের জয়ের ৬৪ শতাংশ, সেখানে বার্সেলোনার ৮১ শতাংশ। কিছু ভিডিও ফুটেজ প্রচার করে তারা দেখিয়ে দিয়েছে, ম্যাচে কী সব ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন তিনি।
রেফারিং নিয়ে রিয়ালের অসন্তুষ্টি নতুন কিছু নয়। গেল ফেব্রুয়ারিতেই লা লিগায় এস্পানিওলের ডিফেন্ডার কার্লোস রোমরোকে লাল কার্ড না দেখানো আর ভিনিসিয়ুসের গোল বাতিল নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল রিয়াল। রিয়াল মাদ্রিদের টিভিতে একটি রিপোর্ট প্রচার করা হয়, যেখানে তারা দাবি করে, এসব করা হচ্ছে রেফারিদের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান লুইস মোদিনার ইশারায়। তাঁকে পদ থেকে সরানোরও চেষ্টা করছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবের সভাপতি ফ্লোরিন্তিনো পেরেজ। কোনো ম্যাচে রেফারিং নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকলেই লা লিগা ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দেন তিনি।
তবে স্প্যানিশ মিডিয়ায় এর আগে এমনও খবর এসেছে যে, প্রতি মৌসুমেই রেফারিং প্রভাবিত করার চেষ্টা করে রিয়াল মাদ্রিদ। যা নিয়ে বিরক্ত লা লিগা সভাপতি ও রয়েল স্প্যানিশ ফুটবল সংস্থার সহসভাপতি হাভিয়ের তেভাস, ‘এটি ফুটবল নয়, ক্ষমতা দেখানোর খেলা। তিনি (ফ্লোরিন্তিনো পেরেজ) তেভাসকে পছন্দ করেন না। কারণ তিনি যা চান, তেভাস সেটি করেন না। তিনি উয়েফা সভাপতিকেও পছন্দ করেন না। কারণ তিনি যা চান, তা সেফেরিনও করেন না। তিনি সংবাদ সম্মেলন বাতিল করেছেন, তিনি ফাইনালের সব আনুষ্ঠানিকতা বর্জন করেছেন। তিনি প্রতিবাদ করেন না, চাপ দেন। তিনি অভিযোগ করেন না, হুমকি দেন।’
রিয়াল সভাপতির নাম না করেই এক্স হ্যান্ডেলে এভাবে তীব্র ভাষায় রিয়াল মাদ্রিদকে আক্রমণ করেন তেভাস। বিরক্ত রিয়ালের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদও। এক্স হ্যান্ডেলে একটি বিবৃতি দিয়েছে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ, ‘এটি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। স্প্যানিশ ফুটবলের ইমেজকে যথেষ্ট কলুষিত করা হচ্ছে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এল ক ল স ক ফ ইন ল র অফ স য় ল কর ন ন ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় করোনায় আক্রান্ত ৪
কুমিল্লায় চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মো. বশির আহমেদ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মো. বশির আহমেদ বলেন, “গত দুইদিনে তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আজ শনিবার আরো একজনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।”
তিনি বলেন, “আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কুমিল্লা নগরের, কেউ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। সবার নমুনা কুমিল্লা নগরের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করা হয়েছিল।”
আরো পড়ুন:
চট্টগ্রামে আরো ১ জনের করোনা শনাক্ত
কিট সংকটে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা বন্ধ
ডা. বশির আহমেদ বলেন, “আক্রান্তদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। দুইজন ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। একজনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন কুমিল্লায় নতুন করে সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। ফলে অনেকটাই স্বস্তিতে ছিলেন নগরবাসী। হঠাৎ একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হওয়ায় জনমনে আবারো আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, আক্রান্তের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই মাস্ক পরছেন এবং সাবধানতা অবলম্বনের চেষ্টা করছেন। তবে, গণপরিবহন, বাজার কিংবা ওষুধের দোকানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন প্রবণতা দেখা যায়নি।
কুমিল্লা শহরের বাসিন্দা আমেনা আক্তার বলেন, “আবার যেন সেই দিনগুলো ফিরে আসছে। দোকান-বাজারে মাস্ক ছাড়া মানুষ চলাফেরা করছে। আমরা তো আরেক দফা লকডাউনের ভয়ে আছি।”
সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানোর পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে প্রচার অভিযান চালানো হবে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডাক্তার সানজিদুর রহমান বলেন , “করোনা পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। হঠাৎ সংক্রমণ বৃদ্ধির ঘটনা অবহেলার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে অবস্থা জটিল হতে পারে।”
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পঙ্কুশ বড়ুয়া বলেন, “করোনার বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে প্রয়োজনে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হবে। সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।”
ঢাকা/রুবেল/মাসুদ